গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , যে গদ্য এবং কবিতার অংশটুকু ব্যবহার করে ভাবের সম্প্রসারণ করতে হবে সেই অংশটুকু অবশ্যই বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে বুঝে নিতে হবে সে অংশটিতে কি বোঝাতে চেয়েছেন। আর এজন্য লেখোকের অর্থবহ রচনা মূল্যবান, কবিতার পঙক্তি এবং ভাবের প্রবাদ যা বুঝাতে চেয়েছি তার সঠিক মর্ম টা দিয়ে ভাব সম্প্রসারণ করতে হয়।

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন

যে-বিদ্যা মানুষের কাজে লাগে, যে-বিদ্যার ব্যবহারিক প্রয়োজন রয়েছে সে-বিদ্যা সার্থক। যে- জ্ঞান বা বিদ্যা মানুষের কোনো কাজে আসে না এবং শুধু পুস্তকেই সীমাবদ্ধ থাকে সে-জ্ঞান বা বিদ্যার কোনোপ্রয়োজন নেই। বস্তুত গ্রন্থসর্বস্ব বা কেতাবি বিদ্যা মানুষের কোনো প্রয়োজনে আসে না। বিদ্যা এবং ধনের সার্থকতা নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর ওপর। পার্থিব জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রন্থ বা বইপুস্তক পাঠের মাধ্যমে আমরা সাধারণত বিদ্যার্জন তথা জ্ঞানলাভ করে থাকি। কিন্তু শুধু পুথিগত জ্ঞানলাভ করলে শিক্ষা সমাপ্ত হয় না।

 

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন

 

বইয়ে যে বিদ্যা সঞ্চিত থাকে মানুষ চর্চার মাধ্যমে তাকে আত্মস্থ করে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। গ্রন্থপাঠ থেকে অর্জিত বিদ্যা যদি আমরা আমাদের ব্যবহারিক জীবনে যথার্থ কাজে লাগাতে না পারি, তার যদি প্রয়োগমুখিতা না থাকে, তাহলে সে বিদ্যা বা জ্ঞান মূল্যহীন, নিরর্থক। সে বিদ্যাকে পরের হাতের ধন-সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা যায়। অপরের অধিকৃত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই, কারণ প্রয়োজনে তা আমরা ব্যবহার করতে পারি না। ফলে সে সম্পদ যেমন আমাদের কাছে মূল্যহীন, তেমনি চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেও যদি আমরা রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিতে না পারি অথবা আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে যদি প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে আমাদের সে বিদ্যাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ প্রসঙ্গে চাণক্য পণ্ডিতের মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য, ‘পুঁথিতে যে বিদ্যা থাকে আর পরের হাতে যে ধন থাকে দুটিই সমান। দরকারের সময় সে বিদ্যা বিদ্যা নয়। সে ধন ধন নয়।’ তা ছাড়া, যে-জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কোনো কাজে আসে না, সে-জ্ঞান দ্বারা নিজেরও যেমন কোনো উপকার হয় না, তেমনি জগতেরও কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে বুদ্ধি দ্বারা আত্মস্থ করে বাস্তবের সঙ্গে সংযোগ করা দরকার এবং ধন-সম্পত্তি অন্যের কাছে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ত্তে রাখা দরকার, যেন প্রয়োজনের সময় নিজের কাজে লাগানো যায় এবং দেশ ও দশের মঙ্গলে বা স্বার্থে সাহায্য করা যায়।

 

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন

 

হয় নি এবং অন্যের ধন যা স্বীয় করায়ত্ত হয় নি গ্রন্থগত বিদ্যা যা আত্মস্থ করা হয় নি এবং অন্যের ধন যা স্বীয় করায়ত্ত হয় নি— এ সবই নিরর্থক। কারণ প্রয়োজনের মুহূর্তে এগুলো যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। প্রকৃতপক্ষে যে-বিষয়টি আত্মস্থ করা যায় না, অধিকারে ও ব্যবহারে আনা যায় না তা যতই সমৃদ্ধ হোক তাতে মানুষের কোনো উপকার হয় না ৷

আরও দেখুন:

Leave a Comment