কলেজের অধ্যক্ষের বিদায় উপলক্ষে মানপত্র রচনা | মানপত্র | ভাষা ও শিক্ষা

কলেজের অধ্যক্ষের বিদায় উপলক্ষে মানপত্র রচনা | মানপত্র | ভাষা ও শিক্ষা , আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বরণ বা বিদায় জানানাের জন্যে যে সম্মাননাপত্র রচনা করা হয়, তাকে মানপত্র বলে। মানপত্র সাধারণত সামাজিক, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রচুর দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে পাঠ করে সংবধেয় ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়।

 

কলেজের অধ্যক্ষের বিদায় উপলক্ষে মানপত্র রচনা | মানপত্র | ভাষা ও শিক্ষা

 

কলেজের অধ্যক্ষের বিদায় উপলক্ষে মানপত্র রচনা

কলেজের শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ

……..এর অবসর গ্রহণ

শ্রদ্ধাঞ্জলি

হে মান্যবর, জ্ঞানগুরু

আজ ব্যথাতুর হৃদয়ে ছালাম ও অশ্রুসজল প্রীতি গ্রহণ করুণ। আজ কোনোভাবেই কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছি না মনকে বোঝাবার, বিশ্বাস করতে পারছি না আপনাকে বিদায় জানাচ্ছি। শিক্ষকতার মহান ব্রত নিয়ে আপনি এসেছিলেন এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠে। সুদীর্ঘ দিন এর কর্ণধার হিসেবে সগৌরবে দায়িত্ব পালনের পর আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের বেদনার সুর। আমাদের অবুঝ মনের করুণ কান্না আজ সকল বাধ ভেঙে বল্গাহীন হয়ে ওঠছে। চোখের জলে সব ঝাপসা মনে হচ্ছে। ব্যথাহত হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে আমাদের অন্তরে কেবলই জেগে উঠছে বিষাদের বাণী—

“যেতে নাহি দিব।’ হায়,

তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।”

হে প্রাজ্ঞ, মহান কর্মবীর,

আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, আমরা আপনার মতো একজন কর্মঠ, উদারচিত্ত, সুদক্ষ ও প্রজ্ঞাবান শিক্ষকের পদপ্রান্তে বসে শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছি। আপনার কাছ থেকে আমরা কোনোদিন কোনো কিছুর অভাব বোধ করি নি। সবসময় পাখির ছানার মতো পাখার তলে আগলে রেখেছেন আমাদেরকে। আজ আমাদের হৃদয়পটে বারবার ভেসে উঠছে আপনার স্মৃতিবিজড়িত হিরণ্ময় মুহূর্তগুলো। আমাদের স্মৃতির রাজ্যে আপনি অমর, অক্ষয় ও চিরঞ্জীব। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনার দেয়া আলো থেকে আমরা আলো ছড়াবো দিক-দিগন্তে। তাই আপনার বিচ্ছেদবেদনা আমাদের কোমল হৃদয়কে গভীরভাবে অভিভূত করেছে— ‘এত আশা ভালবাসা, এতই নিরাশা, এত দুঃখ কেন ?

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

হে জ্ঞানতাপস, শিক্ষাব্রতী,

আপনার অন্তঃকরণ ছিল পবিত্র ও মহৎ। আপনার মধুর ব্যবহার, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক মহত্ত্ব আমাদের ও আপনার মাঝে যে আত্মার বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা কখনো টুটে যাবার নয়। কিন্তু আমরা?— ‘কী দেব তোমায়-আছে শুধু অশ্রুজল।’ আজ বুঝতে পারছি কত বড় সম্পদ আপনি ছিলেন। আপনি নিরলস সাধনায় শিক্ষার্থীদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন। অনেকেই জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে আপনার সুচিন্তিত দিক নির্দেশনায়। আপনার একনিষ্ঠ ত্যাগ ও নিরলস শ্রমে আজ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ১০০ ভাগ পাসসহ অনেকেই জিপিএ ফাইভ অর্জন করছে। আপনার সংস্পর্শে আমরা চিরধন্য।

কলেজের গঠনকর্মে, দৈনন্দিন কার্য পরিচালনায়, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়, পঠন-পাঠনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে, সর্বোপরি পরম যত্নে নিষ্ঠায় ও অক্লান্ত পরিশ্রম সহকারে শিক্ষাদানে নিজেকে তিল তিল করে নিঃশেষে উজাড় করে যে মহৎ দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন, এ ব্রত, এ ত্যাগ, কর্মকুশলতার গৌরব ও খ্যাতির উপমা খুঁজতে হলে আমাদের যেতে হবে অন্তহীন বারিধির কাছে, নয়তো বিপুলাকার হিমালয়ের কাছে। তাই আমাদের কণ্ঠ থেকে আজ অবলীলায় উচ্চারিত হচ্ছে— ‘কত রাজ্য, কত রাজা গড়িছ নীরবে

‘হে পূজ্য, হে প্ৰিয়!

একত্বে বরেণ্য তুমি, শরণ্য এককে,

হে আদর্শ সাধক, শিক্ষাগুরু,

 

শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে মানপত্র রচনা | মানপত্র | ভাষা ও শিক্ষা

 

নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে আপনি ছিলেন অনড় অবিচল। শত প্রলোভন আপনাকে নীতিপথ থেকে এতটুকু বিচ্যুত করতে পারে নি। আপনার সততা, মহত্ত্ব, ঔদার্য, কর্মকুশলতা, জ্ঞান-গরিমা সবই আমাদের কাছে গর্বের বস্তু। আপনার আদর্শ মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের হৃদয়ে চিরোজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ কথা তো ঠিকই, আপনার বিশাল কর্মজীবনের কতটুকুই বা আমরা জানি, এই ক্ষুদ্র পরিসরে আপনার সম্পর্কে কিবা প্রকাশ করে বলতে পারি। তাছাড়া আপনার মূল্যায়ন আমাদের ধৃষ্টতামাত্র। সর্বোপরি আজ এই বিদায়ের মুহূর্তে বহু স্মৃতির জটলায়, শোকস্তব্ধ বিহ্বল বেদনায় ভাষা বড় বেশি কুণ্ঠিত, জড়তাগ্রস্ত। কত কথাইতো থাকল অব্যক্ত।

বয়সের দোষে, কখনওবা ঔদ্ধত্যে রিপুর তাড়নে আপনার প্রতি আমরা বহু অপরাধ করেছি, অশোভন হয়েছি। আজ বিদায়লগ্নে আপনার কাছে আমাদের প্রার্থনা স্বীয় বদান্যতা ও ঔদার্যগুণে আপনি যেন আমাদের শত ভুলত্রুটি মার্জনা করে বিদায়ী আশীর্বাদে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে তোলেন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।

বিনয়াবনত

কলেজের ছাত্রছাত্রী।

খুলনা

২০/১০/২০০০

আরও দেখুন:

Leave a Comment