তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন? – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্ককরণ তৈরি করবেন। ভাব সম্প্রসারণ অর্থ হচ্ছে ভাবের সম্প্রসারণ তাই ভাব সম্প্রসারণ লেখার সময় কোন প্রকার লেখক বা কোভিদ কোন সুস্পষ্ট উক্তি তুলে ধরা যাবেনা।ভাব সম্প্রসারণ এর আলোচনাতে যাতে না হয় সে দিকে মনোযোগী হতে হবে এবং প্রকাশভঙ্গি যতটা সৌন্দর্য হবে ভাব সম্প্রসারণ এর সার্থকতা ততটাই বৃদ্ধি পাবে।প্রাসঙ্গিক অংশে ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক এবং পৌরাণিক তথ্য উল্লেখ করেছে তা বুঝে সম্প্রসারণ করতে হবে।ভাব সম্প্রসারণ লেখার সময় এর ব্যাখ্যা মূলত নির্ভর করে মান নির্ধারণের নম্বর। ভাব সম্প্রসারণ করার সময় অবশ্যই মান নির্ধারণ অনুসারে ভাবের সম্প্রসারণ করতে হয়।
তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?
মানুষ বিবেকবান প্রাণী। তার বিবেক স্বাধীন এবং শক্তিশালী। তার উত্তম বা অধম হওয়ার পেছনে পারিপার্শ্বিকতার যতই প্রভাব থাকুক না কেন, তা অতিক্রমযোগ্য। সুষ্ঠুভাবে নিজের বিবেকের যথাশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ নিজের ওপর থেকে অধমের কুপ্রভাব অনায়াসে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিজেকে উত্তমের স্তরে উন্নীত করতে পারে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে ন্যায়, সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করাই মানুষের একান্ত কর্তব্য। জীবনে প্রতিনিয়ত ভাল আর মন্দ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে মানুষ। নিজেকে মহৎ গুণাবলির আদর্শে পরিচালিত করতে পারলেই জীবনে সার্থকতা লাভ করা যায়। তাই চারদিকের অন্যায় অবিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করতে হবে জীবনকে। অপরের মন্দকর্ম কখনোই আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। চারদিকের পরিবেশ যদি বিরূপ থাকে তাহলে তা থেকে নিজেকে সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে এবং শ্রেষ্ঠ মানবিক আদর্শে জীবনকে গঠন করতে হবে। আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে মানুষ শত অধমের মধ্যে থেকেও নিজে উত্তম হতে পারে।
কারণ প্রকৃত উত্তমের বিবেক কখনই দুর্বল নয়, ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে’, তাতে অধমেরই তার দিকে প্রভাবিত হবার কথা, উল্টোটা নয়। উত্তম হবার সাধনাই মনুষ্যত্বের সাধনা । কুকুর মানুষকে কামড়াবে বলে মানুষও কুকুরকে পাল্টা কামড়াতে যাবে— এমন নয়। কোনো হীন বা নীচ ব্যক্তি ক্ষতিকর কাজ করলেও তার প্রতিবিধান হীন কাজ দিয়ে করতে নেই। উত্তম ব্যবহার ও ক্ষমার আদর্শ স্থাপন করেই তার প্রতিবিধান করা উচিত। মনে রাখতে হবে, জগতের সকল ভাল জিনিস ও কাজের আধার হল উত্তম কর্ম। উত্তম কর্ম ও আদর্শই প্রকৃত জীবন। অধম— নরক, অধম— নিকৃষ্ট, দুর্গন্ধযুক্ত ও সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়

মানুষের সাধনা হওয়া উচিত উত্তম হওয়ার সাধনা। উত্তম হওয়াই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। প্রকৃত উত্তম তার মনের দুর্বার শক্তি দিয়ে অধমের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরোধের মূলমন্ত্র উচ্চারণ করেন : তুমি অধম, তাই আমাকে উত্তম হতে বাধা কোথায়?
আরও দেখুন: