ছয় দফা আন্দোলন | ভাষা আন্দোলন-স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত বৈষম্য ও দীর্ঘ শোষণনীতির ফলে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার প্রশ্নে ১৯৬৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর এক মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে দেশবরেণ্য নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দাবিসংবলিত ছয়দফা ভিত্তিক এক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি ছয় দফাকে জাতীয় মুক্তির প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এটি ছিল মারণাস্বরূপ।
ছয় দফা আন্দোলন | ভাষা আন্দোলন-স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ | বাংলা রচনা সম্ভার
ছয় দফা আন্দোলন
ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি: যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল তা নিম্নরূপ:
১. পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত শোষণ : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য হয়, যা পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দু ভাগে বিভক্ত ছিল। ভৌগোলিক, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ব্যাপক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও শুধু ধর্মের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অভ্যুদয় হয়। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ, নির্যাতন, জাতিগত নিপীড়ন ও প্রশাসনিক বঞ্চনার সূচনা করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
২. শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন: পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রকে শক্তিশালী করে তৎকালীন পূর্ব বাংলাকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে রাজনৈতিক কর্মধারাকে জোর করে স্তব্ধ করার চেষ্টা চালায়। বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে ছিল বঞ্চিত। ফলে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হয়।
৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য: পাকিস্তানের প্রায় সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, স্টেট ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা ও বৈদেশিক মিশনসমূহ পশ্চিমাংশে থাকার কারণে অর্থের মজুদও সেখানে গড়ে ওঠে। পূর্বাঞ্চলের পাট থেকে অর্জিত প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিমাংশে ব্যয় করা হতো। পূর্বাংশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের নিজস্ব ক্ষমতা নেই—এ অজুহাতে সকল বৈদেশিক মুদ্রাই পশ্চিমাংশে চলে যেত। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হয় অর্থনৈতিক বৈষম্যের গগনচুম্বী প্রাচীর।
৪. চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য: পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালিদের প্রতি বিশেষ উদাসীন নীতি পরিলক্ষিত হয়। কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসের চাকরির ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ এবং সামরিক বাহিনীতে ১০ শতাংশের বেশি পূর্ব পাকিস্তানি ছিল না। স্থল, নৌ, বিমান ও কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির সকল সদর দপ্তর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত ছিল। আইয়ুব সরকারের আমলে এ বৈষম্য ও বঞ্চনা তীব্র আকার ধারণ করে।
৫. পূর্ব বাংলায় তীব্র অসন্তোষ: ১৯৫৪-৫৫ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভের পর আইয়ুব সরকার ও তার সহযোগা মৌলিক গণতন্ত্রী আমলা, কনভেনশন ও মুসলিম লীগের সদস্যদের দৌরাত্ম্য ও অত্যাচার পূর্ব বাংলার জনজীবনে যথেষ্ট মানসিক চাপ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
৬. সামরিক অসহায়ত্ব: পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার কোনো কার্যকর ব্যবস্থ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ ভৌগোলিক কারণে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে গড়ে তোলা উচিত ছিল। কিন্তু সকল সামরিক দপ্তর, অস্ত্র দপ্তর ও অস্ত্র কারখানা পশ্চিম পাকিস্তানেই স্থাপন করা হয়। আইয়ুব খানের যুক্তি ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষাব্যবস্থা পশ্চিম পাকিস্তানে নিহিত রয়েছে। কিন্তু ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ আইয়ুবের এই যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে ।
৭. ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ: ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় থেকে বাঙালিরা * নিজেদের অসহায়ত্ব বুঝতে পারে এবং নিজেদের নিরাপত্তা শক্তির ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। এ যুদ্ধ বাঙালি জাতিকে এমন একটি ধারণা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে যে, পাকিস্তানিরা শুধু নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের ব্যবহার করবে। তাই অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস লাহোরে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।
ছয় দফা কর্মসূচি: ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করার সময় শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফাকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচার দাবি বলে উল্লেখ করেন। ঐতিহাসিক এ ছয় দফা কর্মসূচিতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সংবিধানের এক সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় । নিচে ছয় দফা কর্মসূচির বিবরণ দেয়া হলো:
প্রথম দফা
শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি: ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সত্যিকার ফেডারেশন ধরনের সংবিধান রচনা করতে হবে। তাতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং সকল নির্বাচন: সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। আইনসভার সার্বভৌমত্ব থাকবে।
বিশ্লেষণ : লাহোর প্রস্তাব ছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষে মুসলমানদের প্রাণের দাবি। লাহোর প্রস্তাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেসব বিধান উল্লেখ ছিল তার ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের মুসলমানরা রায় দিয়েছিল। আবার ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মূলে ছিল এই লাহোর প্রস্তাব। সুতরাং শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার প্রথম দফায় যে প্রস্তাব করেছেন তা নতুন কোনো প্রস্তাব ছিল না, যা পাকবাহিনীর মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা, সর্বজনীন ভোটাধিকার ও সার্বভৌম আইন পরিষদ এই ছিল প্রথম দফার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।
দ্বিতীয় দফা
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়সমূহ থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। অবশিষ্ট সকল ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
বিশ্লেষণ: কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত ক্ষমতা দিয়ে এক অর্থে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকেই তুলে ধরা হয়েছে। এই দফা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বলেছেন, ‘এই প্রস্তাবের জন্যই কায়েমি স্বার্থের দালালরা আমার ওপর সর্বাপেক্ষা বেশি চটেছে। আমি নাকি পাকিস্তানকে দু টুকরো করার প্রস্তাব দিয়েছি।”
তৃতীয় দফা
মুদ্রা ও অর্থবিষয়ক ক্ষমতা : ১. পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জন্য দুটো আলাদা অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রার প্রচলন এবং দুটো স্টেট ব্যাংক স্থাপন করতে হবে।
২. দুই অঞ্চলে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে দুই মুদ্রা থাকবে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে পারবে না, একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে।
বিশ্লেষণ : তৃতীয় দফার বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বলেন, আমার এই প্রস্তাবের মর্মার্থ হলো এই যে, উপরিউক্ত দুটো বিকল্পের দ্বিতীয়টি গৃহীত হলে মুদ্রা কেন্দ্রের তত্ত্ববধানে থাকবে। সে অবস্থায় উভয় অঞ্চলের একই নকশার মুদ্রা বর্তমানে যেমন আছে তেমন থাকবে। পার্থক্য শুধু তাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তানের রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ইস্যু করা হবে এবং তাতে পূর্ব পাকিস্তান বা সংক্ষেপে ঢাকা লেখা থাকবে। তদ্রূপ পশ্চিম পাকিস্তানেও থাকবে। মূলত এ মুদ্রাব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানকে নিশ্চিত অর্থনৈতিক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করাই ছিল উদ্দেশ্য।

চতুর্থ দফা
কর ও শুল্কবিষয়ক ক্ষমতা: সকল প্রকার কর ও শুল্ক ধার্য এবং তা আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আদায়কৃত রাজস্বের নির্ধারিত অংশ ফেডারেল তহবিলে জমা হবে।
বিশ্লেষণ: এই দফার সুবিধা অনেক। যেমন:
১. কেন্দ্রীয় সরকারকে কর আদায়ের কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।
২. কর ধার্য ও আদায়ের জন্য কোনো দপ্তর বা কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে না।
৩. কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলোর জন্য কর ধার্য ও আদায়ের মধ্যে কোনোরূপ দ্বৈততা থাকবে না। এতে অপচয় ও অপনায় রোধ হবে।
৪. এর ফলে কর ধার্য ও আদায়ের একত্রীকরণ সহজ হবে।
পঞ্চম দফা
বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক ক্ষমতা: এ দফায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে নিম্নলিখিত শাসনতান্ত্রিক বিধানের সুপারিশ করা হয়:
১. দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. রাজ্য সরকার নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের এখতিয়ারে রাখবে।
৩. ফেডারেশনের প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সমানভাবে বা সংবিধানে নির্ধারিত হার অনুযায়ী আদায় করা হবে।
৪. দেশে উৎপাদিত পণ্য বিনা শুল্কে উভয় অঞ্চলে আমদানি-রপ্তানি হবে।
৫. বিদেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি, ট্রেড মিশন স্থাপন ও আমদানি-রপ্তানির অধিকার রাজ্য সরকারকে দিতে হবে।
বিশ্লেষণ : পঞ্চম দফার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে ছয় দফার প্রবক্তারা বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। সে কারণে পূর্ব পাকিস্তানে মূলধন গড়ে না ওঠায় পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বিদেশী মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তানের নেই—এ অজুহাতে পূর্ব পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হচ্ছে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান অনুন্নতই থেকে যাচ্ছে।
আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা: পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার জন্য নিজস্ব গণবাহিনী বা আধা সামরিক বাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দিতে হবে।
বিশ্লেষণ : ষষ্ঠ দফার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, এ দাবি অন্যায়ও নয়, নতুনও নয়। কারণ যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা ভিত্তিক দাবির মধ্যে আনসার বাহিনীকে ইউনিফর্মধারী সশস্ত্রবাহিনীতে রূপান্তরিত করার দাবি করা হয়েছিল।
ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্ব : পাকিস্তানের স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ছয় দফা বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা গোটা বাঙালির মুক্তি সনদ এবং বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত পদক্ষেপ। শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের হাতিয়ার হচ্ছে হয় দফা। এ আন্দোলন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাইকে নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এ ছয় দফা আন্দোলন পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । নিচে ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
প্রথমত, বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে ছয় দফা আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় ছয় দফা দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় ‘মুক্তির সনদ’।
দ্বিতীয়ত, ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাগ্রত বাঙালি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বায়ত্তশাসন অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। ড. মুহাম্মদ হান্নান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ছয় দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্মারক, যেখানে বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রাম নতুনভাবে গতি লাভ করেছিল।
তৃতীয়ত, ছয় দফা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সংগ্রামী শক্তি যোগায়। ছয় দফা কর্মসূচি। বাঙালিদের কাছে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও অবিচারের বিরুদ্ধে মুক্তি সনদ হিসেবে দেখা দেয়।
চতুর্থত, ছয় দফা আন্দোলন এর আগের আন্দোলনগুলোর তুলনায় অধিকতর গণমুখী ছিল। এতে সাধারণ মানুষও অধিক মাত্রায় অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া এ আন্দোলন জনগণের সংগ্রামী মনোভাবকে দৃঢ়তর করে।
পঞ্চমত, ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা প্রথমবারের মতো সরাসরি পাকিস্তানি কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে। সংগ্রামী জনতা পুলিশের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এভাবে ছয় দফা আন্দোলন প্রচ্ছন্নভাবে ভবিষ্যতে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার প্রেরণা যোগায়।
উপসংহার: পাকিস্তানি স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবির পটভূমিতে আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ছয় দফা দাবি ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক। ড. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনই পরবর্তীকালে একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। তাই যথার্থই বলা হয়ে থাকে, ছয় দফার মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।
আরও দেখুন: