Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

একুশের গান । আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ একুশের গান । যা সাহিত্য কণিকার অন্তর্গত। এটি কালিদাস রায় রচিত কবিতা।১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে ‘একুশের গান’ প্রথম ছাপা হয়। এখানে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ভাষা-আন্দোলনে বাঙালি ছাত্র-জনতার আত্মোৎসর্গকে স্মরণ করা হয়েছে।

 

 

একুশের গান । আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি ॥

 

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখিরা

শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,

দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোধে মানুষের দাবি

দিন বদলের ক্রান্তি লগনে তবু তোরা পার পাবি?

না, না, না, না, খুন-রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই

একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি

 

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে

রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;

পথে পথে ফোটে রজনিগন্ধা অলকানন্দা যেন,

এমন সময় ঝড় এলো এক, ঝড় এলো ক্ষ্যাপা বুনো ॥

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা

তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা

ওরা গুলি ছোড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবিকে রোখে

ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই বাংলার বুকে

ওরা এদেশের নয়,

দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়

ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি

একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি ॥

 

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি

আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী

আমার শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে

জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে

দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালব ফেব্রুয়ারি

একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি ॥

 

 

শব্দার্থ ও টীকা

রক্তে রাঙানো – বহু মানুষের আত্মোৎসর্গে সিক্ত বা উজ্জ্বল।

অশ্রু-গড়া – চোখের পানিতে নির্মিত ।

বসুন্ধরা — পৃথিবী ।

ক্রান্তি — পরিবর্তন ।

লগন — লগ্ন, উপযুক্ত বা শুভ সময়।

অলকানন্দা – একটি ফুলের নাম ।

ওরা গুলি ছোড়ে – এখানে পাকিস্তানি পুলিশকে বোঝানো হয়েছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির  দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর তারা গুলি ছুড়েছিল।

পাঠের উদ্দেশ্য

এই কবিতা পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনে বাঙালির আত্মত্যাগ নিয়ে একদিকে গর্ব করতে শিখবে, অন্যদিকে তারা শহিদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য সব ধরনের অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে ।

পাঠ-পরিচিতি

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে ‘একুশের গান’ প্রথম ছাপা হয়। এখানে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ভাষা-আন্দোলনে বাঙালি ছাত্র-জনতার আত্মোৎসর্গকে স্মরণ করা হয়েছে। ভাষা-আন্দোলনের রক্তদান কিছুতেই বিস্মৃত হওয়া যায় না। এখানে অন্যায়ভাবে গুলিবর্ষণকারী তৎকালীন পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির জাগ্রত প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।

কবি-পরিচিতি

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কথাশিল্পী, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট হিসেবে খ্যাতিমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সমাজমনস্ক লেখক হিসেবে ভাষা-আন্দোলন (১৯৫২) ও মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১) চলাকালে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থ হলো ‘ডানপিটে শওকত’, ‘আঁধার কুঠির ছেলেটি’ ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কারসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে মে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।

কর্ম-অনুশীলন

ক. একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে একটি দাওয়াতপত্র তৈরি করো (একক কাজ) ।

খ. একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করে তোমাদের লেখা কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে একটি দেওয়াল পত্রিকা তৈরি কবো (দলগত কাজ)।

 

 

নমুনা প্রশ্ন

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. ‘আমার শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে’— এখানে কোন শহিদের কথা বলা হয়েছে?

ক. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের

খ. বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের

গ. উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের

ঘ. নব্বইয়ের গণআন্দোলনের

কবিতাংশটি পড়ে ২ ও ৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :

‘আমার বৃদ্ধ পিতার শরীরে

এখন পশুদের প্রহারের

চিহ্ন;

কবিতাংশের ভাবের সাথে নিচের কোন লাইনটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়?

ক. তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি

খ. দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালব ফেব্রুয়ারি

গ. দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবি

ঘ. দিন বদলের ক্রান্তি লগনে তবু তোরা পার পাবি?

৩. উদ্দীপকে বর্ণিত পশুদের ন্যায় ‘একুশের গান’ কবিতায় পশু হচ্ছে—

i. ওরা এদেশের নয়— চরণের ‘ওরা’

ii. দিন বদলের ক্রান্তি লগনে তবু তোরা পার পাবি? –চরণের ‘তোরা’

iii. তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি – চরণের ‘তুমি’

নিচের কোনটি সঠিক

ক. i ও ii

খ. i ও iii

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. ‘ঝড়ের রাত্রে, বৈশাখী দিনে, বরষার দুর্দিনে

অভিযাত্রিক, নির্ভীক তারা পথ লয় ঠিক চিনে।

হয়তো বা ভুল, তবু ভয় নাই, তরুণের তাজা প্রাণ

পথ হারালেও হার মানে নাকো, করে চলে সন্ধান

অন্য পথের, মুক্ত পথের, সন্ধানী আলো জ্বলে

বিনিদ্র আঁখি তারকার সম, পথে পথে তারা চলে।’

 

২. “ওরা কেড়ে নিতে চায় বুকের স্বপ্ন, মায়ের মুখের ভাষা

ঝরিয়ে রক্ত, ভাইয়ের প্রাণ, হৃদয়ের ভালোবাসা।

জেগে উঠো আজ সাহসী যৌবন, আনো নব উত্থান

দ্রোহের আগুনে পোড়াও ওদের, গাও বিজয় গান। ‘

 

ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি কোন শহিদের স্মরণে লেখা হয়েছে?

খ. ‘সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা’- চরণটি ব্যাখ্যা কর ।

গ. দ্বিতীয় উদ্দীপকের আলোকে ‘একুশের গান’ কবিতায় বর্ণিত ‘ওরা এদেশের নয়’- চরণটি ব্যাখ্যা কর ।

ঘ. প্রথম উদ্দীপকের যিনি অভিযাত্রিক তিনিই ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা-শহিদ -বিশ্লেষণ কর।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version