ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। উপমাত্মক বাক্যের ভাব-সম্প্রসারণে উপমান ও উপমেয় অংশকে দুটো অনুচ্ছেদে বিশেষণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রথম অনুচ্ছেদে থাকবে আক্ষরিক অর্থ, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ব্যক্তনার্থ।ভাব-সম্প্রসারণ হবে মূলভাবের অনুসারী, অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার্য। প্রারম্ভিক বাক্যটি হবে সুসংহত, ঘনপিনদ্ধ ও শ্রুতিমধুর এবং ক্রিয়াপদ বিরহিত।

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে

আত্মসুখপরায়ণ, সুযোগসন্ধানী অকৃতজ্ঞরা উপকারীর কাছ থেকে প্রভূত উপকার পেয়ে তা স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে অন্যের ঋণ স্বীকার করলে বুঝি বা নিজেদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ হয়ে যাবে। তাইতারা উপকারীর ঋণ স্বীকারের চেয়ে তাদের নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে। এ ধরনের আচরণ হীনতার পরিচায়ক ও নিন্দনীয়।

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে

ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির জন্ম, ধ্বনি না থাকলে প্রতিধ্বনির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। কোনো নির্জন পাহাড়ের গুহায় বা বড় বাড়ির নির্জন বিশাল প্রকোষ্ঠে যদি কোনো ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সে-ধ্বনি সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়, প্রতিধ্বনিত হয় প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে। এ জন্য প্রতিধ্বনির সবসময় ধ্বনির কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা। কিন্তু প্রতিধ্বনি নিজের অস্তিত্বের উৎস ধ্বনিটির কথা স্বীকার করতে চায় না।

প্রতিধ্বনি অনুদার ও সংকীর্ণমনা। সে তার আসল পরিচয় গোপন করে উপকারীর উপকার অস্বীকার করে। প্রতিধ্বনি নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করার জন্যে ধ্বনিকে সর্বদা ব্যঙ্গ করে। তার এই পরিহাসের পেছনে আছে সত্য গোপন করার প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিধ্বনি যে ধ্বনির কাছে ঋণী এ-বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্যে ধ্বনিকে সে উপহাস করে।

 

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে

 

উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করার প্রবণতা আমাদের বাস্তবজীবনে প্রায়ই দেখা যায়। হীনমনারা উপকারীর উপকার তো স্বীকার করেই না, উপরন্তু তাকে বিদ্রুপ করে তার স্বাভাবিক মহত্ত্বকে করে উপহাস। উপকারীর উপকার- স্বীকৃতিতে যে অমূলক আত্মগ্লানি তার অন্তরে জেগে ওঠে, তার হাত থেকে তার নিষ্কৃতি-লাভের সহজতম উপায়ই হল উপকারী ব্যক্তিকে উপহাস করা, বিদ্রুপ করা এবং সম্ভব হলে তার ক্ষতি করা। বস্তুত কৃতঘ্ন এই ব্যক্তিরা তাদের প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে অপরের কাছে বাহাদুরি করতে চায়। অন্যের কাছে ঋণ স্বীকার করাকে তারা দুর্বলতা মনে করে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

যে উৎস থেকে সে উপকৃত হয়েছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে তার নিন্দাতে শতমুখ হয়ে ওঠে। এতে তার নিজের মানমর্যাদা বাড়বে বলে সে মনে করে। আসলে মন এমন অনুদার থাকলে কোনো না কোনোভাবে তার আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং সে যে নীচ তা সহজেই প্রমাণিত হয়।যে-উৎস থেকে নিজের অস্তিত্ব গড়ে উঠেছে তার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত— তা যতই ক্ষুদ্র হোক। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে কোনোভাবেই হীনম্মন্যতাকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয় ।

আরও দেখুন:

Leave a Comment