Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

ক্রিকেট খেলা, ক্রিকেট খেলার নিয়ম প্রতিবেদন রচনা। Essay on Cricket game

ক্রিকেট খেলা, ক্রিকেট খেলার নিয়ম[ Essay on Cricket game  ] অথবা, ক্রিকেট খেলার নিয়ম- নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

 

ক্রিকেট খেলা রচনার ভূমিকা :

ক্রিকেটকে বলা হয় ‘ খেলার রাজা ‘ । Glorious uncertainty বা ‘ গৌরবময় অনিশ্চয়তা’র খেলা হিসেবে ক্রিকেট আজকের দুনিয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । বিশেষ করে ব্রিটিশ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে । বাংলাদেশও ক্রিকেট বিশ্বে গৌরবজনক পদযাত্রা শুরু করেছে । আমাদের দেশেও ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী ।

জন্মকথা :

ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে । আঠারো শতকের দিকে ইংল্যান্ডেই ক্রিকেট খেলার রীতিনীতি গড়ে ওঠে এবং প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে এটি স্বীকৃতি লাভ করেছে । ব্রিটেনের আয়েশী লোকজনের দীর্ঘ অবসর কাটানোর খেয়ালি প্রয়াসে ক্রিকেটের জন্ম হয়েছে। উনিশ শতকে বিশ্বের বিভিন্ন ব্রিটিশ উপনিবেশে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

ক্রিকেট খেলার উপকরণ :

দুটি দলের ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় । প্রতি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে । এ খেলায় মাঠ, ক্রিজ, স্ট্যাম্প , বল , ব্যাট , গ্লাভস প্রভৃতি উপকরণ অত্যাবশ্যক ।

খেলার নিয়ম :

মাঠের মাঝখানে বাইশ গজ দূরত্বে তিনটি করে কাঠের দণ্ড পৌতা হয় । এগুলোকে বলা হয় স্ট্যাম্প । বোলার ছোট শক্ত বল স্ট্যাম্প লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে । স্ট্যাম্প আগলে কাঠের ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটসম্যান ছুটে আসা বলকে ব্যাটের আঘাতে দূরে ঠেলে দেয় ।

মাঠে ছড়িয়ে থাকা ফিল্ডারদের হাত ঘুরে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানার আগে দু ‘ ব্যাটসম্যান যতবার প্রান্ত বদল করে ততটা রান ব্যাট হাতে নামা দলের খাতায় যোগ হয় । বল যদি গড়িয়ে সীমানা রশি পার হয় তাহলে বাউন্ডারি বা ৪ রান ও শূন্যে ভেসে সীমানা পার হলে ওভার বাউন্ডারি বা ৬ রান সংগৃহীত হয় ।

খেলা শুরুর আগে টস হয় । টসে জয়ী দল সিদ্ধান্ত নেয় কারা আগে ব্যাট করবে । ব্যাটের স্পর্শ পেয়ে বল যদি শূন্যে উঠে এবং মাটিতে পড়ার আগেই ফিল্ডাররা ধরে ফেলে তাহলে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে প্যাভেলিয়নে ফিরে আসে । এভাবে ১০ জন খেলোয়াড় আউট হলে ব্যাটকারী দলের ইনিংস বা পালা শেষ হয় ।

বল ব্যাট ছুঁয়ে বা সরাসরি স্ট্যাম্পের বেল ফেলে দিলে ব্যাটসম্যান বোল্ড আউট হয় । আবার প্রান্ত বদলের সময় প্রান্তসীমা স্পর্শ করার আগেই ফিল্ডাররা যদি স্ট্যাম্প ভেঙে দিতে পারে তাহলে ব্যাটসম্যান রান আউট হয় ।

তাছাড়া স্ট্যাম্প লেগ বিফোর উইকেট হয়েও ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় । একজন বোলার একসাথে পর পর ৬ টি করে বল ছুঁড়ে থাকে এই ছয়টি বলের সমষ্টির নাম হলো ওভার । যার বলে ব্যাটসম্যান আউট হয় সেই বোলার ব্যাটসম্যানের উইকেট লাভ করবে ।

ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ :

পৃথিবীতে অনেক দেশেই ক্রিকেট খেলা হয় । তবে ক্রিকেটে পরিপূর্ণ দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য এ পর্যন্ত ১০ টি দেশ টেস্ট প্লেয়িং নেশন স্ট্যাটাস লাভ করেছে । দেশগুলো হলো — ইংল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া , ভারত , পাকিস্তান , শ্রীলঙ্কা , নিউজিল্যান্ড , জিম্বাবুয়ে , দক্ষিণ আফ্রিকা , ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ ।

সাম্প্রতিককালে কেনিয়া , মালয়েশিয়া , কানাডা , যুক্তরাষ্ট্র , ডেনমার্ক , স্কটল্যান্ড , হল্যান্ড , আয়ারল্যান্ড , আরব আমিরাত , নেপাল , হংকং প্রভৃতি দেশেও ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।

ক্রিকেট ম্যাচের প্রকার:

মাত্র ২৫ বছর আগে ক্রিকেট খেলা বলতে টেস্ট ম্যাচকেই বোঝাতো । এখনো টেস্ট ম্যাচ খেলা হয় । তবে বর্তমানে ওয়ানডে ম্যাচ বা একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করছে । টেস্ট ম্যাচ খেলা হয় ৫ দিন ধরে । এ ম্যাচে প্রতিটি দল দুবার করে ব্যাট করার সুযোগ পায় ।

ওয়ানডে ম্যাচের ফলাফল নিষ্পত্তি হয় একদিনেই । দুটি দল সাধারণভাবে ৫০ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় । তবে ওভার সংখ্যা কমবেশি হতে পারে । প্রথমে যে দল ব্যাট করে তাদের রান সংখ্যা অতিক্রমই হয় পরবর্তীতে ব্যাট করতে আসা দলের লক্ষ্য।

ক্রিকেটের বিশ্বকাপ :

বিশ্বকাপ ক্রিকেট বলতে একদিনের ম্যাচের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাকেই বোঝায় । ১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম ক্রিকেটের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় । তার মাত্র কিছুদিন আগে নাটকীয় ঘটনায় একদিনের ক্রিকেট ম্যাচের জন্ম হয় । অস্ট্রেলিয়া সফরে আসা ইংল্যান্ড দলের সাথে মেলবোর্ন টেস্ট ম্যাচের চারদিন বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় ।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমিত ওভারের খেলায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হয় । বিশেষভাবে দর্শকদের হতাশার কথা ভেবেই এ ধরনের ম্যাচের চিন্তাভাবনা করা হয় । ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে ।

সীমিত ওভারের প্রথম ম্যাচেই দর্শকরা প্রভূত আনন্দ লাভ করে এবং ক্রিকেটের গতিশীল প্রকৃতি লক্ষণীয় হয়ে ওঠে । পরবর্তীতে আইসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রচলন শুরু হয় । প্রতি চার বছর অন্তর ক্রিকেটের বিশ্বকাপ হচ্ছে । বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ প্রচলনের চিন্তাভাবনা চলছে ।

১৯৯৯ -তে সর্বপ্রথম এশীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ অনুষ্ঠিত হয় । ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে । ২০০২ সালে এশীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা । বর্ণবৈষম্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণ থেকে বহিষ্কৃত থাকার কারণে প্রথম চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারে নি ।

১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে এবং পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে ।

ক্রিকেটের বিশ্বায়ন :

ক্রিকেটের বিশ্ব সংস্থা আইসিসি বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট খেলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে । উদ্যোগকে বলা হয় ক্রিকেটের বিশ্বায়ন । এর ফলে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মহাদেশেই ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে । সাম্প্রতিককালে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে গৌরবময় অভ্যুত্থান সূচিত হয়েছে তার ফলে এদেশে ক্রিকেট আরও জনপ্রিয় হবে ।

উপসংহার :

ক্রিকেট খেলার আভিজাত্য ও মার্জিত অন্যান্য খেলা থেকে একে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে । একদিনের ম্যাচের কল্যাণে ক্রিকেটে গতিশীলতা এসেছে । ফলে সারাবিশ্বে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

Exit mobile version