Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ প্রতিবেদন রচনা। Essay on Information and Bangladesh

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ [ Essay on Information and Bangladesh  ] অথবা, বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনার ভূমিকা:

বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করার কৌশল হচ্ছে প্রযুক্তি। “Information is power” অর্থাৎ তথ্যই শক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত সকল কাজকর্মে তথ্যপ্রযুক্তির বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক।

তথ্য প্রযুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের ধারণা:

তথ্য প্রযুক্তি বলতে তথ্য সংগ্রহ এবং এর ব্যবহারকেই বোঝানো হয়। একে Information Technology বা IT নামেও অভিহিত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তি মূলত একটি সমন্বিত প্রযুক্তির নাম। এক কথায় কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবেশনের উন্নত ও দ্রততম মাইক্রো-ইলেট্রনিক ব্যবস্থার নাম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি।

জাতীয় উন্নয়ন বলতে বোঝায় সামগ্রিক উন্নয়ন। অর্থাৎ জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন। এদেশে বিগত একযুগে তথ্যপ্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। তথ্য প্রযুক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আয় বাড়ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হচ্ছে।তথ্য

প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনবদ্য প্রতিশ্রুতি এ দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার মূল ভিত্তি হলো তথ্যপ্রযুক্তি। সরকার তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন;-

১. দেশের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য সারা দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

২. সরকার জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা অনুমোদন করেছে ।

৩. বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তি পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য ‘আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।

৪. এনসিটিবি প্রণীত কারিকুলামে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

জাতীয় উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি:

উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে নিবিড় সেতুবন্ধনের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাদের জাতীয় জীবনেও দেখা দিয়েছে তথ্য প্রযুক্তির অনিবার্য প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় জীবনের অংশ হিসেবে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত বহুদিক যুক্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির পরিমন্ডলে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে সহজ ও সাবলীল।

চিকিৎসাক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে প্রতিদিন নতুন করে জীবনদান করছে, রক্ষা করছে মরণব্যাধীর হাত থেকে। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনার মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে শিক্ষার সব দরজা এখন আমাদের সামনে খোলা। তথ্য গ্রহণের অবাধ সুযোগ সারা পৃথিবীকে এক করে দিয়েছে। বৈশ্বিক পরিমন্ডলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আন্তঃমহাদেশীয় সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছে। নিচে জাতীয় উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

তথ্যের আদান-প্রদান:

প্রতিদিন মানুষের জীবনে নুতন নুতন তথ্যের সমাবেশ ঘটছে। যার ফলে তথ্যের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনে বিভিন্ন দিকে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সময়ে উপযুক্ত তথ্য পাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষের নিজের পক্ষে সব তথ্য মনে রাখা বা হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন ভালো যোগাযোগব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত তথ্য পাওয়া যায়।

তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান:

দেশে বেকারের সংখ্যা ও বেকারত্ব নিয়ে প্রায়ই তর্ক-বিতর্ক হয়ে থাকে। তবে যোগ্য ও মেধাবীরা যে সবসময়ই কাজ পান এবং নিজ উদ্যোগে নিজের পথ খুঁজে নিতে পারেন, এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। দেশে গত কয়েক বছরে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগসহ কর্মসংস্থান বেড়েছে আশাব্যঞ্জক গতিতে। সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার প্রকৌশল খাতে। এর তথ্য প্রমাণসহ সমর্থন মিলেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে। ২০১৮ সালের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এডিবি দেখতে পেয়েছে, শিক্ষিত স্নাতকদের মধ্যে সর্বাধিক কর্মসংস্থান হয়েছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইটি সেক্টরে- প্রায় ৭৭.১ শতাংশ। যেখানে অন্য সব বিষয়ে স্নাতকদের কর্মসংস্থানের হার ৪০ শতাংশ। তদুপরি কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ডিগ্রীপ্রাপ্তরা এক বছরের মধ্যেই প্রবেশ করতে পারে কর্মজীবনে।

তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা:

প্রযুক্তির মাধ্যমে যখন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে বা শিক্ষাদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তখন তা হয় প্রযুক্তিবিদ্যা মাধ্যমে শিক্ষা। বর্তমানে আমাদের ভারতবর্ষে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন রকম উদ্দেশ্য আছে। যে উদ্দেশ্য গুলি পালনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করে যে সকল বিষয়গুলো তে সবচেয়ে বেশি উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রকাশ শিক্ষা মনোযোগী হয়ে ওঠা ইত্যাদি। এই কারণে শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যার যথেষ্ট ভূমিকা আছে। এখানে শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যার কয়েকটি ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি:

টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। সেই শুরুর দিকের এনালগ সিগনালের তথ্য প্রযুক্তির যুগ থেকে আজ ডিজিটাল মাধ্যমে  মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশনের যুগে আসতে তথ্য প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলা যায়।

শিল্প ও অর্থনীতি উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি:

তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) মূল চালিকা শক্তি হল ইন্টারনেট, যা বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ামক। অন্য কথায় বর্তমান বিশ্ব অর্থ-ব্যবস্থাকে ইন্টারনেট অর্থনীতিও বলা হয়ে থাকে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাভাবিক গতিশীলতার চেয়ে বহুগুণে বেশি ও ব্যাপক ক্রিয়াকর্মের সমাধান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশের ফলে সারাবিশ্ব এ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসেছে নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা। বর্তমানে কৃষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তার স্পর্শ রাখেনি। এর ছোঁয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিন দিন বেড়েই চলেছে।

তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি:

অর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এর জন্য সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা দরকার। বিশ্বব্যাপী বঞ্চিত মানুষের জন্য আর্থিক সেবা সহজ করে দিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি। সেই সাথে তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে ব্যাংকিং সেবা খাতের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে যা তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া ভাবা অসম্ভব।

যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি:

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত পরিবহন ব্যবস্থা টিকে আছে তথ্যের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। যাত্রা শুরুর সময় থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত বাস, ট্রেন বা প্লেনের মতো বিভিন্ন যানবাহন থেকে নানান ধরনের তথ্য লেনদেন করা হয়। তাৎক্ষণিক তথ্য লেনদেনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে এসব পরিবহনের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। মোটকথা এয়ারপোর্ট, রেলওয়ে অথবা বাসস্টপের মতো পরিবহন সংক্রান্ত বিভিন্ন অবকাঠামো এবং যানবাহনের মধ্যে ডেটা বা তথ্য আদান-প্রদানের ওপরই পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভরশীল।

কিন্তু প্রচলিত পরিবহন ব্যবস্থায় কিছু বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রায়ই জটিলতা দেখা দেয়। আবহাওয়া, যানবাহনের অবস্থান কিংবা ট্রাফিক মনিটরিং-এর মতো কিছু বিষয়ে সংগ্রহ করা তথ্য প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তিত হতে থাকে। তবে ভবিষ্যতে তথ্য লেনদেনের এই প্রক্রিয়াই আরো আধুনিক আর উন্নত হয়ে উঠবে। তখন স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ ও কাজে লাগানো আরো সহজ হয়ে আসবে। মূলত ভবিষ্যতের আধুনিক এই পরিবহন ব্যবস্থা বা সিস্টেমকেই বলা হয় “স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট”।

এছাড়া ব্যবসাক্ষেত্রে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে, পর্যটন ক্ষেত্রে, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে, গবেষণা ক্ষেত্রে, মানবসম্পদ উন্নয়নে খাত সহ প্রায় সব খাতে ভূমিকা রাখছে তথ্য প্রযুক্তি।

দারিদ্র্য বিমোচন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য প্রযুক্তি:

বর্তমান বিশ্বায়নে সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে আইসিটির আউটসোর্সিংয়ের জোয়ার। আইসিটির নতুন ধারাকে অব্যাহত রাখতে সৃষ্টি হয়েছে নতুনতর এক অর্থনীতি যার নাম “Knowledge Economy”। নতুন ধারার এই অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োজন হচ্ছে বিপুল পরিমান তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ। উন্নয়নশীল দেশ সমূহ এই সুযোগকে কাজে লগিয়ে অর্জন করছে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। এর ফলে দেশের দরিদ্র ও বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান।

উপসংহার:

বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্য প্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থা ও তত বেশি উন্নত। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।

Exit mobile version