Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনারে একটি খসড়া ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

বই মেলা | উৎসব লোকাচার লোকশিল্প | বাংলা রচনা সম্ভার

বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনারে একটি খসড়া ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা , ‘বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে তোমাকে কিছু বলতে হবে। তুমি যা বলতে চাও, তার একটি খসড়া ভাষণ তৈরি ।

বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনারে একটি খসড়া ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

আজকের আয়োজিত ‘বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, এবং সুপ্রিয় সুধীবৃন্দ- আস্সালামু আলাইকুম। ‘বৃক্ষ নেই, প্রাণের অস্তিত্ব নেই, বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান।’ অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুময় নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী। আর এ পৃথিবীকে সবুজে-শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রাণপ্রদায়ী বৃক্ষরাজি। এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। আবার মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করে বৃক্ষ। বৃক্ষই মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন।

 

 

তাই বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমাকে কিছু বলার সুযোগ প্রদানের জন্য আজকের সেমিনারের আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিদায় সুপ্রিয় বন্ধুগণ, বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত। তাই বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। সে আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা— এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণে যেমন সহায়তা করে তেমনি তার সৌন্দর্যে আমাদের হৃদয়-মন হয়ে ওঠে আপ্লুত।

বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৃক্ষই আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বৃক্ষের উপকারী দিকগুলো বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু। অকৃপণ তার দান। পৃথিবী থেকে বিষাক্ত কার্বনডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে এবং অক্সিজেন দিয়ে এই বৃক্ষই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। বৃক্ষ থেকেই আমরা নানারকম ভেষজ ওষুধ, মোম, মধু, রবার, রজন, কুইনাইন ইত্যাদি পেয়ে থাকি। সুধী, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, গাছপালা দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।

 

 

বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে আবহাওয়াকে শীতল করে ও প্রচুর বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে। তাছাড়া উদ্ভিদরাজি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক উৎপাদনে সাহায্য করে। এমনকি এই গাছপালাই মূল ভূ- ভাগ ও নতুন সৃষ্ট চরাঞ্চলকে নদীর ভাঙন, বৃষ্টিপাত ও জল-স্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে। এতে মাটিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। সর্বোপরি বৃক্ষ ঝড়-ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাসগৃহকে রক্ষা করে। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় যে, বৃক্ষের এতসব উপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞতার কারণে এবং সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের মানুষ নির্দ্বিধায় গাছপালা কেটে সম্পূর্ণ বন উজাড় করে ফেলছে।

সুধীবৃন্দ, বলা বাহুল্য যে, একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যে মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের দেশে মোট ভূমির মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমি রয়েছে যা দেশের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাই ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশে সময়মতো বৃষ্টিপাত হচ্ছে না এবং অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, প্রচণ্ড খরা ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বপরিবেশে দেখা দিয়েছে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া। বিজ্ঞানীদের ধারণা ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়ে বারমুডার মতো অনেক দেশ সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যাবে, আর বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবে যাবে। বিশ্বপরিবেশ আজ বিপর্যস্ত ও হুমকির সম্মুখীন।

তাই বেদনার্ত হয়ে কবিকণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়-‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’ সুধী, এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? এ নিয়ে গবেষণা চলছে। বিশেষজ্ঞগণ তাদের মূল্যবান পরামর্শও দিচ্ছেন। যে গাছের ফল আমরা খাই, সে গাছ আমাদের পূর্বপুরুষেরা লাগিয়ে গেছেন। যে গাছ ছায়া দেয়, চোখ জুড়ায়— তা অন্যের লাগানো। এই দৃষ্টান্ত দেখে কি আমরা দায়িত্ব সচেতন হবো না? হাতের কাছেই নার্সারি। কখনো ফেরিওয়ালার ঝাঁকাতেও গাছের চারা আমাদের গৃহাঙ্গনে আসে। প্রত্যেকের বাড়িতে কিছু-না-কিছু জায়গা আছে।

 

 

আগ্রহশীল সচেতন নাগরিক তার সদ্ব্যবহার করবেন— এ আশা করতে দোষ কোথায়? বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া, তৃপ্তির সঙ্গে ফল খাওয়া, সৌন্দর্যে চোখ জুড়ানো— সবই সম্ভব যদি আমরা সবাই গাছ লাগাই। বাড়ির চারপাশ, নদীর কিনার, রাস্তার দুপাশ, পাহাড়ের ঢালে, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। একটি গাছ কাটলে দুটি লাগানোর মনমানসিকতা তৈরি হতে হবে সকলের মাঝে। গাছ কেটে কাঠ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। স্বল্পমূল্যে, প্রয়োজনে বিনামূল্যে জনগণের মাঝে চারা বিতরণ করতে হবে। ঘন ঘন বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করতে হবে। বৃক্ষরোপণ কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।

গাছের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। শুধু বৃক্ষ রোপণ করেই দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘটানো যাবে না, বরং এর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বৃক্ষ ও মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন রচনা করতে হবে। বৃক্ষ রক্ষা মানে নিজেদের জীবনকে রক্ষা করা। তাই বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার জন্যে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। বৃক্ষরোপণে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্যে রেডিও টেলিভিশন, মিনিপর্দা, মাইকে প্রচার, পোস্টার বিলি, সভা-সমিতি প্রভৃতি কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। আশার কথা যে, বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার জন্যে বর্তমান সরকার বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে এই অভিযানকে সফল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই একটি সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্যে সকলকে এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত যে,

‘লাগাব বৃক্ষ, তাড়াব দুঃখ চলো সবাই গাছ লাগাই,

না হয় জীবন রক্ষা নাই। ‘

ধন্যবাদ সবাইকে।

আরও দেখুন:

Exit mobile version