কাব্য সাহিত্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

কাব্য সাহিত্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা: এরূপ প্রসিদ্ধি আছে যে, আদিকবি বাল্মীকির ক্রৌঞ্চমিথুন বিয়োগজনিত শোকই শ্লোকরূপে : উৎসারিত হয়েছিল। সহচরী বিয়োগকাতর ক্রৌঞ্চের বেদনায় কবির চিত্তে বেদনার সঞ্চার হয়। এ বেদনা থেকেই সহসা ‘পরিপূর্ণ বাণীর সঙ্গীত’ অনুগ্রহণ করে অপূর্ব ছন্দে কবিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল :

“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগতঃ শাশ্বতী সমাঃ

যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেক মবধীঃ কামমোহিতম্৷৷”

কাব্য সাহিত্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

কাব্য সাহিত্য

কবির এ বেদনাবোধ স্বকীয় দুঃখসন্তপ্ত চিত্তের অবস্থা নয়; এর মধ্যে তদগত চিত্তের আত্মপ্রকাশের আনন্দ-বেদনা আছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, কবির বেদনাবিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি। অর্থাৎ সময় বিশেষে কোনো একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ-বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্য। কবির কল্পনা মাধুর্যে এ বেদনাই সুন্দর হয়ে ওঠে। 

 

কাব্যসাহিত্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

 

মোটকথা বাইরের জগতের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দ বা আপন মনের ভাবনা-বেদনা ও কল্পনাকে যে লেখক অনুভূতি স্নিগ্ধ ছন্দোবদ্ধ তনুশ্রী দান করতে পারেন, তাকেই আমরা কবি নামে বিশেষিত করি। কবি কে? : অনেকে বলেন, যিনি জগতের একখানি যথাযথ স্বাভাবিক চিত্রপট এঁকে দিতে পারেন, তিনিই যথার্থ কবি।

অর্থাৎ কবি জগতের ভালোমন্দের যথাযথ চিত্র অঙ্কিত করেন। যারা বাস্তব সাহিত্যপ্রিয় এবং যারা কবি কল্পনার দ্বারা প্রবঞ্চিত হতে চান না, তারা এরূপ মত পোষণ করে থাকেন। কিন্তু কাব্যাদর্শ বাস্তবাদর্শ থেকে ভিন্ন, এটা ভুললে চলবে না। কাব্যের জগৎ বাস্তব জগতের যথাযথ চিত্র নয়, বরং এটি এক প্রকার স্বপ্রতিষ্ঠ, স্বয়ঙ্কুশ, অখণ্ড জগৎ। সুতরাং একজন কবির দৃষ্টি ও কল্পনাশক্তি তার কাব্যসৃষ্টির মূল ভিত্তি।

কবিতা কাকে বলে : এক কথায় কিংবা অল্প কথায় কবিতার সংজ্ঞা প্রদান করা বেশ কঠিন কাজ। অনেকে কবিতার অনেক রকম সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেছেন । অপরিহার্য শব্দের অবশ্যম্ভাবী বাণীবিন্যাসকে কবিতা বলে। এখানে ‘শব্দ’ বলতে ভাবকল্পনা ও অর্থব্যঞ্জনার বাহনকে বোঝায়।

পণ্ডিত কালিদাস বলেন, বাগার্থিব সম্পৃক্তো শব্দই জ্ঞানের একমাত্র প্রকাশক । অসংখ্য শব্দ যখন কবির লেখনী মুখে ভিড় করে, তন্নধ্যে একটিমাত্র যথাযথ শব্দই কবিতায় ব্যবহার উপযোগী অপরিহার্য শব্দ। আর এ জাতীয় শব্দ লেখকের কল্পনা বা অনুভূতি স্নিগ্ধ থেকে স্বতঃউৎসারিত বলে ভাবপ্রকাশের পক্ষে এটি একান্ত উপযোগী। আবার এ শব্দকে রসাত্মক বাণীমূর্তি দান করার জন্য কবি বস্তুগত উপাদানের উপরে কল্পনার দীপ্তি প্রতিফলিত করেন। সুতরাং দেখা যায় যে, কবির মনের ভাবনাকল্পনা যখন অনুভূতিরঞ্জিত যথাবিহিত শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামণ্ডিত চিত্রাত্মক ও ছন্দোময় রূপ লাভ করে, তখনই তা হয়ে ওঠে কবিতা ।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,

অন্তর হতে আহরি বচন,

আনন্দলোক করি বিরচন

গীতরসধারা করি সিন

সংসার ধূলিজালে ।

 

রবীন্দ্রনাথের উক্তি থেকে উপলব্ধি হয় যে, কবি নিজের অন্তর থেকে বচন, কথা বা শব্দসম্ভার সংগ্রহ করে আনন্দলোক সৃষ্টি করেন। সংসারের অভাব, অভিযোগ, দুঃখ-দৈন্য, কুশ্রীতা প্রভৃতির উপর গীতরস সিঞ্চন করে সেগুলোকে আরো উজ্জ্বল করে তোলেন। নিচে কবিতার কতিপয় উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত সংজ্ঞা দেয়া হলো :

১. “Best words in the best order.”- Coleridge

২. “Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings.” Wordsworth.

৩. “Poetry is the nascent self-conciousness of man, not as an individual but as a sharer with others of a whole word of common emotion.”-Caudwell. 

৪. শব্দার্থে সহিতো কাব্যং ।

৫. কাব্যলক্ষ্মীর সঙ্গে আত্মার রতিসুখ-সম্ভোগকালে রস-মূর্ছিত মানবের দিব্যভাগবিধুর গদগদ ভাব।

-মোহিতলাল মজুমদার।

মোটকথা কবি কল্পনার বিভিন্ন ভাবসমূহ যখন রসময়, ছন্দময় হয়ে বাণীবদ্ধ হয় তখন তাকে কবিতা বলে।

কবিতার উদ্দেশ্য: কবিতা নিরাভরণ নয়। নারী যেমন আকার-ইঙ্গিতে, সাজসজ্জায়, বিলাসে-প্রসাধনে নিজেকে মনোরমা করে তোলে, কবিতাও তেমনি শব্দে, সঙ্গীতে, উপমায়, চিত্রে ও অনুভূতিতে নিবিড়তায় নিজেকে প্রকাশিত করে। নীতিপ্রচার, শিক্ষাদান ও রাজনীতি বা সমাজনীতি প্রচার কাব্যের উদ্দেশ্য নয় । জীবনের সুখ-দুঃখ, পাপ-পুণ্য, ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ প্রভৃতি যে কোনো বিষয়ই কাব্যের উপাদান বা অঙ্গ হিসেবে গৃহীত হতে পারে।

কিন্তু এরা যেন কাব্যাত্মার দেহমাত্র। এ প্রসঙ্গে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাব্যের উদ্দেশ্য নীতিজ্ঞান নহে কবিরা জগতের শিক্ষানাতা কিন্তু নীতি ব্যাখ্যার দ্বারা তাঁহারা শিক্ষা দেন না। তাঁহারা সৌন্দর্যের চরমোৎকর্ষ সৃজনের দ্বারা জগতের চিত্তশুদ্ধি বিধান করেন।” সুতরাং দেখা যায় যে, কাব্যের উদ্দেশ্য জগৎ ও জীবনের রহস্যকে সুন্দর করে, রসস্লিপ্ত করে উপস্থাপন করা। এজন্য একজন কবির নিকট সৌন্দর্যই পরম সত্যরূপে পরিগণিত এবং যা কল্পনায় তিনি সত্য বলে প্রত্যক্ষ করেন, তাই সুন্দর। এ সৌন্দর্য সৃষ্টিই কাব্যের উদ্দেশ্য।

গদ্য ও পদ্যের মধ্যে পার্থক্য : গদ্য ও পদ্য উভয়ই সাহিত্যের বাহন। সাধারণত কবিতা পদ্যেই লেখা হয়। মূলত গদ্য ও পদ্যের মধ্যে কোনো বিভিন্নতা আছে বলে অনেকে স্বীকার করতে চান না। Wordsworth তার Lyrical Ballads-এর ভূমিকায় বলেছেন, গদ্য ও পদ্যের মধ্যে মূলত কোনো প্রভেদ নেই এবং শেলিও গদ্য ও পদ্যের মধ্যে বিভেদকে অসমীচীন মনে করতেন।

অবশ্য দার্শনিক হেগেলের মতো আমরা বলতে চাই না যে, ছন্দই কবিতার অপরিহার্য অঙ্গ। ছন্দ না থাকলেও শুধু তাল বা লয় কাব্যদেহকে সৌন্দর্যে লীলায়িত করতে পারে। তবে এ কথা সত্য যে, সাহিত্যে গদ্য ও পদ্যের বিভেদ স্বীকার করা হয়েছে। ইংরেজি কবি কোলরিজ গদ্য ও পদ্যের পার্থক্য নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেন যে, “শব্দের সুনিয়ন্ত্রিত বিন্যাসই গদ্য এবং যথোপযোগী শব্দের অবশ্যম্ভাবী বিন্যাসই পন্য।

“গদ্য মানুষের ভাবনাচিন্তার সুনির্বাচিত ব্রহ্মনিষ্ঠ প্রকাশ, পদ্য ভাষার অতীত ব্যঞ্জনাত্মক প্রকাশ। গদ্য বলে, তাই বলে, পদ্য যা বলে তার বেশি বোঝায়। বর্ষার দিনে আকাশে সঞ্চরণশীল মেঘমালার সৌন্দর্য দেখে যদি বলা হয়—ঘন বরষায় মেঘ গর্জন করে—এটি গদ্য। এখানে মনের কথাটি সাধারণ ভাষাচিত্রে রূপ লাভ করেছে। কিন্তু যদি বলা হয়—গগনে মেঘ গরজে ঘন বরষায়—এটি হয়ে গেল পদ্য । এখানে একটি সুরের মূর্ছনা রয়েছে এবং তা আমাদের মনকে উন্মনা করে তোলে ।

কবি ও বৈজ্ঞানিকের পার্থক্য : বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় “কাব্য গড়ে বিজ্ঞান ভাঙ্গে।” এ কথাটিতে কবি বৈজ্ঞানিকের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। কবি ও বৈজ্ঞানিক উভয়েই সত্যের উপাসক। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সাহায্যে বাস্তব সত্যের অনুসন্ধান করেন। কবি তার অনুভূতি ও অন্তদৃষ্টি দিয়ে সত্যকে খুঁজে পান। তাই বলা যায়, বৈজ্ঞানিকের দৃষ্টি তন্ময় দৃষ্টি আর কাবর দৃপ্ত মনু দৃষ্টি ভবন। সত্য নিষ্ঠুর হলেও বৈজ্ঞানিক তাকে নির্বিকারভাবে গ্রহণ করেন, কবি সেখানে সত্যকে সুন্দর করে গ্রহণ করেন। বৈজ্ঞানিকের সত্য যখন লেখকের ব্যক্তিচেতনায় রঙিন হয়ে ওঠে, তখন তা-ই আবার কাব্যের স্তরে উন্নীত হয়। এ কারণেই Wordsworth বলেন, “Poetry is the impassioned expression which is in the countenance of all science.”

কবিতা ও দর্শন : কবিতা ও দর্শন উভয়েই বিশ্বজগতের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের প্রণালী সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনুভূতি ও ভাবাবেগই কবিতার উপজীব্য। কিন্তু দর্শন বিচারমূলক বিশ্লেষণের সাহায্যে জগৎ ও জীবনের বুদ্ধিগত স্বরূপটি উদ্ধার করতে চায়। দার্শনিক ভাবেন, কবি অনুভব করেন। কবির মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সৌন্দর্য দৃষ্টি দার্শনিকের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের অন্তলীন সৌন্দর্যের ভাবগত অদ্বৈত সত্তার আবিষ্কার।

মোটকথা লেখকের ভাবকল্পনা যেখানে অরূপ ও অমূর্ত সত্য নির্দেশ করে, সেখানে তিনি দার্শনিক। আবার তা-ই যখন সীমায়িত রূপ-রসে নিবেদিত হয়, তখন তিনি কবি। তবে কবিতায়ও দর্শন থাকে। কিন্তু শ্রেষ্ঠ কবিতায় দর্শন ও কাব্যের মিলন স্বাভাবিক। তবে দার্শনিকতা কাব্যশ্রীমণ্ডিত হতে হবে। তা না হলে দর্শনের পীড়নে কবিতার অপমৃত্যু হবে। এ কারণেই কীটস্ বলেছেন…

‘Do not all charms fly

At the mere touch of cold philosophy?

বাংলা কাব্যসাহিত্য: বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরেরও অধিক সময়ের । বাংলা সাহিত্য বলতে কাব্যসাহিত্যকেই বোঝাত। এর ইতিহাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ ।

প্রাচীন যুগ : প্রাচীন যুগে পাওয়া যায় একটি মাত্র বই, তার নাম ‘চর্যাপদ’। এটি একটি কাব্যগ্রন্থ। এতে ৪৬টি পূর্ণ কবিতা এবং একটি ছেঁড়া খণ্ডিত কবিতা রয়েছে। এ কবিতাগুলো লিখেছিলেন ২৪ জন বৌদ্ধ বাউল কবি । বৌদ্ধ কবিদের সাধন তত্ত্বের গোপন কথা স্থান পেয়েছে এসব কবিতায়। এসব কবিতায় ধর্মের কথা ছাড়াও ছিল বাংলার সমাজের জীবন্ত ছবি। দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ, নিপীড়িত মানুষের বেদনার কথা, সুখের কথা ফুটে উঠেছে এসব কবিতায়। এরূপ একটি কবিতায় এক দুঃখী কবি তার সংসারের অভাবের ছবি মর্মস্পর্শী করে এঁকেছেন যা পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়।

কবির ভাষায়-

টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী ।

হাড়ীতে ভাত নাহি নিতি আবেশী ।

বেঙ্গ সংসার বহিল যায় ।

মুহিল দুধ কি বেল্টে ঘামায়।

 

কবি বলেছেন, টিলার ওপরে আমার ঘর, আমার কোনো প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে আমার ভাত নেই, আমি প্রতিদিন উপোস থাকি। ব্যাঙের মতো প্রতিদিন আমার সংসার বেড়ে চলেছে, যে দুধ-দোহানো হয়েছে তা আবার ফিরে যাচ্ছে গাভীর বাঁটে।

বেশ করুণ দুঃখের ছবি এটি। এ কবিতাগুলোতে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর উপমা, আছে মনোহর কথা, যা সত্যিকারের কবি না হলে কেউ বলতে পারে না। কম্বলাম্বরপাদ নামে এক কবি লিখেছেন, 

সোনে ভবিতী করুণী নারী ।

রূপা থুই নাহিক ঠাবী ।

 

এ কথা পড়ার সাথে সাথে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা ‘সোনার তরী’র সেই পংক্তিগুলো, যেখানে কবি বলেছেন—

ঠাঁই নাই ঠাই নাই— ছোট সে তরী,

আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।

 

চর্যাপদ-এর সবগুলো কবিতা ছন্দে রচিত, পংক্তির শেষে মিল আছে এবং এগুলো গাওয়ার উদ্দেশ্যেই রচিত হয়েছিল । বাংলা কবিতায় ১৮০০ সালের আগে যা কিছু রচিত হয়েছে, সবই রচিত হয়েছে গাওয়ার উদ্দেশ্যে ।

মধ্যযুগের কাব্যসাহিত্য : ১২০০ থেকে ১৩৫০ অব্দ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় থাকার পর মধ্যযুগে বাংলা কাব্যসাহিত্যে আসে বড় কবিরা। এ সময় রচিত হয় মঙ্গলকাব্য। এ সময়কার অসাধারণ দীর্ঘকাব্য হলো বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। বড়ু চণ্ডীদাস বাংলা ভাষার প্রথম মহাকবি। মধ্যযুগ মঙ্গলকাব্যের জন্য বিখ্যাত। দেব-দেবীর মঙ্গল কামনা করে এ কাব্যগুলো রচিত হয়েছে বলে এগুলোর নাম মঙ্গলকাব্য। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে। মঙ্গলকাব্যগুলোর মধ্যে ‘চণ্ডীমঙ্গলকাব্য’, ‘মনসামঙ্গলকাব্য’, ‘শিবমঙ্গলকাব্য’, ‘অন্নদামঙ্গলকাব্য’, ‘ধর্মমঙ্গলকাব্য’ উল্লেখযোগ্য।

মঙ্গলকাব্যের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে ‘চণ্ডীমঙ্গল’ আর ‘মনসামঙ্গল’। চণ্ডীমঙ্গল লিখেছেন অনেক কবি, তাদের মধ্যে যে দুজন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবিদের সারিতে আসন পান তারা হলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এবং রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র। মনসামঙ্গলের দুজন সেরা কবি হলেন বিজয়গুপ্ত এবং বংশীদাস। 

চণ্ডীমঙ্গলে আছে চমৎকার দুটি কাহিনী-একটি ব্যাধকালকেতু-যুগ্মরার, অপরটি ধনপতি লহনার। মনসামঙ্গলের কাহিনী একটি হচ্ছে বেহুলা-লখিন্দরের। সেকালের কাব্যের উদ্দেশ্য আজকের মতো ছিল না, কাব্যের জন্য কাব্য লেখার প্রচলন তখন ছিল না। ধর্মপ্রচারের জন্যে সবাই কাব্য রচনা করতেন । তাই মধ্যযুগের সমস্ত সাহিত্য ধর্মভিত্তিক ও দেবতাকেন্দ্রিক। দেবতার ফাঁকে ফাঁকে এসেছে মানুষ।

মধ্যযুগের আরো কতিপয় বিখ্যাত কবির নাম হলো চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, ভারতচন্দ্র, আলাওল, কাজী দৌলত প্রমুখ। মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কাব্য বৈষ্ণবপদাবলী’। এ কবিতার নায়ক নায়িকা “কৃষ্ণ ও রাধা”। এ কবিতাগুলো তুলনাহীন আবেগে পরিপূর্ণ। বৈষ্ণব কবিতা বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। চণ্ডীদাসের একটি পদ হচ্ছে-

সই কেবা শুনাইল শ্যাম নাম।

কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো

আবুল করিল মোর প্রা

না জানি কতেক মধু শ্যাম নামে আছে গো

বদন ছাড়িতে নাহি পারে।

জপিতে জপিতে নাম অবশ করিল গো

কেমনে পাইব সই তারে।

 

চণ্ডীদাস ও জ্ঞানদাস কবিতা লিখেছেন খাঁটি বাংলা ভাষায় সহজ ও সরল আবেগে। অন্যদিকে বিদ্যাপতি ও গোবিন্দ দাস লিখেছেন ব্রজবুলি ভাষায়। জ্ঞানদাসের কবিতার কয়েকটি পংক্তি –

রূপলাগি আখি করে গুণে মন ভোর।

প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।

হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।

পরাণ পিরিতি লাগি থির নাহি বান্ধে।

 

কাব্যসাহিত্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

 

বিদ্যাপতি ছিলেন মিথিলার রাজা শিবসিংহের রাজসভার মহাকবি। তাকে ছাড়া বৈষ্ণব কবিতার কথা ভাবাই যায় না। কবির কবিতায় মোহিত হয়ে রাজা তাকে ‘কবিকণ্ঠহার’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

মধ্যযুগে মুঘল কবিদের অবদান : মধ্যযুগে মুসলমান কবিরাও বাংলা ভাষায় অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এ সময়কার প্রথম বাংলা ভাষার মুঘল কবি হলেন শাহ মুহম্মদ সগীর। তার কাব্যের নাম ‘ইউসুফ-জুলেখা’, ‘লায়লা মজনু’র প্রণয়ের কাব্য লিখেছেন বাহরাম খান। এ সময়কার একজন বিখ্যাত কবি হলেন আব্দুল হাকিম। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘নূরনামা’য় লিখেছেন – 

যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।

নিজ দেশ ত্যাগি কেন বিদেশ ন যায়।

 

কবির এ কবিতাংশ পড়লে বোঝা যায় তিনি কী গভীরভাবে বাঙালি ছিলেন। মধ্যযুগের আরেক বিখ্যাত কবি হলেন আলাওল। তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর কবি। তার বিখ্যাত কাব্য ‘পদ্মাবতী’। কবি তার কবিতায় সিংহলরাজ কন্যা অপরূপ সুন্দরী পদ্মাবতীর রূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা করেছেন। আলাওলের বর্ণনায়-

পদ্মাবতী রূপ কি কহিমু মহারাজ।

তুলনা দিবারে নাহি ত্রিভু

আপাদলম্বিত কেশ কস্তুরী সৌরভ।

মহাঅন্ধকারময় সৃষ্টি পরা।

স্বর্গ হস্তে আনিতে যাইতে মনোরথ

এমন সুন্দর উপমা ও বর্ণনা বাংলা সাহিত্যে খুবই বিরল।

বাংলা কাব্যসাহিত্যে আধুনিকতা/আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য: উনিশ শতকের প্রথমার্ধ ভরে চলে গদ্যের রাজত্ব। সে সময়ে গদ্যই ছিল সম্রাট। ওই সময়ে একমাত্র কবি ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। তিনি ছিলেন আধুনিককালের মানুষ । তার রচনার বিষয় ছিল বড়ই চমৎকার। তপসে মাছ থেকে শুরু করে ইংরেজদের ককটেল পার্টি সবকিছু ছিল তার কবিতার বিষয় । তিনি এক ইংরেজ রমণীকে উপলক্ষ করে লিখেছেন-

বিড়ালাক্ষী বিধুমখা মুখে গন্ধ ছোটে ।

আহা তার রোজ রোজ কতো রোজ ফোটে।

 

এ সময়কার আরেকজন কবির নাম রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় । তার একটি কাব্যের বিখ্যাত চরণগুলো নিম্নরূপ—

স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?

দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়।

 

বাংলা কবিতায় আধুনিকতা আনেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তার মতো প্রতিভাবান কবি বাংলা সাহিত্যে আর মাত্র একজনই আছেন তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মধুসূদন মহাকাব্য রচনা করে বাংলা কবিতার রূপ বদলে দিয়েছেন। ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ তার উল্লেখযোগ্য মহাকাব্য। এছাড়াও তার রচিত তিলোত্তমাসম্ভবকাব্য, ব্রজাঙ্গনাকাব্য, বীরাঙ্গনাকাব্য, বাংলা কাব্যসাহিত্যকে অমরত্ব দান করেছে। এছাড়া তিনি বাংলা ভাষায় সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার প্রবর্তন করে বাংলা কাব্যসাহিত্যে নতুন ধারার সংযোজন করেন। তার এমনি একটি বিখ্যাত সনেট ‘বঙ্গভাষা’ তে লিখেছেন-

হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন

তা সবে (অবোধ আমি) অবহেলা করি,

পর ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ

পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।

কাটাইনু বহুদিন সুখ পরিহরি।

 

মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতার চিরাচরিত প্রথাবদ্ধ ছন্দকে শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করে তাকে করে তোলেন প্রবহমান। তিনি ছন্দকে করেন কবির বক্তব্যের অনুগামী। তিনি তার কাব্যকে করে তোলেন অভিনব, যা বাংলা ভাষায় তুলনাহীন। মধুসূদনকে অনুসরণ করে অনেকেই কাব্য রচনা করেন। তাদের মধ্যে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাকবি কায়কোবাদ উল্লেখযোগ্য। কায়কোবাদের রচিত কাব্য ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্যের স্বীকৃতি লাভ করে।

এ সময়ে বাংলা কাব্যসাহিত্যে রোমান্টিকতা স্থান পায়। বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক কবি হলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাকে বাংলা ভাষার প্রথম খাঁটি আধুনিক কবিও বলা হয়। তার পথ ধরেই আসেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিহারীলাল চক্রবর্তীকে বলেছেন বাংলা কাব্যের ‘ভোরের পাখি’। কবি বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্যের নাম ‘সারদামঙ্গল’।

বাংলা কাব্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও তার পরবর্তীরা: আকাশে সূর্য ওঠে প্রতিদিন, আমরা সূর্যের স্নেহ পাই সারাক্ষণ। সূর্য ছাড়া আমাদের চলে না। তেমনি আমাদের আছেন একজন, যিনি আমাদের প্রতিদিনের সূর্য। তার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি আমাদের সারাক্ষণ আলো দিচ্ছেন। তার কাব্যালোকে আমাদেরকে ভাসিয়ে তুলছেন। তিনি বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় কবি।

তার অবদানের ফলেই আমাদের কাব্যসাহিত্য বিশ্ব দরবারে সুপরিচিতি লাভ করে। তার কাব্যপ্রতিভা অতুলনীয়। তিনি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে সযত্নে রচনা করেন গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ। এর জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার কবিতায় ও গানে বাংলা ভাষা-সাহিত্য পরিপূর্ণ ও পরিপুষ্ট হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বহুরূপে, বহু বর্ণে সাজিয়েছেন বাংলা ভাষা ও ছন্দকে।

রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক তিন মহিলা কবিও বাংলা গীতিকাব্যে কোমলতা সঞ্চার করেছেন। এরা হলেন- সিরীন্দ্র মোহিনী দাসী, মানকুমারী বসু ও কামিনী রায়। আরেকজন বিখ্যাত কবি হলেন যতীন্দ্রমোহন বাগচী। তিনি বাঙালি জীবনের সুখ-দুঃখ ও বাংলার পল্লীপ্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনায় আন্তরিকতার পরিয়ে দিয়েছেন।

কবি কালিদাস রায় তার কাব্যে বাংলার মাঠঘাট ও পল্লীপ্রকৃতি মমতান্বিত রূপ পেয়েছে। বাংলা কাৰো বিদ্রোহ ধরা পড়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়। তার অগ্নিঝরা কাব্যধারা বাংলার ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তোলে । পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে স্বদেশ গড়া, সকল প্রকার অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ ও অবিচারের অবসান ঘটানোই ছিল তার কাব্যের আহবান। যেমন :

“শিকল পড়া ছল মোদের এই শিকল পড়া ছল

শিবল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।”

“লাথি মার ভাঙ্গরে তালা

যত সব বন্দীশালা

আগুন জ্বালা, আগুন ।”

 

তিনি বিদ্রোহী কন্ঠে তার প্রতিবাদ জানাতেন, কাব্যে তা ফুটিয়ে তুলতেন। তাই তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।

বাংলা কাব্যসাহিত্যে গ্রামবাংলা: গ্রামবাংলা ও পল্লী একৃতি বাংলা কাব্যের একটি প্রধান উপজীব্য বিষয়। পরীর সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, প্রেম-বিরহ, সহজ-সরল জীবনচিত্র মূর্ত হয়ে উঠেছে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কাব্যে। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে বাংলার মানুষ ও প্রকৃতি বাঙময় হয়ে উঠেছে। এছাড়া কবি জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ কবিদের কবিতায় বাংলার গ্রামীণ চিত্র ফুটে উঠেছে।

আধুনিক কালের অন্যান্য কবিরা যেমন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যসাহিত্যে বিপুল বৈচিত্র্য দান করেছেন । 

উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলে বাংলা কবিতায় দুটো প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয়। একটি ধারা মুসলিম জাগরণ ও জাতীয়তাবাদী মনোভাবের স্ফুরণ ঘটায়, অন্যটি আধুনিক জীবনধর্মী কাব্য সৃষ্টিতে তৎপর থাকে। ফররুন আহমদ, তালিম হোসেন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ কবির কবিতায় মুসলিম মানসের চিত্র ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশের কাব্যসাহিত্য: ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলা কাব্যসাহিত্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগে। মুক্তির আনন্দে নতুন চেতনা জন্মলাভ করে বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে। তারা তাদের কবিতার স্বাধীনতার কথা, মুক্তির কথা, দেশের কথা ফুটিয়ে তোলেন অপূর্ব ভাব ও ছন্দে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও অনেক কবি তাদের কবিতার দেশাত্মবোধের কথা তুলে ধরেন।

বাংলা কাব্যে নিসর্গ চেতনা এবং উল্লেখযোগ্য কবি: বাংলা কাব্যে নিসর্গ চেতনা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মানুষ ও প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে কবিতা হয় না। যন্ত্রণাকাতর মানুষের জীবনকথা স্থান পায় বাংলা কাব্যসাহিত্যে। বাংলাদেশের কাব্য সাহিত্যের কিংবদন্তী কবি শামসুর রাহমান এবং কবি আল মাহমুদ। শামসুর রাহমানের ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিভ্যবাসভূমে’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ রূপ ও রীতিতে, ভাব ও কল্পনায়, স্বাতন্ত্র্যে ভাস্বর হয়ে আছে। আল মাহমুদ তার ‘কালের কলস’, ‘সোনালী কাবিন’, ‘লোক লোকান্তর’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য মহিমায় উজ্জ্বল।

এছাড়াও কবি সুফিয়া কামাল, আহসান হাবীব, সিকান্দার আবু জাফর, আশরাফ সিদ্দিকী, ওমর আলী, শহীদ কাদরী, জিয়া হায়দার, আব্দুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ কবি বাংলাদেশের কাব্যসাহিত্যকে দিগন্তপ্রসারী ও সমৃদ্ধশালী করেছেন। কবি রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, মোহাম্মদ রফিক, আসাদ চৌধুরী প্রমুখ কবিরাও বাংলাদেশের আধুনিক কাব্যাঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধ। বর্তমান সময়ের কবিগণ রূপকল্পের ব্যবহারে যথেষ্ট অভিনবত্বের পরিচয় দেখিয়েছেন। তারা নতুন শব্দের ব্যঞ্জনা নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন এবং প্রকাশভঙ্গিতে ফুটিয়ে তুলেছেন বিশেষ কুশলতা।

বর্তমান সময়ের কাব্যসাহিত্যে রাজনীতি, সামাজিক জীবনের সংঘাতময়তা, আধুনিক জীবনের নানা বৈশিষ্ট্য ও সমস্যা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তারা আধুনিক জগতের বিভিন্ন কাব্যসাহিত্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছেন। এমনকি বাইরের কাব্যজগতের প্রভাবকে নিজেদের কাব্যসাহিত্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

এতে করে বর্তমান কাব্যসাহিত্য গতানুগতিকতা মুক্ত হয়ে আধুনিক ও সর্বজনীন কাব্যসাহিত্যে পরিণত হচ্ছে। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার যুগেও কাব্যসাহিত্যের আবেদন ম্লান হয়ে যায়নি। বর্তমান আধুনিক কবিদের অভিনব শব্দ ছন্দ কাব্যসাহিত্য নতুনরূপে নতুন আবেগে কাব্য রসিকদের আনন্দ দিচ্ছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার: কবিতা বা কাব্যসাহিত্য সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পকলা। একমাত্র কবিই শব্দের সাহায্যে আমাদের কাছে সঙ্গীত মূর্ছনা ও চিত্রাত্মক ভাব-কল্পনার রূপ প্রত্যক্ষ করে তোলেন। কবিতা শব্দ ব্যঞ্জনায় ইঙ্গিতে, ভাবে, সঙ্গীতমাধুর্যে অজ্ঞাতকে, অচেনাকে আমাদের গোচর করে। রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন-

দ্বিধায় জড়িত পদে, কম্প্রবক্ষে নম্র নেত্রপাতে—

স্মিতহাস্যে নাহি চলো সসজ্জিত বাসর-সজ্জাতে

স্তব্ধ অর্ধরাতে।

তখন উর্বশীকে ছাপিয়ে আমাদের কাছে শয্যাসঙ্গিনী লজ্জারুনা নারীপ্রতিমা রূপময়ী হয়ে ওঠে। এ কারণেই কাব্য শ্রেষ্ঠ ললিতকলা বলে পরিগণিত।

বাংলা কাব্যসাহিত্যে এমনি সৃষ্টিশীল কবিতা রয়েছে, যা অপূর্ব ও মহিমাময়। এছাড়া বাংলা কাব্যসাহিত্য যথেষ্ট সম্প্রসারণশীল। সময়ের সাথে হাতে হাত রেখে বাংলা কাব্যসাহিত্য সামনে এগিয়ে চলছে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment