“জীবনের হিসাব” কবিতাটি সুকুমার রায়-এর রচিত একটি ব্যতিক্রমধর্মী কবিতা, যেখানে হালকা হাস্যরসের আড়ালে জীবনের গভীর বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। শিশুসুলভ হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে কবিতাটিতে জীবনের সময়, কাজ, অবকাশ এবং ক্ষয়িষ্ণুতা নিয়ে এক সূক্ষ্ম দর্শন প্রকাশ পেয়েছে। সুকুমার রায় এই কবিতায় রসবোধ ও ছন্দের মোহনীয় সংমিশ্রণে দেখিয়েছেন, আমরা কিভাবে সময়ের হিসাব করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্বের হিসাব ভুলে যাই। ব্যঙ্গাত্মক অথচ চিন্তাপ্রবণ এই কবিতাটি কেবল শিশুদেরই নয়, বড়দের কাছেও একটি তাৎপর্যপূর্ণ পাঠ।

জীবনের হিসাব – সুকুমার রায়
বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটে
মাঝিরে কন, “বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফেলফেলিয়ে হাসে,
বাবু বলেন, “সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি!”
খানিক বাদে কহেন বাবু, “বলত দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় হতে নেবে?
বলত কেন লবন পোরা সাগর ভরা পানি?”
মাঝি সে কয়, “আরে মশাই অত কি আর জানি?”
বাবু বলেন, “এই বয়সে জানিসনেও তা কি?
জীবনটা তোর নেহাত খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!”
আবার ভেবে কহেন বাবু, “বলত ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চূড়ো?
বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহন লাগে কেন?”
বৃদ্ধ বলেন, “আমায় কেন লজ্জা দিছেন হেন?”
বাবু বলেন, “বলব কি আর বলব তোরে কি, তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”
খানিক বাদে ঝড় উঠেছে ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুবল বুঝি দুলে।
মাঝিরে কন, “একি আপদ ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবল নাকি নৌকো এবার? মরব নাকি আজি?”
মাঝি শুধায়, “সাতার জানো?” মাথা নারেন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, “মশাই এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে।”
জীবনের হিসাব কবিতা আবৃত্তি :
![জীবনের হিসাব কবিতা - সুকুমার রায় 1 সুকুমার রায় চৌধুরী [ Sukumar Ray Chowdhury ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/সুকুমার-রায়-চৌধুরী-Sukumar-Ray-Chowdhury.jpg)