একুশের বইমেলা সম্পর্কে প্রবাসী বন্ধুকে চিঠি | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

একুশের বইমেলা সম্পর্কে প্রবাসী বন্ধুকে চিঠি | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , পত্র মানুষের মনের ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম। সরাসরি যখন মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না, তখন প্রয়োজন হয় পত্রের। পত্রের মাধ্যমে মনের ভাব লেখ্যরূপে অন্যের কাছে প্রেরণ করা হয়। মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে তার সামাজিক, জাতীয়, রাজনৈতিক ও জাগতিক জীবনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।

 

একুশের বইমেলা সম্পর্কে প্রবাসী বন্ধুকে চিঠি

 

একুশের বইমেলা সম্পর্কে প্রবাসী বন্ধুকে চিঠি

পরশুরাম, ফেনি ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০০

সুপ্রিয় ‘ক’,

সময়ের সঙ্গে জীবনকে বেঁধে দেয়া হয়েছে, সময় এগিয়ে চলে— জীবনও এগিয়ে চলে। জীবনের প্রয়োজনেই মানুষকে ছুটে যেতে হয় দূর-দূরান্তে। কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন কি ছিন্ন করা যায়? অনেকদিন হয় তুমি কোনো চিঠি লেখ না। কেন এই বিমুখতা বন্ধু। এখনো কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে কিংবা কোথাও ঘুরতে গেলে তোমার কথা মনে পড়ে। এই তো সেদিন বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের বইমেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তুমি দেশ থেকে গিয়েছ প্রায় তিন বছর, অথচ এরই মধ্যে একুশের বইমেলার যে কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা তুমি স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।

 

একুশের বইমেলা সম্পর্কে প্রবাসী বন্ধুকে চিঠি

 

বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে রাস্তার ওপর আগে যে স্টলগুলোর বরাদ্দ দেয়া হত, সেগুলো এখন আর নেই। মেলার ভেতর কোনো রকম গান-বাজনা চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধূমপান, রাজনৈতিক হই-হল্লা, বিদেশি বইয়ের আমদানি, খাবার স্টল ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারেও যে ভূমিকা তাও প্রশংসার দাবিদার। সর্বোপরি বইমেলাকে এখন আদর্শ বইমেলাই মনে হয়। এসব নিয়মনীতির জন্যে ক্রেতা ও দর্শকের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বইও বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একমাস ব্যাপী এই বইমেলার প্রথম দিন থেকেই নেমেছিল জনতার ঢল। অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলার সুবিশাল অঙ্গন। পরিণত হয় লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মিলনমেলায়। মেলায় এবার নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার বই প্রকাশিত হয়েছে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এবারের বইমেলার সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে নতুন লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি এবং বিক্রিও বেশি। জ্ঞানিগুণী ছোটবড় সব লেখকেরই উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বই বিক্রি করতে পেরে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকগণ বেশ খুশি। বই ছাড়াও বাংলা একাডেমী, ফেব্রুয়ারির পহেলা থেকে একটানা একুশ দিন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করে থাকে তা তো তুমি জান-ই। তবে এবারের আয়োজন ছিল বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। সে যা-ই হোক মানুষের জ্ঞানপিপাসা যতই বাড়বে বইমেলার মাহাত্ম্য ততই বাড়বে। বিকাশ ঘটবে এ-দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির। আমি শীঘ্রই তোমার জন্য কিছু বই সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেবো। আজ আর নয়।

ইতি প্রীতিমুগ্ধ

আরও দেখুন:

Leave a Comment