Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

টেলিভিশন ও জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা প্রতিবেদন রচনা। Essay on Television

বর্তমান যুগে টেলিভিশন এক অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে জাতীয় জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি কেবল বিনোদনের উৎস নয়, বরং জনগণের মধ্যে তথ্য ও জ্ঞানের বিস্তার ঘটানোর অন্যতম প্রধান মাধ্যম। টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের খবর, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক বিষয়াবলী দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছায়। জাতীয় উন্নয়ন, জনমত গঠন এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে টেলিভিশনের ভূমিকা অপরিসীম। তাই টেলিভিশনকে শুধুমাত্র একটি যন্ত্র বা বিনোদন মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

 

টেলিভিশন ও জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা প্রতিবেদন রচনা

 

টেলিভিশন ও জাতীয় জীবনে টেলিভিশনে রচনার ভূমিকা :

‘টেলিভিশন’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘টেলি’ অর্থ ‘দূরত্ব’ এবং লাতিন শব্দ ‘ভিশন’ অর্থ ‘দেখা’ থেকে। টেলিভিশন মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর, ঘটনা ও সংস্কৃতি মুহূর্তেই আমাদের সামনে তুলে ধরে। বিনোদনের পাশাপাশি এটি তথ্যপ্রদানের প্রধান মাধ্যম হিসেবে দেশের জাতীয় জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

টেলিভিশনের আবিষ্কার :

১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ১৯৩৬ সালে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে। তখনকার টেলিভিশন যন্ত্রপাতি বড় এবং ভারী হলেও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এলসিডি, এলইডি, থ্রিডি প্রভৃতি উন্নত ধরনের টেলিভিশন বাজারে এসেছে, যা অধিকতর স্পষ্ট ছবি এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।

টেলিভিশনের ব্যবহার :

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই টেলিভিশন ব্যবহার করা হয়। মূলত বিনােদনের মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে টেলিভিশন চালু হয়েছে আজ থেকে প্রায় আটচল্লিশ বছর আগে। বিনােদনের পাশাপাশি আমাদের দেশে টেলিভিশনে গণশিক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিবারপরিকল্পনার মতাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাে প্রচার করে থাকে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন :

১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন তার যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন রঙিন অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় এবং তার পরে টাঙ্গাইলের তালিবাবাদে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। যার ফলে পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্ত থেকে প্রেরিত দৃশ্য আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখতে পাই।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল :

বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চালু আছে। যেমন : এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, এনটিভি, বাংলাভিশন, একুশে টেলিভিশন, বৈশাখী টেলিভিশন, সময় টেলিভিশন, আরটিভি, মােহনা টেলিভিশন, মাছরাঙা টেলিভিশন, চ্যানেল ২৪, দেশটিভি, একাত্তর (৭১) টিভি ইত্যাদি।

আমাদের জীবনে টেলিভিশনের উপযােগিতা :

বর্তমানে মানুষের জীবনে টেলিভিশন বিনােদনের প্রধান মাধ্যম। মানুষ তার অবসর কাটায় টেলিভিশনের সামনে বসে। মনের ক্লান্তি দূর করে টেলিভিশন দেখে। একটি টেলিভিশন ঘরে থাকলে সারা দুনিয়ার ঘটনাকে হাতের মধ্যে পাওয়া যায়। যেকোনাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের সমস্ত খবর আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। জনকল্যাণ ও জনসচেতনতামূলক যেকোনাে অনুষ্ঠান টেলিভিশনের মাধ্যমেই প্রচার করা হয়ে থাকে। শিক্ষাবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলােও টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। টকশোগুলােতে বিভিন্ন মতামত প্রচারিত হয়।

টেলিভিশনের নেতিবাচকতা :

টেলিভিশন যেমন আমাদের আনন্দ দান করে, তেমনি এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অধিক সময় টেলিভিশন দেখলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। মাঝে মাঝে টেলিভিশনে ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পরিপন্থি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এ অনুষ্ঠানগুলাে তরুণ মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উপসংহার :

বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। বিজ্ঞানের যুগে সবাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে। দুনিয়ার সব খবর এখন মানুষের মুঠোর মধ্যে। টেলিভিশন এ কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে টেলিভিশন হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। তবে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নীতিমালা থাকা উচিত, যা আমাদের কিশাের-তরুণদের সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে।

Exit mobile version