দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাব-সম্প্রসারণ

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাব-সম্প্রসারণ করবো আজ। আজ আমাদের ভাষা ও শিক্ষা সিরিজের ভাব সম্প্রসারণ বিভাগের একটি পাঠ।

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাব-সম্প্রসারণ

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাব-সম্প্রসারণ

বিচারকের কাজ অপরাধীর শাস্তি বিধান করা। বিচারের মূল লক্ষ্য হল প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি বিধান করা এবং নিরপরাধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য তখনই সার্থক হবে, যখন বিচারের মধ্যে প্রামাণিক সাক্ষ্য মানবিক বিবেচনার সমন্বয় ঘটবে।

ন্যায়অন্যায় নিয়েই আমাদের কর্মজীবন। ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি সর্বত্র সাধুবাদ পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, অন্যায়কারী হয় দণ্ডিত। অপরাধের দণ্ড প্রদান করা হবেএটা সবার কাম্য, অপরাধীকে দণ্ডপ্রদানই স্বাভাবিক। দণ্ডপ্রদান বিচারকার্যের অঙ্গ। কিন্তু সমাজে আমরা দেখি অনেক সময় অপরাধের যথাযথ বিচার হয় না, আবার কোনো কোনো সময় বিচারপ্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণে বিনা অপরাধেও দণ্ডপ্রাপ্ত হয় কেউ কেউ। তবে যিনি বিচারক তাঁর দায়িত্ব অত্যন্ত সুকঠিন। অপরাধীর বিচার যথাযথভাবে নির্ণয় করার জন্য তাঁকে শুধু আইনের সুকঠোর প্রয়োগ ছাড়াও আবেগঅনুভূতি মানবিক বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হয়। অন্যায় করেছে বলে অন্যায়কারীকে যথোচিত শাস্তি দিতে হয়

 

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে

 

বটে, তবে সে শাস্তি যান্ত্রিক না হওয়াই কাম্য। কারণ, অন্যায়কারীও মানুষ। অন্যায়কারী হিসেবে তার প্রাপ্য শাস্তি, একইসঙ্গে একজন মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সহানুভূতি, মমত্ববোধ এবং ভালোবাসা। তাই তাকে সংশোধনের পথ দেখাতে হবে। তার নির্মল জীবনযাপনের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে হবে। অপরাধীকে ন্যায়ের পথে আনাই বিচারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রসঙ্গে পবিত্র বাইবেলে ঘোষিত হয়েছে, ‘পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়।তাই অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একমাত্র সহানুভূতিমিশ্রিত দণ্ডই পারে অন্যায়কারীর মনে অনুশোচনা জাগাতে; অন্যথায় তার মনে আইনের প্রতি লেশমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকবে না, সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।

 

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে

 

বিচারের মাধ্যমে অপরাধীকে বুঝিয়ে দিতে হবে অপরাধ নিন্দনীয়। তবে এই মমত্বের অর্থ এই নয় যে, বিচারক গুরু পাপে লঘু দণ্ড দেবেন। তাহলে বিচারকার্য ব্যাহত হবে। প্রসঙ্গে উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য, The judge is not real judge who has no humanitarian feeling for the accused — অর্থাৎ, অপরাধীর প্রতি সহৃদয় অনুভূতিহীন বিচারক প্রকৃত বিচারক নয়। বিচারক অবশ্যই তাঁর পবিত্র দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ আসন থেকে নিরপেক্ষভাবে পবিত্র দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই সকলের কাম্য। তাই বিচারক যখন কঠিন দণ্ড প্রদান করেনতিনি যে আইনের অমোঘ বিধানেই সেই কঠিন দণ্ড বা শাস্তি দিচ্ছেনসেই নিরপেক্ষতার মধ্যে যে কঠোরতা আছে তাও তাঁকে ভাবতে হবে। অর্থাৎ বিচারক যখন অপরাধীর বিচার করেন তখন যদি দণ্ডিতের ব্যথার সঙ্গে একাত্মবোধ করেন তখন সেটা হয় সুবিচার।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বিচারকের দায়িত্ব সুকঠিন বলেই তিনি সমাজের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে সমাসীন। দণ্ডিতের প্রতি বিচারকের সমবেদনা থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন তার প্রাপ্য দণ্ডকে লঘু না করে। বিশ্ববিধানের শৃঙ্খলাকে যে ভঙ্গ করেছে, মনুষ্যত্বকে যে আঘাত করেছে দণ্ড তাকে গ্রহণ করতেই হবে। হৃদয়াবেগের বশীভূত হয়ে তার অপরাধকে মার্জনা করার অধিকার কারোর নেই। ভালবাসা সত্ত্বেও যিনি অপরাধীকে মার্জনা না করে যথাযোগ্য দণ্ড দিতে পারেন তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। দণ্ডিতের বেদনা তাঁর বুকে বাজবে, কিন্তু দণ্ডদানে তিনি অবিচল থাকবেন।

ভাব সম্প্রসারণ কী?

ভাব সম্প্রসারণ এর সময় সেই চরণের মূল গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় যুক্তি, বিশ্লেষণ এবং উপমা ব্যবহার করে সেইসাথে প্রয়োজন অনুসারে উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া। কবি বা লেখকের যেখানে তার বক্তব্যকে ব্যঞ্জন এবং ইঙ্গিত ধর্মী করে প্রকাশ করেন সেগুলো কে আলোক ধর্মী হিসাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে ভাব সম্প্রসারণ করা হয়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment