গ্রন্থাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

গ্রন্থাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা এই অঞ্চলে গত কয়েক বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে অনেক। মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে, দোকান-পাটের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু এত সব উন্নয়ন সত্ত্বেও একটি গ্রন্থাগারের অভাব আমরা দীর্ঘদিন অনুভব করেছি। আজ স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী নাগরিকদের আগ্রহে এবং নিরলস পরিশ্রমে গ্রন্থাগারের শুভ উদ্বোধন ঘটল। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আমি নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। সুধীবৃন্দ, যে কোনো মহৎ কাজের পেছনে থাকে আদর্শ এবং অনুপ্রেরণা। যেসব আদর্শবাদী যুবকের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হল, এ এলাকার মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের স্মরণ করবেন গ্রন্থাগারে বন্দি থাকে মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-ধারণা।

গ্রন্থাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ

 

গ্রন্থাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ

 

মাননীয় সভাপতি, উপস্থিত সুধীমণ্ডলী,

সেখানে পুথির লেখায় মানুষকে চিরঞ্জীব করে এবং যুগ- যুগান্তরের চিন্তাকে বন্দি করে রাখে। এটা মানুষের বন্দনার প্রয়াস। মানুষ এখানে সুখী ও তৃপ্ত। পুথির অমূল্য উপকরণগুলো এই সুখ ও তৃপ্তির সিংহদ্বার উন্মুক্ত করে। মানুষ তাই বিভিন্ন পুথি এবং বই সংগ্রহ করে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে। এ গ্রন্থাগার গঠনের মধ্য দিয়ে সে তার অমৃত পিপাসাকে উদ্বুদ্ধ করে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যেন সে ঘুমন্ত শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত। তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই কারাগারের তুলনা হইত।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে।” সুধী, আমাদের স্বাধীন দেশে শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ ক্রমে উপলদ্ধি করছে, কেবল ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্যই খাদ্যের দরকার নয়, মনেরও খাদ্য দরকার। গ্রন্থাগার পারে ক্লান্ত, বুভুক্ষ মানুষের মনকে প্রফুল্ল করতে, তাকে পছন্দমাফিক জিনিসের সন্ধান দিয়ে তার মনের খোরাক জোগাতে। এদিকে দেহের খাদ্যের বেলায় যেমন জনে জনে পার্থক্য ও রুচিভেদ, মনের খাদ্যের বেলায়ও অনুরূপ।

কেউ কবিতার বই পড়তে ভালোবাসেন, আবার কেউবা গল্প-উপন্যাস, কেউ নাটক পেলে অন্যকিছু চান না, কেউ কেউ আবার ভ্রমণকাহিনী ভালোবাসেন। এছাড়া, কারো প্রিয় দর্শন, কারো বা ইতিহাস, কেউ খোঁজেন লোকপ্রশাসন বিষয়ক বই, আবার কেউ কেউ পদার্থ, রসায়ন বা প্রাণিবিজ্ঞান। কেউ কেউ দেশের ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে নতুন তথ্য খুঁজে বের করবেন বলে অনুসন্ধিৎসু। তাঁরা দলিল-দস্তাবেজ, বিবর্ণ প্রাচীন পুঁথি এবং অতীত যুগের পত্রিকা ইত্যাদি থেকে বের করেন নিজের চাহিদার খোরাক।

 

গ্রন্থাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ

 

তাই গ্রন্থাগারের নানাবিধ সংগ্রহে সমাজের মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। সুধীবৃন্দ, আজ যদিও আপনাদের এই গ্রন্থাগারের স্থান সংকীর্ণ, তবু অল্প কয়েকজনের জন্য হলেও বসে পড়বার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পাঠগৃহে গড়ে উঠবে সংস্কৃতিমান মানুষের মিলন-তীর্থ। আজ গ্রন্থাগারের সাধ্য সীমিত, পুস্তকসংখ্যা সীমিত, তবু বিশ্বাস করি, স্থানীয় জ্ঞানার্থী মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতায় এই গ্রন্থাগার সংকীর্ণ সীমাকে অতিক্রম করে বিশ্ব-মনীষার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই অনাগত ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে স্বাগত জানাই। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ

আরও দেখুন:

Leave a Comment