দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্ককরণ তৈরি করবেন। ভাব সম্প্রসারণ এর সময় সেই চরণের মূল গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় যুক্তি, বিশ্লেষণ এবং উপমা ব্যবহার করে সেইসাথে প্রয়োজন অনুসারে উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া।

দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে

মানুষের জীবনে সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ একত্র জড়িয়ে আছে। একটিকে ছাড়া অপরটিকে যথাযথ উপলব্ধি করা যায় না বলে উভয়েই উভয়ের পরিপূরক। তাই জীবনের প্রয়োজনে সত্য-মিথ্যা চিরন্তন। পৃথিবীতে যারা মিথ্যা ও ভুল-ভ্রান্তিকে বাদ দিয়ে কেবল সত্য লাভের পথ খোঁজে তারা কখনোই সত্যের নাগাল পায় না। বস্তুত জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সত্য এবং মিথ্যাকে, ভ্রান্তি এবং অভ্রান্তিকে চিনে নিতে হবে

 

দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে

 

সত্যই জীবন, সত্যই আলো—পৃথিবীতে মানুষ চায় মিথ্যার কুহকে পথভ্রান্ত না হতে, তার একান্ত কাম্য ও লক্ষ্য ‘সত্য’। কিন্তু সত্যকে সহজে পাওয়ার ও চেনার কোনো পথ নেই। কেননা সত্য এমন কোন বিশুদ্ধ ধারণা নয় যে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে জীবনের সকল গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সত্য হল একটি আপেক্ষিক ধারণা। – জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সত্য-মিথ্যাকে চিনে নেওয়া যায়। দিনকে যেমন রাতের সঙ্গে তুলনা করেই চেনা যায়, তাপকে যেমন শৈত্যের সঙ্গে তুলনা করে অনুভব করা যায়, সত্যকেও তেমনি মিথ্যার পাশাপাশি রেখেই উপলব্ধি করতে হয়।

 

দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে

 

ভুল বা মিথ্যা মানবজীবনের অনিবার্য একটি ঘটনা। তাকে স্বীকার করেই তাকে অতিক্রম করতে হয়, এড়িয়ে গিয়ে নয়। মানবজীবনের একেকটি ভুল মানুষকে এক বা একাধিক সত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পার্থিব জগতে সত্য ও মিথ্যার রয়েছে পাশাপাশি অবস্থান। সত্য-মিথ্যা পরস্পর এমন অবিচ্ছেদ্য যে, নিরবচ্ছিন্ন সত্য এবং মিথ্যাকে পৃথক পৃথকভাবে উদ্ঘাটন করা সম্ভবপর নয়। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দুর্গম পথে চলতে চলতে এ-সব ভুলভ্রান্তি ও মিথ্যাকে অপসারিত করেই মানুষকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। অজস্র ভুলভ্রান্তিকে অতিক্রম করলেই যথার্থ সত্যের সন্ধান মেলে। যেমন অন্ধকারের মধ্যেই আলোর উজ্জ্বলতা ধরা পড়ে, তেমনি ভ্রান্তির মোহাবরণকে ছিন্ন করেই সত্যের জ্যোতির্ময় রূপ ধরা পড়ে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

শিশু যেমন আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শেখে, মানুষও তেমনি ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে সত্যকে চিনে নেয়। জীবনের সকল দ্বার রুদ্ধ করে দিলে হয়ত ভ্রান্তিকে ঠেকানো যায়, কিন্তু সত্যকে পাওয়া যায় না। আকরিক ধাতু যেমন মাটির সঙ্গে মিশে থাকে, মাটি পরিষ্কার করে তাকে পেতে হয়, জীবনের পথেও তেমনি সত্য আর মিথ্যা মিশে আছে। জীবন-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এ-জন্যে কাঙ্ক্ষিত হিরণ্ময় সত্য উদ্ঘাটনে বাস্তবের কঠিন ও দুর্গম পথে প্রয়োজন নিঃশঙ্ক দীপ্ত পদচারণা। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি সত্যকে পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় নয়, বরং ভুলভ্রান্তি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেই মানুষ প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটন করে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment