জীবনের লক্ষ্য জানিয়ে পিতার কাছে চিঠি | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , চিঠি বা পত্র হলো একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের জন্য লিখিত তথ্যধারক বার্তা। চিঠি দুজন বা দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে; বন্ধু ও আত্মীয়দের আরও ঘনিষ্ট করে, পেশাদারি সম্পর্কের উন্নয়ন করে এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেয়।
জীবনের লক্ষ্য জানিয়ে পিতার কাছে চিঠি
কলেজ ছাত্রাবাস, রাজশাহী ১১ এপ্রিল, ২০০০
শ্রদ্ধেয় আব্বাজান,
আমার সালাম গ্রহণ করুন। অনেকদিন হল, আপনি কেমন আছেন আমি জানি না। সার্বক্ষণিক আপনার মঙ্গল কামনা করি। কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন পরই আপনার ছোট্ট একটি চিঠিতে জানতে চেয়েছিলেন, আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি কিনা। এ-নিয়ে আপনার উপদেশ বাণীটিও আমার লক্ষ্য স্থির করতে সহায়ক হয়েছিল- “সংসার সিন্ধুতে ধ্রুবতারা সম স্থির লক্ষ্য চাই, লক্ষ্যবিহীন জীবনতরণী কূল নাহি কভু পায়।”
বাবা, কলেজ-জীবনের দীর্ঘ দুটি বছর ধরে আমার জীবনের লক্ষ্য বুকে নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু কে জানত পরীক্ষার খাতায়-ই একদিন আমাকে আমার জীবনের লক্ষ্য লিখতে হবে! তারপরও আজ আমি ধন্য। পরীক্ষায় পাসের জন্যে কিংবা ভালো নম্বরের প্রত্যাশায় যে জীবনের লক্ষ্য লেখা হয়, তা প্রকৃতজীবনের লক্ষ্য কিনা তা আমার জানা নেই, তবে আমার জীবনের যে লক্ষ্য তা প্রকৃতই সত্য।

বাবা, আপনি হয়ত ভাবছেন আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা এরকম কোনো একটা কিছু হওয়ার কথা ভাবছি। আসলে তা নয়, আমি বড় হয়ে একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী হতে চাই। এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য এবং এটাই আমার জীবনের সাধনা। আমি ভেবেছি পরীক্ষার পরপরই অবসর সময়টুকু বসে না থেকে কম্পিউটার শিখব। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই আমি এম. এস. ওয়ার্ড ও ডি. টি. পি. শিখে নিতে পারলে চার হাজার টাকার একটা খণ্ডকালীন চাকরিও পাব। এ-টাকা দিয়ে আমার লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার পড়াশুনোর খরচও চালিয়ে যেতে পারব।
এ-ছাড়া আমার যে আর কোনো উপায় নেই, বাবা। আমি জানি, আমি জীবনের এক অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছি, আপনার আশীর্বাদ থাকলে আর স্রষ্টা সহায় থাকলে আমি আমার লক্ষ্যের দিকে ঠিকই এগিয়ে যেতে পারব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তে পারবাবা! আমার জীবনের লক্ষ্যটি কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়,– আমি আমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজ গ্রামে একটি
কম্পিউটার ক্লাব গঠন করব। বিজ্ঞানের এ-যুগে কম্পিউটার শিক্ষা যে মানুষের জন্যে কত প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে, তা আপনি স্বচক্ষে না দেখলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন না- অফিস-আদালত, হাসপাতাল-ক্লিনিক, ব্যাংক-বিমা, স্কুল- কলেজ সর্বত্রই এখন কম্পিউটার। বর্তমানের যুগটাই কম্পিউটারের। আমি যে কম্পিউটার ক্লাবের কথা ভাবছি, সেখানে বিনা পয়সায় গ্রামের দুস্থ ও দুঃখী মানুষের সব ছেলেমেয়ে কম্পিউটার শিখে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবে, একসময় আমাদের পুরো গ্রামের মানুষকে আর দু মুঠো অন্নচিন্তায় দিন কাটাতে হবে না। সবার মুখে ফুটে উঠবে প্রাণোচ্ছল হাসি, তাদের হাসি দেখে আমিও হাসব শুধুই হাসব। আমি আমার দু চোখে সূর্যের আলোর মতো আমার জীবনের লক্ষ্যকে আলো বিকিরণ করতে দেখতে পাচ্ছি। আমার কম্পিউটার ক্লাবের নাম হবে ‘স্বনির্ভর কম্পিউটার ক্লাব’। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি ভালো আছি।
ইতি
আপনার স্নেহের
আরও দেখুন: