একজন বীরশ্রেষ্ঠ, মোস্তফা কামাল [ Essay on A hero ] অথবা, একজন বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

Table of Contents
একজন বীরশ্রেষ্ঠ রচনার ভূমিকা:
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, একসময় এই দেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি অংশ ছিল। তখন পাকিস্তানিরা এ দেশকে শাসন করত। তারা নানাভাবে এ দেশকে শোষণ করেছে। তাদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল।
স্বাধীনতার জন্য এ যুদ্ধে বাংলাদেশের যেসব মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল, প্রাণ উৎসর্গ করেছিল, তাঁদের বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা। মোস্তফা কামাল এঁদেরই একজন। দেশকে মুক্ত করার জন্য তিনি যে সাহস ও বীরত্ব দেখিয়েছিলেন তার তুলনা হয় না, তাই তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
জন্ম:
মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাবিবুর রহমান। মোস্তফার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন হাবিলদার।
ছেলেবেলা:
মোস্তফা কামালের ছেলেবেলা কাটে বাবা-মার সঙ্গে কুমিল্লা সেনানিবাসে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব সাহসী ও ডানপিটে। বেশি লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তাঁর। মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলেন।
সৈনিক হওয়ার বাসনা:
বাবা সৈনিক হওয়ার সুযোগে মোস্তফা কামালের ছেলেবেলা কাটে কুমিল্লা সেনানিবাসে। এখানে তিনি সৈনিকদের সুশৃঙ্খল জীবনের সঙ্গে পরিচিত হন। ব্যান্ডের তালে তালে পা ফেলে প্রতিদিন কুচকাওয়াজ করতে করতে সৈন্যরা এগিয়ে যেত। কিশোর মোস্তফা কামাল দেখতেন আর ভাবতেন আমিও একজন সৈনিক হব।

সেনাবাহিনীতে যোগদান:
মোস্তফা কামাল ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালে চতুর্থ-ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়োগ লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
২৭ মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনাপর্ব। এ সময় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অস্থায়ী সদর দপ্তর আখাউড়ায় কর্মরত ছিলেন মোস্তফা কামাল। ২৭ মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণা করে যেসব সূর্যসন্তানেরা পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মোস্তফা কামাল তাঁদেরই অন্যতম একজন।
মোস্তফা কামালের কৃতিত্ব:
১৮ এপ্রিল, ১৯৭১। চারদিকে প্রচণ্ড শব্দ, অস্ত্রের গর্জন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বঙ্গোপসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রাম আক্রমণ করে। এ আক্রমণে একজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হলেন। পাশেই অবস্থানরত মোস্তফা কামাল এগিয়ে গেলেন। নিমেষে তুলে নিলেন তাঁর অস্ত্র। অবিরাম গুলি চালালেন, উপায়ান্তর না দেখে অধিনায়কসহ সবাই পিছু হটলেন।
মোস্তফা কামালের অসীম সাহসের জন্যই তাঁর পুরো কোম্পানি পশ্চাদপসরণ করে সেবারের মতো জীবন রক্ষা করলেন। কিন্তু শত্রু সেনারা তাঁকে ছাড়ল না। অন্য দিক দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে তারা মোস্তফা কামালকে ঘিরে ফেলল। মৃত্যু অবধারিত জেনেও তিনি ভয় পেলেন না, আত্মসমর্পণও করলেন না।
বাঘের মতো শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল গুলি চালিয়ে গেলেন। অবশেষে যুদ্ধ করতে করতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।

উপসংহার:
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল পুরো শত্রুবাহিনীকে ঘায়েল করতে পারেননি, কিন্তু বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন নিজের একটি কোম্পানিকে। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামালের কথা আমরা কোনো দিনও ভুলব না। বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তাঁর মহান আত্মত্যাগের কথা চির দিন স্মরণ রাখবে।
আরও পড়ুনঃ