ছন্দের সংজ্ঞার্থ

ছন্দের সংজ্ঞার্থ নিয়ে আজকের আলোচনা। সংস্কৃত ভাষায় ‘ছন্দ’ শব্দের এক অর্থ ‘কাব্যের মাত্রা’; আর এক অর্থ ‘ইচ্ছা’। তাই, ‘মাত্রা-নিয়মের যে বিচিত্রতায় কাব্যের ইচ্ছাটি বিশেষভাবে ধ্বনি-রূপময় হয়ে ওঠে, তাকেই বলে ছন্দ। ‘ “ছন্দ’ শব্দের ব্যাপক অর্থ ‘গতি-সৌন্দর্য’। গতিহীন সৌন্দর্য বা সৌন্দর্যহীন গতিকে ছন্দ বলা চলে না।

ছন্দের সংজ্ঞার্থ | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা

ছন্দের সংজ্ঞার্থ

গতি-সৌন্দর্য যেমন রূপগত, তেমনি ধ্বনিগতও বটে। রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করা হয় চোখে; আর ধ্বনি-সৌন্দর্য কানে। ছন্দের সংজ্ঞার্থ দান প্রসঙ্গে ছান্দসিকগণ বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যেমন : প্রখ্যাত ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেনের মতে, ‘শিল্পিত বাক্রীতির নামই ছন্দ।’

অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় বলেন, “যেভাবে পদবিন্যাস করিলে বাক্য শ্রুতিমধুর হয়, এবং মনে রসের সঞ্চার হয়; তাহাকে ছন্দ বলে।” এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “যদি ভাষায় উচ্চারণপদ্ধতি অব্যাহত রাখিয়া বিভিন্ন বাক্যাংশ সুস্পষ্ট আদর্শ অনুসারে যোজনা করা হয়, তবে সেখানে ছন্দ আছে বলা যাইতে পারে। ”

 

ছন্দের সংজ্ঞার্থ | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা

 

তারাপদ ভট্টাচার্যের মতে, “ভাষার অন্তর্গত প্রবহমান ধ্বনি-সৌন্দর্যই ছন্দ।” আব্দুল কাদিরের মতে, “শব্দের সুমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত রাণী-বিন্যাসকে বলা হয় ছন্দ।” ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাক্যস্থিত পদগুলিকে যেভাবে সাজাইলে বাক্যটী শ্রুতিমধুর হয় ও তাহার মধ্যে একটা কালগত ও ধ্বনিগত সুষমা উপলব্ধ হয়, পদ সাজাইবার সেই পদ্ধতিকে ছন্দ বলে।”

সুনীতিকুমারের সংজ্ঞার্থে ছন্দের বৈশিষ্ট্য প্রায় সবই ধরা পড়েছে। সুতরাং, যে পরিমিত পদবিন্যাস রীতিতে বাক্যের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করে ভাষাগত ধ্বনি-প্রবাহের সুসমঞ্জস, সঙ্গীতমধুর ও তরঙ্গঝঙ্কৃত ভঙ্গি রচনা করা হয়, সেই পরিমিত পদবিন্যাস রীতিকেই বলা হয় ছন্দ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পর্বই ছন্দের প্রধান উপাদান। এজন্যে বলা হয়, ধ্বনির সঙ্গে তার উচ্চারণগত সময়ের সামঞ্জস্য বিধানের নাম ছন্দ। ছন্দ চক্ষুগ্রাহ্য নয়, শ্রুতিগ্রাহ্য। এজন্যই ছন্দ -ধরা পড়ে তখনই, যখন কবিতা আবৃত্তি করা হয়।

সূত্র: ছন্দের সংজ্ঞার্থ | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা

আরও দেখুন:

Leave a Comment