দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকারের ভূমিকা | সরকার ও প্রশাসন | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : দারিদ্র্য আমাদের জীবনের একটি অভিশপ্ত বাস্তবতা। দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার দিকে তাকালে এখানকার দারিদ্র্যের প্রবলতা সম্পর্কে কারো কোনো সন্দেহ থাকে না। তাই এখন কথা উঠেছে দারিদ্র্য হ্রাস করা নিয়ে। অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দিচ্ছে, কৌশল বাতলাচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনের। আর এরই প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি সরকারই বিভিন্ন জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, বার্ষিক বাজেটসহ বিভিন্নভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকারের ভূমিকা | সরকার ও প্রশাসন | বাংলা রচনা সম্ভার
দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকারের ভূমিকা
বর্তমান বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারও দারিদ্র্য বিমোচনের ব্যাপারে জনগণের নিকট অঙ্গীকারাবদ্ধ । যে প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ক্ষমতার আসার পর থেকেই সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে নানাবিধ ব্যবস্থা ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকার দারিদ্য বিমোচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তিন বছর মেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। এই পরিকল্পনার ভিত্তিতে তিন বছরমেয়াদি যে বিনিয়োগ কর্মসূচি নেয়া হবে, সেটাই হবে দেশের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত্তি। তাছাড়া ২০০২-২০০৩ অর্থবছরের বাজেটেও মোট উন্নয়ন বাজেটের ৪৩% বরাদ্দ রেখেছিল দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। কিন্তু এর ফল কি দাঁড়িয়েছে সেটিই এখন দেখার বিষয় ।
দারিদ্র্যের ধারণা ও রূপ : ব্যাপক অর্থে দারিদ্র্যের আওতায় রয়েছে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মান বজায় রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদের ওপর মালিকানা, নিয়ন্ত্রণ বা সুযোগ ঘাটতির দরুন জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বঞ্চনা ঘটা। এই সংজ্ঞানুযায়ী দারিদ্র্য হচ্ছে একটি অবস্থা, যেখানে কোনো পরিবার বা কোনো ব্যক্তির সম্পদ আহরণ এবং বিতরণ প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ কিংবা সুযোগের ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে ন্যূনতম পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অশ্রয়, নিরাপত্তা, অবকাশ লাভের সামর্থ্য অথবা জীবনের অন্যান্য দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দারিদ্র্যের এই সংজ্ঞানুযায়ী দারিদ্র্য তাই সম্পদের সুযোগ লাভ থেকে বাদ পড়া বা বঞ্চিত অবস্থার ইঙ্গিতবাহী একটি বঞ্চনাময় সম্পর্ককেও উপস্থাপন করে। এই সম্পদের উৎসের মধ্যে রয়েছে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি টেকনিক্যাল সম্পদ এবং সামাজিক সংযোগ উভাই।
এই প্রেক্ষিতে তাই অনেকেই আজ বলছেন, দারিদ্র্য শারীরিক বঞ্চনার চাইতেও অনেক কিছু। দারিদ্র্য হচ্ছে সামাজিক ও মানসিক প্রভাব, যা মানুষকে তাদের সুপ্ত ক্ষমতা উপলব্ধিতে বাধা দেয় (IFAD ১৯৯২) । অতীতের সংকীর্ণ সংজ্ঞানুযায়ী দারিদ্রাকে পরিমাপ করা হতো জনগণের শতকরা কত ভাগ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ব্যয়েরও নিচে উপার্জন করে তা দিয়ে। এক্ষেত্রে প্রথাগতভাবে যে খাদ্যসামগ্রী গ্রহণ হয় তার ন্যূনতম পুষ্টিমান প্রথমে পরিমাপ করা হয় এবং তারপর আহারের প্রচলিত দর নির্ধারণ করা হয়।
এক্ষেত্রে যারা অনুমোদিত ক্যালরির ৯০ ভাগের বেশি গ্রহণ করতে পারে না তাদের সম্পূর্ণ দারিদ্র্য (absolute poor) এবং যারা প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৮০ ভাগের বেশি গ্রহণে অক্ষম তাদের চরম দারিদ্র্য (extreme poor) বলে অভিহিত করা হয় । অধিকাংশ দারিদ্র্য গবেষণা উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য নিরীখে পরিচালিত হয়েছে।
অথচ বর্তমানে প্রচলিত দারিদ্র্য রেখা (poverty line) টানা হচ্ছে মানুষের বাঁচার জন্য যথেষ্ট ক্যালরি পেতে কত আয় প্রয়োজন তার হিসাব করে এবং অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য এর ওপর একটা পার্সেন্টেজ যোগ করে। মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO)-এর সংজ্ঞার ভিত্তিতে এই দারিদ্র্যা রেখা টানা হয়েছে। কিন্তু র্যাডিকেল সমাজবিজ্ঞানীরা এভাবে দারিদ্র্য বিশ্লেষণে গরিবদের মানব সম্পদ রূপে গণ্য না করে এ রকম গৃহপালিত পশুর মতো গণ্য করার সমালোচনা করেছেন এবং এটাকে অনেকে যান্ত্রিক গবেষণা (mechanical study) বলে মনে করেছেন। কেননা এখানে ভুলে যাওয়া হচ্ছে যে, দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া, খাদ্য ছাড়াও আরো অসংখ্য কারণে দারিদ্র্য অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
আর এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটকে উপলব্ধি করে ইউএনডিপির জেমস গুগুভি দারিদ্র্যের স্বরূপ ও পরিধি বর্ণনা করে বলেছেন, ‘দারিদ্র্য হলো ক্ষুধা-তৃষ্ণায় জর্জরিত অবোধ শিশু, যে বুঝতে পারে না কেন খাদ্য ও পানির এত অভাব । দারিদ্র্য হলো কনকনে শীতে উত্তাপ বঞ্চিত বৃদ্ধা মহিলা, সারা জীবন কষ্টের ঘানি টেনে যার ভাগ্যে জুটেছে কেবল স্যাতসেতে ঠাণ্ডা একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই। দারিদ্র্য হলো সেই জেলে যার জীবন ও জল বিনা দোষের দূষণে হয়েছে পরিত্যক্ত। কিন্তু দারিদ্র্য হওয়া বলতে খাদ্য, আশ্রয় এবং জীবিকার অভাবের বাইরে কিছু একটা বোঝায় । দারিদ্র্যে অর্থ ক্রমাবনতি, ধনী-দরিদ্র সকল দেশের লাখো মানুষের উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়া।’
দারিদ্র্যের রূপ: সচরাচর জীবন ধারণের ন্যূনতম মানের নিরিখে দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়। প্রায় সকল দেশই পারিবারিক আয়ের ভিত্তিতে জাতীয়ভাবে দারিদ্র্যসীমা (poverty line) চিহ্নিত করেছে।
চরম দারিদ্র্য (Extreme Poverty) : বিশ্বব্যাংক ১৯৯০ সালে মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৭০ ডলারের মাপকাঠি ধরে বিশ্বব্যাপী এর পরিমাপ করেছে। এই মাপকাঠি অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১১০ কোটি লোক চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। আজকে এই চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ১৫০ কোটি এবং এর মধ্যে উন্নত দেশের দরিদ্ররাও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান রবার্ট ম্যাকনমারার মতে, ‘চরম দারিদ্র্য এমন এক অবস্থা যা অপুষ্টি, নিরক্ষরতা, রোগ-ব্যাধি, নোংরা পরিবেশ, শিশু মৃত্যুর উচ্চ হার, কম আয়ুষ্কালের নিগড়ে বন্দি, যে অবস্থা মানবিক উৎকর্ষের কোনো যুক্তিসঙ্গত পর্যায়েই পড়ে না |
আপেক্ষিক দারিদ্র্য (Relative Poor) : আপেক্ষিক দারিদ্র্য সমাজে জীবনযাত্রার ন্যূনতম মাপকাঠিতে পরিমাপ করা হয়। এতে শিশুমৃত্যু, আয়ুষ্কাল, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃপ্রণালীর (sanitation) সুযোগ, সাক্ষরতা ইত্যাদি বিষয় পরিমাপক হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও জীবনের সার্বিক মানকে প্রভাবিত করার মতো মানুষের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ও বাড়তি মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই সব সামাজিক প্রাপ্তির নিরীখে বিচার করলে দেখা যায় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ চরম দারিদ্র্য্য না হলেও আপেক্ষিক দারিদ্রের কাতারভূক্ত।
বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি : বিবিএস কর্তৃক প্রকাশিত ২০০০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ (HIES) প্রতিবেদন অনুযায়ী দৈনিক মাথাপিছু ২১২২ কিলোক্যালরি গ্রহণ পরিমাপে ২০০০ সালে জাতীয় পর্যায়ে ১৯৮৮-৮৯ সাল থেকে অনক্ষেপ দারিদ্র্যের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। একই ভাবে চরম দারিদ্র্যও ১৮০৫ কিলোক্যালরি গ্রহণ পরিমাপে ১৯৮৮-৮৯ সালে নির্ণীত ২৮.৩৬ শতাংশ থেকে ২০০০ সালে ১৯.৯৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে পল্লী এলাকায় চরম দারিদ্র্য ১৯৮৮-৮৯-এর ২৮.৬৪ শতাংশ থেকে ২০০০ সালে ১৮.৭২ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৮৮-৮৯ সালের নিরীখে শহর অঞ্চলে অনপেক্ষ দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হলেও চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে।
১৯৮৮-৮৯ সালে শহর অঞ্চলে অনপেক্ষ দারিদ্র্য ছিল ৪৭.৬৩ শতাংশ কিন্তু ২০০০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২.৫০ শতাংশ। অন্যদিকে চরম দারিদ্র্য যেখানে ছিল ১৯৮৮-৮৯ সালে ২৬.৩৮ শতাংশ ২০০০ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ২৫.০২ শতাংশ। তাছাড়া দারিদ্র্য্য রেখার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার পরিমাণ নির্ণয়ে মৌলিক চাহিদার ব্যয় পদ্ধতি (CBN)ব্যবহার করে দু ধরনের গণনা করা হয়। নিম্ন দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে দেখা যায়, দেশের দারিদ্র্যের পরিমাণ হলো ৩৩.৭ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চ দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করলে তা দাঁড়ায় ৪৯.৮ শতাংশ। এই পদ্ধতি অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে দারিদ্র্য কম। অথচ প্রত্যক্ষ ক্যালরি গ্রহণ পদ্ধতি অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চল বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ।
দারিদ্র্যের মাত্রাসমূহ: দারিদ্র্যের মাত্রাকে বৃহত্তর পরিসরে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা: ক. স্বাস্থ্য সুবিধা বঞ্চিত, খ, শিক্ষা বঞ্চিত এবং গ. পুষ্টি (খাদ্য নিরাপত্তাসহ) বঞ্চিত।
ক. স্বাস্থ্যসুবিধাবঞ্চিত দারিদ্র্য : স্বাস্থ্য সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থাভেদে পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। ১-৪ বছর বয়স শ্রেণীতে মেয়েশিশু মৃত্যুর হার ছেলেশিশু মৃত্যুর হারের তুলনায় প্রায় এক- তৃতীয়াংশ বেশি এবং ১৯৯৩-৯৪ এবং ১৯৯৯-২০০০ সালের ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (DHS) অনুযায়ী এই পার্থক্য অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে গ্রাম ও শহরের মধ্যে শিশু (০-৫ বছর) মৃত্যুর হারের পার্থক্য হ্রাস পেয়েছে এবং উক্ত সময়কালে এই হার ৩৪% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৬%-এ দাঁড়িয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার ধনী জনগোষ্ঠীর তুলনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭০ শতাংশ বেশি। দারিদ্র্য বিমোচনের সাথে জন্ম ও মৃত্যুহার সম্পর্কিত। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে টিএফআর ৩.৩-এ স্থির ছিল, বর্তমানে তা ২.৯। মাতৃ মৃত্যুহারও দারিদ্র্যের সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু জরিপ ২০০১ অনুযায়ী ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মগ্রহণকারীর মধ্যে ৩২০ জন ।
খ. শিক্ষাবঞ্চিত দারিদ্র্য : নব্বইর দশকে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ১৯৮২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার যেখানে ছিল ৫৯ শতাংশ, ১৯৯৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ শতাংশে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে জেন্ডার ভেদাভেদ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চতর শ্রেণীতে জেন্ডার ভেদাভেদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকার এই ব্যবধান হ্রাসের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে দারিদ্রা সমস্যা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাত্র শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝড়ে পড়েছে, যা সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে ।
গ. পুষ্টিবর্ধিত দারিদ্রা : আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শিশুদের পুষ্টির উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী ৬-৭১ মাস বয়স শ্রেণীর শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির শিকার শিশুর হার ১৯৯০ সালে ৬৮.৭% থেকে হ্রাস পেয়ে ২০০০ সালে ৪৯%-এ দাঁড়িয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে এই শ্রেণীর কম ওজনের শিশুর হার ৭২% থেকে হ্রাস পেয়ে ৫১% দাঁড়িয়েছে। পুষ্টি ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি শর্তেও বাংলাদেশ এখনও উন্নত দেশ থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে, ১৯৯৬-৯৭ এবং ১৯৯৯-২০০০ সাল থেকে দেখা গেছে, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশি স্ট্যানটেড এবং কম ওজনের। সিভিয়ার স্ট্যানটেডের ক্ষেত্রে মেয়ে এবং ছেলেদের ব্যবধান ১৯৯৬-৯৭ সালের ১০% থেকে বেড়ে ১৯৯৯-২০০০-এ ১৬% উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে চরম কম ওজন মাত্রার মেয়ে এবং ছেলেদের ব্যবধান হার ১৯% থেকে বেড়ে ২৬%-এ দাঁড়িয়েছে। গ্রাম ও শহরের শিশুদের ক্ষেত্রে অপুষ্টির পার্থক্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ১৯৯৯-২০০০ সালের DHS অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে স্টানটেড শিশুর হার ৪৭% এবং কম ওজনের শিশুর হার ৪৯% এবং এই হার শহরাঞ্চলের জন্য যথাক্রমে ৩৫% এবং ৪০%।
মাতৃ অপুষ্টি যা Body Mass Index(BMI) দ্বারা পরিমাপ করা হয় এবং অপুষ্টির সীমা ১৮.৫-এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার সূচক অনেক বেশি। DHS অনুযায়ী এই সূচকে ১৯৯৬-৯৭ সালে মাতৃ অপুষ্টির হার ছিল ৫২%, যা ১৯৯৯-২০০০ সালে হ্রাস পেয়ে ৪৫%-এ দাঁড়ায়। এই সময় গ্রাম ও শহরের মাতৃ অপুষ্টির ব্যবধান ৫০% থেকে ৬৩%-এ বৃদ্ধি পেয়েছে ।
দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকারের গৃহীত কার্যক্রম : দারিদ্র্য বিমোচন বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মসূচি। এ লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সরকারের ‘১০০ দিনের কর্মসূচি’তে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। বিগত ৯ এপ্রিল, ২০০৩ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশ্যে নীতি-নির্ধারণী ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বৃক্ষরোপণ, মৎস্য চাষ, ছাগল পালন, প্রাথমিক ও নারী শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, গ্রন্থাগার উন্নয়ন, শিশু অধিকার, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, দুস্থদের জন্য আবাসন ইত্যাদি কর্মসূচি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
এছাড়াও ইতিপূর্বে গৃহীত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বর্তমান অর্থবছরেও সরকার অব্যাহত রেখেছে। এই কর্মসূচিগুলো হলো : (১) বয়স্ক দরিদ্রদের জন্য বয়স্ক ভাতা, (২) গৃহহীন দরিদ্রদের ঋণ ও অনুদান প্রদানের জন্য গৃহায়ন তহবিল, (৩) দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক, (৪) সুস্থ মহিলা ভাতা, (৫) বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মুগ্ধ মহিলা ভাতা প্রদান কার্যক্রম এবং (৬) এসিড দগ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ কার্যক্রম ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি।
১. দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি): দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের জন্য যে প্রেসক্রিপশন দান করেছে তা বহুল আলোচিত ও সমালোচিত PRSP বা Poverty Reduction Strategy Papers, যার বাংলা করা হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র। এখানে ২০০০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি’ যেসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের টার্গেট নিয়েছে তার বাস্তবায়নের পথ সুগম করার কথা বলা হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র একটি সুসংবদ্ধ পরিকল্পনা, যা মূলত সামাজিক উন্নয়নের নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থায়ীকরণ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর জোর দেয়। এটি মূলত ৯টি বিষয়ের ওপর জোর দেয়, যা উন্নয়নশীল বিশ্বের বড় সমস্যা। এগুলো হলো ক. কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খ. পুষ্টি, গ. কারিগরি শিক্ষা, ঘ. কারিগরি শিক্ষা, ঙ. সুশাসন, চ. মাতৃ স্বাস্থ্য, ছ. পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জ. দুর্নীতি দমন, ঝ. সবসময় তদারক করা (ওপরের বিষয়গুলো)
PRSP পাঁচটি মূলনীতি বাস্তবায়নে জোর দেয়
ক. দরিদ্রদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান বাড়িয়ে দরিদ্র অনুকূল প্রবৃদ্ধি।
খ. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সামাজিকভাবে দরিদ্রদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মানবসম্পদ উন্নয়
গ. উন্নয়নে নারীর অধিকার ও বৈষম্য নিরসন |
ঘ. যে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত আয়-ব্যয় সংকট থেকে রক্ষা করতে দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঙ. দরিদ্রদের ভাষ্য তুলে আনতে শাসনব্যবস্থায় অংশীদারিত্ব ।
সাধারণত বর্তমানে উন্নয়ন কৌশলের লক্ষ্য হিসেবে যেসব নীতিমালা গ্রহণ করা হচ্ছে সরকার মূলত সেগুলোকেই দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশলপত্রে রূপান্তরের পুরো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩টি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
প্রথমত, সরকার, এনজিও, সুশীলসমাজ ও উন্নয়নে অংশীদারসহ সব স্তরের অধিকার ভোগীদের সঙ্গে নিয়মিত ও কার্যকর মত বিনিময় কৌশলের গুরুত্ব অনুসারে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা এবং লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা। খসড়া কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দারিদ্র্য বিমোচনে অংশীদারমূলক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।
বাংলাদেশ আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার জন্য এ সময়কালে বার্ষিক ৭% হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ জানিয়েছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ আলোচনায় PRSP প্রণীত হয়েছে। PRSP বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের একটি খসড়া তালিকা দিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা ১২.১২ বিলিয়ন ডলার, ১ বিলিয়ন পুষ্টি সংক্রান্ত খাতে বিশেষত স্কুলে লাঞ্চের জন্য, ০.৫ বিলিয়ন ডলার স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য, যার নির্ধারিত সীমা ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ।
২. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি: চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সরবরাহের এবং তাদের আয় বর্ধনকারী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), জিআর (Gratuitious Relief), টিআর (Test Relief), ভিজিডি (Vulnerable Group Development), ভিজি (Vulnerable Group Fooding) ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে।
৩. দারিদ্র্য বিমোচন ও ছাগল উন্নয়ন প্রকল্প : দেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ। শতকরা ৮০ ভাগ ছাগলই পালন করেন গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান, পুষ্টি সবরবাহ বৃদ্ধি এবং চামড়া ও মাংসের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ইত্যাদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব বিবেচনায় বর্তমান সরকার ছাগল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন’ শীর্ষক জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উক্ত কর্মসূচি দেশব্যাপী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কর্তৃক ৫ বছর (২০০২-০৩ সাল থেকে ২০০৬-০৭ সালে) মেয়াদি Action Plan তৈরি করা হয়েছে ।
৪. বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা প্রদান কার্যক্রম: অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্ত দুস্থ মহিলাদের জন্য ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু আছে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে এ কর্মসূচির আওতায় মাসিক ভাতার পরিমাণ ১৬৫ টাকা এবং উপকারভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ নির্ধারণ করা হয়েছে ।
৫. বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি: দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে দশজন সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ ও দরিদ্র ব্যক্তিকে মাসিক একশত টাকা হারে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এ দশজনের মধ্যে অন্তত পাঁচজন মহিলা থাকছে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতায় মাসিক ভাতার পরিমাণ ১৬৫ টাকা এবং উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ।
৬. এসিড দগ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ কার্যক্রম ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি: ২০০২-২০০৩ অর্থবছর থেকে সরকার রাজস্ব বাজেটের অধীনে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা কার্যক্রম এবং এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য যথাক্রমে ২৫ কোটি টাকা ও ১৫ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। এ অর্থবিলে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে আরো ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
৭. গৃহায়ন তহবিল: দারিদ্র্য বিমোচনে নির্দিষ্ট কর্মসূচি হিসেবে দেশের গৃহহীন, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর গৃহায়নের জন্য গৃহায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। গৃহযান তহবিলের জন্য সরকার প্রথম ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে ৫০.০০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করে । বর্তমানে এ তহবিলে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৯৮.০০ কোটি টাকা ।
৮. কর্মসংস্থান ব্যাংক: কর্মসংস্থান ব্যাংক দেশের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের বিভিন্ন লাভজনক ও উৎপাদনমুখী খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে যা একটি বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। এপ্রিল ২০০৩ পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১৬০.১৮ কোটি টাকা এবং আদায়ের পরিমাণ ১০৫.৭২ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৭৮%। দেশের ৬৪টি জেলাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৯৫,০০০ জন। এ ব্যাংকের কার্যক্রমের ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে তাঁত, হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ খামার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৯. বিশেষ ঋণদান কর্মসূচি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ১ কোটি ২০ লাখ। টাকা জাতীয় মহিলা সংস্থা ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শাখার দরিদ্র বেকার মহিলাদের স্ব-কর্ম সংস্থানের জন্য স্ব-কর্ম সহায়ক ঋণ কার্যক্রম নামে একটি ঋণদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র বেকার মহিলাদের ৫,০০০.০০ টাকা থেকে ২০,০০০.০০ টাকা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ৫০,০০০.০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়।
১০. মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট ফর দি আদিবাসী মণিপুরী (মেডাম) ঋণ কর্মসূচি: এ কর্মসূচির আওতায় বৃহত্তর সিলেটের মণিপুরী সম্প্রদায়ের মহিলাদের হস্তশিল্পে বিশেষ করে তাঁত ও কুটির শিল্পের জন্য ঋণ কর্মসূচির অধীনে ১৯৯৪-৯৫ থেকে ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছিল। উক্ত কর্মসূচির সর্বোচ্চ ঋণ সীমা ২৫,০০০.০০ টাকা।
১১. আবাসন (দারিদ্র্য বিমোচন ও পুনর্বাসন) প্রকল্প: দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তাবায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এবং তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৪৪৭.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে চার বছর (জুলাই ২০০২, জুন ২০০৬) বাংলাদেশের ৬৫০০০ (পয়ষট্টি হাজার) ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবারের জন্য জমি, বাসস্থান, প্রশিক্ষণ, কণ, শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, আয়বর্ধক কার্যক্রম, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংস্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহ, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে দারিদ্র্য বিমোচন।
১২. পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ): পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পল্লী এলাকার দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। এ ফাউন্ডেশনটি ৩০ এপ্রিল, ২০০০ তারিখে পল্লী উন্নয়ন ১২ প্রকল্পের ১৩৯টি থানার বিত্তহীন কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির যাবতীয় সম্পদ ও লোকবল নিয়ে গঠিত হয়েছে।
১৩. দারিদ্র্য বিমোচন ও পিআরএসপি: দাতাগোষ্ঠীর নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (Poverty Reductions Strategic Paper – PRSP) প্রণয়নের কাজ করে যাচ্ছে। এতে দেশের ভবিষ্যৎ দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল, নীতি ও পদ্ধতি এবং লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। দেশের নাগরিক পর্যায়ে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এটিই হবে মূল ভিত্তি।

উপসংহার : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যে সকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। কেননা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বাস্তবতা হলো একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম জীবন মানে উন্নীত করে এগিয়ে যাওয়া। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও কুশলী নেতৃত্ব ও গঠনমূলক নীতি, কৌশল ও কর্মসূচি। এক্ষেত্রে পিআরএসপি প্রণয়ন, ছাগল পালন, দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারী ও শিশু উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ আমাদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে বৈকি?
আরও দেখুন: