Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

চা পান, চায়ের প্রকারভেদ প্রতিবেদন রচনা। Essay on Tea

চা রচনা । Essay on Tea । প্রতিবেদন রচনা

চা পান, চায়ের প্রকারভেদ [ Essay on Tea ] অথবা, চায়ের উপকারিতা- নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

 

চা পান রচনার ভূমিকা :

চা একটি অতি জনপ্রিয় পানীয়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের লােকই কম বেশি চা পান করে। চা আজকাল আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত হয়ে আছে। আমাদের দেশে হাটে বাজারে, আফসে আদালতে, দোকানে-বাড়িতে সর্বত্রই চায়ের সমাদর রয়েছে। ধনী-দরিদ্র, ছােট-বড় সকল শ্রেণীর সকল পেশার লােকের নিকট চা একটি প্রিয় পানীয়। চা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল।

চা পানের প্রচলন :

‘চা’ একটি চীনা শব্দ। চীন দেশেই প্রথম চা-এর উৎপত্তি ও প্রচলন শুরু হয়। চীন থেকে চা প্রথম ইউরােপে প্রসার লাভ করে । রােপীয়দের কাছ থেকে চা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। আমাদের এই উপমহাদেশে ইউরােপীয়রাই প্রথম চায়ের ব্যবহার প্রচলন করেন।

চা এর উৎপত্তিস্থান :

চায়ের উৎপত্তিস্থানের মধ্যে চীনের স্থান প্রথম। তাছাড়া ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সিংহল ও যুক্তরাষ্ট্রে চা উৎপন্ন হয়। ভারতের দার্জিলিং-এর চা অতি উৎকৃষ্ট শ্রেণীর। বাংলাদেশে সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রামে প্রচুর চা জন্মে। বাংলাদেশ প্রতিবছর চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। পৃথিবীতে চা উৎপাদনে চীনের পরেই ভারতের স্থান।

চা উৎপাদন বা চাষ প্রণালী :

পাহাড়ি উঁচু ঢালু থান চা চাষের জন্য উপযুক্ত। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের স্থানে চায়ের চাষ হয়। কিন্তু চা গাছের গােড়ায় পানি জমে থাকলে চা গাছ বাঁচে না। চা উৎপাদন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এতে বিস্তীর্ণ জমি ও অসংখ্য শ্রমিক লাগে। প্রথমে বীজতলায় চা চারা তৈরি হয়। পরে ঢালু জমিতে চারা গাছগুলাে সারিবদ্ধভাবে রােপণ করা হয়। চারা গাছগুলাে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। চা গাছের বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যা প্রয়ােজন। চায়ের জমিকে আগাছা ও পােকামাকড় থেকে রক্ষা করতে হয়। চা গাছের বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যা প্রয়ােজন। চায়ের জমিকে আগাছা ও পােকামাকড় থেকে রক্ষা করতে হয়। চা গাছগুলাে চার পাঁচ ফুট উচু হলেই হেঁটে দিতে হয়। এর ফলে গাছগুলো ঝােপের আকার ধারণ করেও প্রচুর কচি পাতা জন্মে।

চা সংগ্রহ :

সাধারণত বছরে চারবার চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। বাগান থেকে চা পাতা সংগ্রহ করা খুবই আনন্দদায়ক। স্ত্রী-পুরুষ দল বেঁধে পিঠে ঝুড়ি নিয়ে আনন্দের সঙ্গে পাতা সংগ্রহ করে থাকে। প্রথমবার চা পাতা তােলা হয় এপ্রিল মাসে। এ সময়ে তােলা কচি পাতা থেকে উৎকৃষ্টমানের চা হয়ে থাকে। মে মাসে দ্বিতীয়বার এবং সাধারণত জুন ও আগস্ট মাসে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থবার চা পাতা সংগ্রহ করা হয়।

দুটি পাতা একটি কুঁড়ি, এই হচ্ছে চা পাতা সংগ্রহের সাধারণ নিয়ম। সংগৃহীত পাতাগুলােকে তিনভাগে ভাগ করা হয়; কচি পাতা, ছােট পাতা ও বড় পাতা। কচি পাতাহ ডকৃষ্ট চা। একে বলা হয় ‘পিকো’। ছােট পাতাকে বলে ‘সাউচং’ আর বড় পাতাকে বলে ‘ কম্পু’। কম্পু পাতা থেকে বাজারের নিকৃষ্ট ধরনের চা তৈরি হয়।

চা পাতাগুলাে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে টুকরাে করে কেটে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রিক চুল্লিতে শুকানাে হয়। পরে মেশিনের সাহায্যে গুঁড়া করে গুদাম ঘরে ফেলে রাখা হয়। কিছুদিন পরে চালুনি দ্বারা ছেঁকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্যাকিং করে বিক্রয়ের জন্যে বাজারে ছাড়া হয় ও বিদেশে রপ্তানির জন্যে তৈরি করা হয়।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

চা প্রস্তুত প্রণালী :

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উপায়ে পানীয় চা তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে প্রথমে কেটলিতে পরিমিত পানি গরম করে সেই পানিত নির্দিষ্ট অনপাতে চা পাতা দিয়ে আবার কিছু সময় জাল দিতে হয়। ফুটন্ত পানিতে চা পাতার রস বের হয়ে পানিরে রং লালচে হলে সেই কেটলি থেকে চা ছেঁকে পাত্রে ঢালতে হয়। তারপর সে সঙ্গে দুধ আর চিনি মিশিয়ে চায়ের কাপে করে পরিবেশন করতে হয়। দুধ না মিশিয়ে লেবুর রস বা আদা কুচি দিয়েও চা তৈরি করা হয়ে থাকে। জাপানিরা দুধ-চিনি না দিয়ে লেবুর রস দিয়ে চা পান করে।

চা এর উপকারিতা :

চা একটি সুস্বাদু পানীয় বলে বিবেচিত। চা পান করলে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর হয়ে থাকে; দেহ ও মনে সাময়িকভাবে শক্তি ও উৎসাহ জাগে। রাত জেগে কাজ করতে চা স্বস্তি যােগায়। সর্দি-কাশিতে আদার রস মাশয়ে চা পান করলে বিশেষ উপকার হয়। চা আলস্য ও ক্লান্তি দূর করে। বিজ্ঞানীরা বলতে চান, চা ক্যান্সার প্রতিরােধ করে। দতের জন্যেও চা উপকারী। তাছাড়া নিয়মিত ও পরিমিত চা পানে ম্যালেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।। চা একটি উত্তেজক পদার্থ, কিন্তু এতে মাদকতা নেই।

চা এর অপকারিতা :

চায়ের কিছু অপকারিতাও আছে। অতিরিক্ত চা পান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চা পানে ক্ষুধা মন্দা, অজীর্ণ, অনিদ্রা প্রভৃতি রােগ দেখা দিতে পারে। অধিক পরিমাণে চা পান করলে তা একরকম নেশায় পরিণত হয়ে যায়। ছােটদের চা পান করা উচিত নয়।

উপসংহার :

চা একটি সস্তা ও অভিজাত পানীয়। বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে চা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে চা পান ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে। বাংলাদেশে দেড় শতাধিক চা বাগানে অসংখ্য শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছে। এ সকল কারণে আমাদের চা। চাষের প্রতি আরাে যত্নবান হওয়া উচিত। উন্নতমানের চা চাষের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারেরও আরাে তৎপর হওয়া দরকার।

Exit mobile version