ঊ কার ব্যবহারের নিয়ম | শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম

শুদ্ধ বাংলা বানান নিশ্চিত করতে “ঊ-কার” (ূ) এর সঠিক ব্যবহার জানা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় ভুল প্রয়োগের কারণে শব্দের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই আলোচনাটি মূলত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পলিটেকনিক ডিসিপ্লিনের বাংলা (৬৫৭১১) কোর্স অনুযায়ী প্রণীত, যা ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সহ প্রায় সব প্রযুক্তির পাঠ্যক্রমের অংশ।

এছাড়া, পলিটেকনিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (ক্লাস ১১–১২) পর্যায়ের সিলেবাসে অনেক মিল থাকায় এই পাঠ এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্যও সমানভাবে সহায়ক। পাশাপাশি, বিসিএস, ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

 

ঊ কার ব্যবহারের নিয়ম

 

ঊ-কার ব্যবহারের মৌলিক নিয়ম

ক) তৎসম শব্দে

বাংলায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দে যেখানে ঊ বা ঊ-কার আছে, সেখানে কখনোই তা পাল্টানো যাবে না। কারণ এগুলোর ব্যাকরণগত নিয়ম নির্দিষ্ট। বাংলায় এমন শব্দ খুব কমই আছে এবং সেগুলো দেখে দেখে সহজেই আয়ত্ত করা যায়।
উদাহরণ: কূল, রূপ, ধূলি, পূর্ব, মূল, শূন্য, পূর্ণ, দূরত্ব, মূর্খ, স্বয়ম্ভূ, মুহূর্ত, মুমূর্ষু, সূর্য ইত্যাদি।

খ) স্বরসন্ধির কারণে

কিছু ক্ষেত্রে স্বরসন্ধির ফলে ঊ-কার গঠিত হয়।

  • উ + উ = ঊ

  • উ + ঊ = ঊ

উদাহরণ:

  • কটু + উক্তি = কটূক্তি

  • মৃত্যু + উত্তীর্ণ = মৃত্যূত্তীর্ণ

  • লঘু + ঊর্মি = লঘূর্মি

  • তনু + ঊর্ধ্ব = তনূর্ধ্ব

 

উ কার ব্যবহারের নিয়ম

 

কিছু প্রচলিত বানান ভুল ও সঠিক প্রয়োগ

১. ‘দূ’ ও ‘দু/দুঃ’

  • দুঃ/দু উপসর্গ অর্থ মন্দ, খারাপ বা কষ্টকর।
    উদাহরণ: দুঃসহ, দুর্ভোগ, দুর্জন, দুস্থ, দুষ্পাচ্য, দুর্দশা ইত্যাদি।

  • দূ ব্যবহৃত হবে দূরত্ব বোঝাতে বা তৎসম কারণে।
    উদাহরণ: দূর, দূরবর্তী, দূষণ, দূত, দূর্বা ইত্যাদি।

তাই দূর্বল, দূর্জয়, দূর্ভাগ্য ভুল; শুদ্ধ হবে দুর্বল, দুর্জয়, দুর্ভাগ্য

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

২. ভূ বনাম ভু

  • ভূ (পৃথিবী অর্থে) – শুদ্ধ রূপ: ভূগোল, ভূমি, ভূমিষ্ঠ, ভূ-পৃষ্ঠ, ভূপতি।

  • ভুবন শব্দটি তবে হ্রস্ব উ দিয়ে লেখা হবে।
    তাই ভুগোল, ভুমি এগুলো ভুল।

 

 

৩. অদ্ভুত ও ভুতুড়ে

  • শুদ্ধ রূপ: অদ্ভুত, উদ্ভূত, আবির্ভূত, দ্রবীভূত, পরাভূত ইত্যাদি (দীর্ঘ ঊ)।

  • তবে একমাত্র ভুতুড়ে শব্দে ‘ভুত’ প্রমিত (হ্রস্ব উ)।

 

 

৪. রূপা না রুপা?

  • রুপা ও রূপা – উভয়ই শুদ্ধ, তবে ‘রুপা’ প্রমিত বানান

  • রূপ অর্থ সৌন্দর্য হলে শুদ্ধ হবে রূপসী (না যে ‘রুপসী’)।

 

 

৫. পুন/পুনঃ

  • শুদ্ধ: পুনরাগমন, পুনর্মিত্রতা, পুনর্বিন্যস্ত, পুনর্মূষিকোভব ইত্যাদি।
    তাই পূনর্বিন্যস্ত, পূনর্মিত্রতা – ভুল।

 

 

ঊ কার ব্যবহারের নিয়ম

 

বাংলা বানানে ঊ-কারের সঠিক ব্যবহার আয়ত্ত করলে শুধু পরীক্ষায় নয়, দৈনন্দিন লেখালেখিতেও শুদ্ধতা বজায় থাকে। ভুল প্রয়োগের কারণে অর্থের বিভ্রান্তি এড়াতে হলে তৎসম শব্দ, উপসর্গ এবং স্বরসন্ধির নিয়ম ভালোভাবে জানা জরুরি।

 

ঊ কার ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত :

 

Leave a Comment