Bangla Tongue Twisters, বাংলা দুরুচ্চার্য শব্দ, উচ্চারণ চ্যালেঞ্জ এর আজকের পর্ব – ১। জিভে জড়ানো শব্দের মজার খেলার মাধ্যমে “অল্প-মহাপ্রাণ” শব্দ নিয়ে আজ আমাদের আয়োজন। ইংরেজিতে বলি “Tongue Twisters”, বাংলায় “দুরুচ্চার্য শব্দ।” বাংলা ভাষার উচ্চারণ সৌন্দর্যের এক বিরল প্রকাশ ঘটেছে এই শব্দবন্ধ বা বাক্যগুলো-তে। দ্রুত উচ্চারণ করতে গেলে মুখে জড়িয়ে যায়, আবার নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত্ব করে ফেললে অন্যান্য উচ্চারণে জড়তা কেটে যায় অনেকখানি।
দুরুচ্চার্য শব্দ [Tongue Twister ]
আজকের আলোচনায় এসেছে :
১) অল্পপ্রাণ ধ্বনি — ক, চ, ট, ত, প
২) মহাপ্রাণ ধ্বনি — খ, ছ, ঠ, থ, ফ
অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি ভেদে কীভাবে উচ্চারণে পার্থক্য ঘটে এবং কোনটির উচ্চারণ কীভাবে শুদ্ধ হয়, এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা এবং দুরুচ্চার্য -শব্দগুলোর পরিচিতি। এই Tongue Twister নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন, অনুশীলনে সাথে থাকছেন পুষ্পিতা পুষ্প। আপনাদের সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ। বিশেষ ধন্যবাদ আরিয়া ও তিশা-কে, Tongue Twister Challenge এ অংশ নেওয়ায়।
উচ্চারণে জিহ্বা জড়ানো
এমন কিছু শব্দবন্ধ বা বাক্য থাকে যা উচ্চারণ করতে গেলে জিহ্বা জড়িয়ে যায়, পরপর দ্রুত ঠিকমত বলে ওঠা যায় না। যেমন আমরা বলে থাকি ক লিখতে কলম ভাঙ্গা, ঠিক তেমনি উচ্চারণ করতে দাঁত ভাঙ্গা। ইংরেজিতে একেই বলে টাং টুইস্টার (tongue twister), অভিধানের মতে বাংলায় বলতে হবে দুরুচ্চার্য বাক্য বা শব্দবন্ধ, উচ্চারণের কাঠিন্য এতে বেশ ফুটে ওঠে। দাঁত ভাঙ্গা শব্দও বলা যেতে পারে, যদিও বাংলায় শব্দ সন্নিবেশ (collocation)-এর নিয়মে দাঁত ভাঙ্গা জবাবই দস্তুর।
ইংরেজি ভাষায় এ রকম সবচেয়ে প্রচলিত দাঁতভাঙ্গা বাক্য বোধ করি Peter Piper picked a peck of pickled peppers. / A peck of pickled peppers Peter Piper picked। অনেক সময় বাড়তি দুই পঙ্ক্তি যোগ করা হয়: If Peter Piper picked a peck of pickled peppers, / Where’s the peck of pickled peppers Peter Piper picked? এর পরেই হয়ত She sells sea shells on the sea shore। এ ধরণের বাক্য বা শব্দবন্ধ তৈরি হয় ভাষায় ব্যবহৃত প্রায় একই ধরণের ধ্বনিমূলের পাশাপাশি ব্যবহার করে, তা সে ব্যঞ্জনেরই হোক, বা স্বরের।
ফরাসিতে un chasseur sachant chasser sait chasser sans son chien de chasse (যে শিকারী শিকার করতে পারে সে তার শিকারী কুকুর ছাড়াই শিকার করতে পারে)। জর্মনে Es grünt so grün, wenn Spaniens Blüten blühen (স্পেনে ফুল ফুটলে সবুজ অনেক সবুজ দেখায়, বার্নার্ড শ’র পিগম্যালিয়নের The rain in Spain stays mainly in the plain-এর অনুকরণে)।
হিন্দিতে বেশ জুতসই এমন একটি বাক্য হল: एक ऊंचा ऊंट है पूंछ ऊंची ऊँट की। पूंछ से भी ऊंची क्या पीठ ऊंची ऊंट की॥ (এক ঊঁচা ঊঁট হৈ পূঁছ ঊঁচী ঊঁট কী। পূঁছ সে ভী ঊঁচী ক্যা পীঠ ঊঁচী ঊঁট কী॥ সে এক লম্বা ঊট, উঁচু তার লেজ। লেজের চেয়ে উঁচু সে ঊটের পিঠ।) বাংলায়ও তেমন বেশ কিছু বাক্য রয়েছে: ‘পাখি পাকা পেঁপে খায়,’ ‘বাবলা গাছে বাঘ ঝোলে’ আর ‘জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা’ বেশ প্রচলিত।
অন্তত ছোটবেলায় প্রত্যেকেই একবার না বলেছে বা বলিয়েছে। আরও কয়েকটি আছে: ‘চাচা চাঁচা চটা চেঁচোনা, আচাঁচা চটা চাঁচো,’ ‘বার হাঁড়ি রাবড়ি বড় বাড়াবাড়ি,’ ‘গড়ের মাঠে গরুর গাড়ি গড়গড়িয়ে যায়,’ ‘কাচা গাব, পাকা গাব’ আর ‘কত না জনতা জানাল যাতনা যতনে।’
মুক ও বধিরদের ব্যবহৃত আঙ্গুলের সাঙ্কেতিক ভাষায়ও জিহ্বা জড়ানোর মত আঙ্গুল পেঁচিয়ে ফেলবার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সাঙ্কেতিক ভাষার দুরুচ্চার্য শব্দবন্ধকে বলা হয় ফিঙ্গার-ফাম্বলার (finger fumbler)।
কথা জড়িয়ে দেওয়া বাক্য:
আচ্ছা তোমরা কি খুব দ্রুত পাঁচবার “পাখি পাকা পেঁপে খায়” এ কথাটা বলতে পারবে? আচ্ছা তাহলে শুরু করা যাক এক. পাখি পাকা পেঁপে খায়, দুই পাখি পাপা পেঁপে খায়, তিন. পাখি কাকা কেকে খায়… … হল তো উচ্চারণ! দ্রুত বলতে গিয়ে দুইবারেই একদম পেঁচিয়ে পরে ধপাস!
বাক্য বা প্রবাদ দিয়ে বানানো এমন জড়িয়ে যাওয়া কথাগুলো কম বেশি সব ভাষাতেই আছে। ইংরেজিতে এই বাক্যগুলোকে বলে Tongue Twister. মানে যে বাক্য জিহ্বাকে পেঁচিয়ে ফেলে। ইংরেজি ভাষার একটা খুব জনপ্রিয় Tongue Twister হল, she sells sea-shells on the sea-shore। এটা ব্রিটিশ একজন গীতিকার নাম তার টেরি সুলিভান লিখেছিলেন মেরি অ্যানিং নামে একজন জীবাশ্ম সংগ্রহকারীকে নিয়ে। তবে এখান থেকে Tongue Twister আসেনি। Tongue Twister বহু আগে থেকেই সব ভাষার মানুষ নিজ নিজ মতো করে বলে আসছে।
বাংলা ভাষায়ও এমন বহু বাক্য আছে যেমন—
১। পাখি পাকা পেঁপে খায়।
২। বাবলা গাছে বাঘ ঝুলে।
৩। জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা।
৪। চাচা চাচা চটা চেঁচোনা।
৫। বার হাড়ি রাবড়ি বড় বাড়াবাড়ি।
৬। গড়ের মাঠে গরুর গাড়ি গড়গড়িয়ে যায়।
৭। কাচা গাব পাকা গাব।
৮। কত না জনতা জানালো যাতনা যতনে।
এমন আরও অনেক আছে।
এ ধরণের বাক্যগুলো আসলে শব্দ নিয়ে খেলা করতে বা বাচ্চাদের উচ্চারণ ঠিক করতে ব্যবহৃত হয়। তবে, বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন এ শব্দগুলো উচ্চারণ করতে গেলে আমরা কেন গুলিয়ে যাই।
আমরা যখন কথা বলি তখন আমাদের জিহ্বা, ঠোঁট, মুখের তালু, চোয়াল এগুলো ব্যবহৃত হয়। মস্তিষ্কের যে অংশ এই কথা বলার কাজটা নিয়ন্ত্রণ করে তার নাম হল, ভেনটরাল সেনসরিমোটর করটেক্স বা ventral sensorimotor cortex (vSMC)। একই রকমের বা কাছাকাছি উচ্চারণ জটিল বাক্য পরপর উচ্চারণ করতে গেলে একবার উচ্চারণের পরে সেটার রেস থেকে যায়, খুব দ্রুতই আবার কাছাকাছি কোনো ধ্বনি উচ্চারণ করতে গেলে মস্তিষ্কের ভেনটরাল সেনসরিমোটর করটেক্স তরঙ্গ প্রবাহে একটা বাধা আসে, ফলে আমাদের কথা জড়িয়ে যায়।
কথা জড়িয়ে যাক অথবা না যাক, উচ্চারণ অনুশীলন করতে বা নিছকই মজা করতে এভাবে বিভ্রান্তিকর শব্দ কিন্তু আমরা করতেই পারি। অনেক ভাষায় এ রকম শব্দ নতুন করে তৈরি করাও হয়। আমরাও চাইলে একটা দুটো বানিয়েই ফেলতে পারি।
আরও দেখুন: