বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যয়নে ধ্বনিতত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এর মাধ্যমে আমরা ভাষার ক্ষুদ্রতম ধ্বনিগত একক, তাদের প্রকারভেদ ও ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাই। আজকের আলোচনায় থাকবে ধ্বনিমূল (Phoneme) ও ধ্বনির শ্রেণিবিভাগ।
Table of Contents
ধ্বনিমূল ও ধ্বনির শ্রেণিবিভাগ
ধ্বনিমূল (Phoneme) কী?
ভাষার শব্দগঠনে ব্যবহৃত ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য ধ্বনিগত একককে ধ্বনিমূল বলা হয়।
এগুলি অর্থের ভেদ সৃষ্টি করতে সক্ষম।
উদাহরণ: কল (পানির কল) ও বল (খেলার বল) শব্দে ক ও ব আলাদা ধ্বনিমূল, কারণ তাদের কারণে শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়।
অতএব, ধ্বনিমূল হলো সেই মৌলিক ধ্বনি, যা শব্দের অর্থ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
বাংলা ভাষার ধ্বনিমূল
বাংলা ভাষায় ধ্বনিমূলকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়:
স্বরধ্বনি
ব্যঞ্জনধ্বনি
১. স্বরধ্বনি
মুখগহ্বর দিয়ে বাতাস অবাধে প্রবাহিত হয়ে যে ধ্বনি তৈরি হয়, তাকে স্বরধ্বনি বলে।
বাংলা ভাষায় ১১টি স্বরধ্বনি রয়েছে: অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
লিখিত রূপ: স্বরবর্ণ।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি
মুখগহ্বর বা জিহ্বার কোনো না কোনো অঙ্গের বাধা অতিক্রম করে বাতাস বেরিয়ে যে ধ্বনি তৈরি হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
বাংলা ভাষায় প্রায় ৩৯টি ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে।
লিখিত রূপ: ব্যঞ্জনবর্ণ।
বাংলা বর্ণমালা
স্বরবর্ণ + ব্যঞ্জনবর্ণ = বাংলা বর্ণমালা।
প্রতিটি স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের উপরে যদি সোজা দাগ (মাত্রা) থাকে, সেটিকে বলা হয় বর্ণের মাত্রা।
উদাহরণ:
‘এ’ ও ‘ও’ স্বরবর্ণ, কিন্তু মাত্রা যুক্ত হলে এরা যুক্তবর্ণে পরিণত হয়।
ত্র = ত + রফলা + এ-এর মাত্রা
ও যুক্ত হলে তা অন্য বর্ণরূপ নেয়
ধ্বনির শ্রেণিবিভাগ
বাংলা ভাষার ধ্বনিকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—
উচ্চারণস্থলভেদে:
ওষ্ঠ্য (ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত) – প, ব, ম
দন্ত্য (দাঁত দিয়ে উচ্চারিত) – ত, থ, দ, ধ, ন
মূর্ধন্য – ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
তালব্য – চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, য
কণ্ঠ্য – ক, খ, গ, ঘ, ঙ, হ
অর্ধ-স্বর – র, ল
সংকর – শ, ষ, স
উচ্চারণের প্রক্রিয়াভেদে:
স্পর্শধ্বনি (Plosives)
ঘর্ষধ্বনি (Fricatives)
অনুনাসিক ধ্বনি (Nasals)
পার্শ্বীয় ধ্বনি (Laterals)
অর্ধস্বর (Semivowels)
স্বরধ্বনির শ্রেণিবিভাগ:
হ্রস্ব (Short vowels) – অ, ই, উ
দীর্ঘ (Long vowels) – আ, ঈ, ঊ
যৌগিক (Diphthongs) – ঐ, ঔ

সারাংশ
ধ্বনিমূল হলো ক্ষুদ্রতম ধ্বনি একক, যা অর্থ পার্থক্য করে।
বাংলা ভাষায় দুটি প্রধান ধ্বনিমূল: স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
উচ্চারণস্থল ও উচ্চারণভঙ্গির ভিত্তিতে এদের আবার বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
ধ্বনিতত্ত্ব বোঝা ছাড়া বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও বর্ণচর্চা অসম্ভব।