কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নবাগত ছাত্র ছাত্রীর উদ্দেশ্যে ভাষণ নিয়ে আজকের আয়োজন | কলেজে নবাগত ছাত্র ছাত্রীর উদ্দেশ্যে অনেক সময় আমাদের কথা বলার প্রয়োজন হয়। এই নমুনা ভাষণটি সেই ধারণ স্পষ্ট করবে। তবে বক্তব্য ভালো করতে হলে বারবার দেবার মাধ্যমে অভ্যাস করা জরুরী।
কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নবাগত ছাত্র ছাত্রীর উদ্দেশ্যে ভাষণ
মাননীয় অধ্যক্ষ, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থী বন্ধুগণ—
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক একাদশ শ্রেণির নবাগত ছাত্র-ছাত্রী বরণ করে নেওয়া আমাদের কলেজের প্রথাগত ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য অনুসরণে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী একাদশ শ্রেণির নবাগত ভাইবোনকে বরণ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আজকের এই নবীনবরণ উৎসবের আয়োজন। নতুন-পুরোনোর মিলন-বাসরে বক্তা হিসেবে হাজির হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। নবাগত শিক্ষার্থীরন্ধুরা, আমাদের দ্বাদশ শ্রেণির পক্ষ থেকে তোমাদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। প্রিয় ভাই-বোনেরা, তোমরা জানো, কবি বলেছেন, ‘পাঠশালা যেন পান্থশালা।
পাঠসূচনা ও পাঠসমাপ্তির মধ্য দিয়ে একদল ছাত্রের অনুপ্রবেশ ও আর একদল ছাত্রের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বহে চলে অন্তহীন ছাত্রধারা। তোমাদের উপস্থিতি, ধারায় নতুন সংযোজন, কিছুদিন পরে আমাদের বিদায় হবে ধারার বহির্গমনে। আজ তোমাদের পুষ্প-চন্দনে আমরা যেমন বরণ করে নিলাম, তেমনি তোমরাও কিছুদিন পরে আমাদের সংবর্ধনা জানিয়ে বিদায় করবে। আসা- যাওয়ার এই আনন্দ আর বিষাদের স্বাক্ষর বুকে নিয়ে এই কলেজ অন্তহীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ইতিহাসের এই নীরব মূক সাক্ষীটির মান-মর্যাদা, সম্মান-ঐতিহ্য রক্ষার দায়-দায়িত্ব আমাদের সকলের।

বন্ধুগণ, মনে রাখতে হবে, আমাদের কৃতিত্বে তার গৌরব, আমাদের জ্ঞান-বিদ্যা-বুদ্ধির উৎকর্ষে তার সুযশ, আমাদের খেলা-ধুলা-শিল্প- সংস্কৃতির নৈপুণ্যে তার সম্মান বৃদ্ধি। সুপ্রিয় নবীন শিক্ষার্থীরা, আজ প্রকৃতিতে যখন বাসন্তী আমেজ, বাতাসে যখন দখিনা হাওয়ার দোলা, তখন এই বিদ্যায়তন তোমাদের মতো নবীনদের পদচারণায় মুখর। আমাদের বিশ্বাস, কলেজের সবুজ শ্যামল বীথিকার মধ্যে আলো হাওয়ার লুকোচুরি খেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে সুপ্ত চিন্তার খোরাক জোগাবে। এখানকার আত্মনিবেদিত প্রাণ শিক্ষকদের নির্দেশনা ও পাঠদান তোমাদের শিক্ষাজীবনকে করবে আলোকের অভিসারী। নবাগত শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, আমাদের সম্মুখে আমাদের পরম পূজনীয় অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষক মহোদয় উপস্থিত।
আজ এই প্রীতিস্নিগ্ধ বরণ-অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই আচার্যবৃন্দের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও কর্তব্যবোধের কথা। শ্রদ্ধাই হল শিক্ষার প্রথম শর্ত। চিত্ত শ্রদ্ধানত না হলে জ্ঞানের বীজ উপ্ত হয়ে শস্যপ্রসবিনী হয় না। প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের এ প্রাণপ্রিয় শিক্ষায়তনটি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অতুলনীয় ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল। এ প্রতিষ্ঠান তোমাদের। সদাসর্বদা এ প্রতিষ্ঠান তোমাদের মঙ্গল কামনায় পাশে দাঁড়াবে। বাড়িয়ে দেবে সাহায্য ও সহযোগিতার প্রসারিত হাত। এ আশ্বাস তোমাদের বরণ বেলায় আমরা দিতে পারি। এ প্রতিষ্ঠানে তোমাদের শিক্ষা জীবন ফুলের মতো বিকশিত হোক।
এখানকার শ্যামল স্নিগ্ধ পরিবেশে তোমাদের আলোকিত মানুষ হবার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাক সম্ভাবনার সোনালি দ্বারপ্রান্তে। তোমাদের চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ হোক। এটিই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। নবাগত শিক্ষার্থীবন্ধুগণ, এবার আসি আমাদের নতুন পুরাতনের কথায়। নতুনের সঙ্গে পুরাতনের দ্বন্দ্ব নাকি চিরন্তন। আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়ে সে-ধারণায় বিশ্বাসী নই। আজকের এই স্বাগত অনুষ্ঠান শুধু প্রথাগত অনুষ্ঠান নয়, অনুষ্ঠানটি আন্তরিকতায় সত্যিকার অর্থবহ হোক্, এই আমাদের কামনা। পড়াশোনায়, পরীক্ষার ভালো ফলে আমাদের কলেজের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য, আমাদের সমবেত প্রয়াস-প্রচেষ্টায় তা আরো বর্ধিত হোক।
খেলাধুলোয়, সংস্কৃতি চর্চায় কলেজের গৌরবমণ্ডিত ঐতিহ্য আছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে রক্ষিত হোক এটি আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। তোমাদের জীবন হোক সুন্দর, আগমন হোক সার্থক। গৌরব, সমৃদ্ধিতে আমাদের প্রতিষ্ঠান দেশে বিদেশে উজ্জ্বল তারকার মতো দীপ্তমান হোক, এ প্রচেষ্টা হোক আমাদের সকলের। বিদায় নেয়ার আগে কবিকণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই-
‘তোমরা এসেছ ভেঙ্গেছ অন্ধকার / তোমরা এসেছ
ভয় করি নাকো আর পায়ের স্পর্শে মেঘ কেটে যাবে রোদ্দুর। ছড়িয়ে পড়বে বহুদূর বহুদূর। ‘
ধন্যবাদ ।
আরও দেখুন: