তরুণদের সচেতন করার লক্ষে ভাষণ এর একটি খসড়া তৈরি করে দেয়া হলো শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” সিরিজের, “ভাষণ” বিভাগের একটি পাঠ|
তরুণদের সচেতন করার লক্ষে ভাষণ
আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, মঞ্চে উপবিষ্ট সম্মানিত আলোচকবৃন্দ এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ— আস্সালামু আলাইকুম।
আজকের সভার আলোচ্য বিষয়, “আর্তমানবতার সেবায় তরুণ সমাজ’। ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তা হিসেবে কিছু বলার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সুধীবৃন্দ, এটি চরম সত্য যে, যুগে যুগে তরুণ-প্রাণ যুবকেরাই রচনা করে ভালোবাসার স্বর্গ। তারাই নিদ্রাচ্ছন্ন জাতির জীবনে শোনায় ঘুম ভাঙার গান। তাদের স্পর্শেই নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ। তাদের কণ্ঠেই প্রভাত-পাখির কলগীতি।
তারাই নিস্তরঙ্গ, জরাগ্রস্ত জাতির জীবনপ্রবাহে তোলে ঝড়ের মাতন। তাদের অমিত উচ্ছ্বাসেই সৃষ্টি হয় শত তরঙ্গ-ভঙের উন্মাদনা। সমাজের দিকে দিকে যখন অন্যায়-অবিচারের সীমাহীন স্পর্ধা, যখন উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে- বাতাসে ধ্বনিত, যখন অত্যাচারিতের খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিত, যখন ব্যথিতের আর্ত হাহাকারে চারদিক মুখর তখন প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর তরুণরাই প্রতিকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসে নির্ভীক প্রাণে। তারাই সবুজ প্রাণের প্রতীক। তারাই মুক্তির অগ্রদূত। তারাই দেশের স্বাধীনতা, প্রগতি ও সার্বিক কল্যাণের জন্যে জীবন-বিসর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাদের রক্ত দিয়েই লেখা হয় জাতির নতুন ইতিহাস।
তাদের চোখে অনাগত দিনের স্বপ্ন-মদিরতা, বুকে দুর্জয় সংকল্প, বাহুতে নবীন বল। তারাই স্থবির, জরাচ্ছন্ন সমাজের বুকে আনে নতুন দিনের আলোক-প্লাবন। তারা প্রমত্ত। তারা অশান্ত। তারা দুর্জয়। সুধী, তরুণরা চিরকালই প্রভাতের সূর্যের মতো চিরনবীন, বর্ষার নব কিশলয়ের মতোই চিরসবুজ। নবীনত্বের শুচিতা তাদের দেহমনে। সেবাধর্মের মধ্যে যে মহত্ব, যে উদারতা, যে আত্মত্যাগপরায়ণতা, তরুণসমাজই সর্বাগ্রে তার সন্ধান পায়। দিকে দিকে যখন আর্ত মানুষের ক্রন্দনধ্বনি, যখন অসহায় বিপন্ন মানুষের দীর্ঘশ্বাস, মানুষ যখন প্রাকৃতিক দৈব- দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত, দুর্ভিক্ষ-মহামারি কবলিত, তখন তরুণসমাজই আর্তের সেবায় এগিয়ে আসে।

জনসেবার মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক সময় তারা বরণ করে মৃত্যুর মহিমা। মানুষের দুঃসহ লাঞ্ছনায় তরুণসমাজ কখনোই নীরব দর্শক মাত্র হয়ে থাকতে পারে না। সংসারের ক্ষুদ্রতা, স্বার্থপরতা কখনও তাদের আচ্ছন্ন করে না। হে তরুণসমাজ! শিক্ষার উদ্দেশ্যই তো মানবতাবোধের জাগরণ। পরোপকারের মধ্যেই রয়েছে সেই মানবধর্ম। যৌবনের এই বয়সই হল সমাজসেবার উপযুক্ত পটভূমি। এই বেদিতলে তার ভবিষ্যৎ জীবনের পাঠ, মানবতার উদ্বোধন। সচেতন প্রাণপ্রিয় বন্ধুগণ, মনে রাখতে হবে, সমাজের জন্য, দেশের জন্য সেবামূলক কাজের চর্চা ও অনুশীলনের এটিই প্রকৃষ্ট সময়। তরুণ বয়সেই আমরা সমাজপ্রাণ হয়ে সেবামূলক কাজে উদ্যোগী হব।
আমাদের সমাজ-সচেতনতা, সামাজিক মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা ও সেবামূলক কাজের অভ্যাস সামাজিক মানুষের কাছাকাছি এনে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে স্বর্ণপ্রসূ করবে। পরার্থে আত্মোৎসর্গেই তো জীবনের সার্থকতা। বন্ধুগণ, এ শুধু নীতি-আদর্শের কথা নয়, আমার কল্পনা নয়, এভাবে আর্তমানবতার সেবায় আমরা ব্রতী হলে মনুষ্যত্বের হবে সার্থক বিকাশ। এ কথা তো ঠিকই, সেবা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেবা জীবনের ধর্ম— অমরত্ব লাভের সোপান। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। ধন্যবাদ ।
আরও দেখুন: