Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

উপসর্গ ও উপসর্গের কাজ

উপসর্গ ও উপসর্গের কাজ নিয়ে আজকের আলাপ। বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে, যা স্বাধীন পদ হিসাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। এগুলো অন্য শব্দের আগে বসে। এর প্রভাবে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয় এবং শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয়, কিংবা শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ অথবা সংকোচন ঘটে। ভাষায় ব্যবহৃত এসব অব্যয়সূচক শব্দাংশের নাম উপসর্গ।

অথবা, ধাতু বা শব্দের পূর্বে কতিপয় সুনির্দিষ্ট অব্যয়জাতীয় শব্দাংশ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দে অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ বা সংকোচন ঘটিয়ে থাকে। এদের বলা হয় উপসর্গ। যেমন: “মান” একটি শব্দ। এর আগে ‘অপ’ যুক্ত হলে হয় ‘অপমান’। যদি “পরি” যুক্ত হয় তাহলে পরিমাণ হবে। ‘প্র’ যোগে হবে ‘প্রমাণ’। ‘অনু’ সহযোগে হয় ‘অনুমান’; ‘অতি’ সহযোগে ‘অভিমান’। মূল ‘মান’ শব্দের অর্থ থেকে উপসর্গযোগে তৈরি শব্দগুলোর অর্থ কত আলাদা হতে পারে তা প্রায় অবিশ্বাস্য।

এরূপ— ‘পূর্ণ’ (ভরা) শব্দের আগে ‘পরি’ যোগ করায় পরিপূর্ণ হল। এটি ‘পূর্ণ’ শব্দের সম্প্রসারিত রূপ (অর্থে ও আকৃতিতে)। ‘হার’ শব্দের পূর্বে ‘আ’ যুক্ত করে ‘আহার’ খাওয়া), ‘প্র’ যুক্ত করে ‘প্রহার’ (মারা) ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়েছে।

উপসর্গ ও উপসর্গের কাজ | ভাষা ও শিক্ষা

উপসর্গ কথাটির অর্থ “উপসৃষ্টি’। উপসর্গগুলো এক ধরনের অব্যয়। এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই এবং পৃথকভাবে এদের প্রয়োগও হয় না। উপসর্গের কাজ নতুন শব্দ সৃষ্টি করা। উপসর্গ শুধু শব্দই সৃষ্টি করে না, শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মূলের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, অর্থের বিশিষ্টতা দান করে। এক কথায় বলা চলে — শব্দগঠনে অর্থের দিক থেকে বৈচিত্র্য আনাই উপসর্গের কাজ। উপসর্গ যুক্ত হলে শব্দের পাঁচ ধরনের পরিবর্তন ঘটে–

১.  নতুন অর্থবোধক শব্দের সৃষ্টি হয়। যেমন ছায়া থেকে প্রচ্ছায়া।

২।  শব্দের অর্থ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন : পুষ্টি থেকে পরিপুষ্টি।

৩।  শব্দের অর্থ সম্প্রসারিত হয়। যেমন : তাপ থেকে প্রতাপ, পরিতাপ।

৪।  শব্দের অর্থের সীমা সংকুচিত হয়। যেমন : রাজি থেকে নিমরাজি।

৫।  শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। যেমন কথা থেকে উপকথা।

 

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংস্কৃত উপসর্গ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন,

“সংস্কৃত ভাষায় কতকগুলো টুকরো শব্দ আছে যেগুলোর স্বতন্ত্র কাজ নেই, তারা বাক্যের লাইন বদলিয়ে দেয়। রেলের রাস্তায় যেমন সিগন্যাল, ভিন্ন দিকে ভিন্ন রঙের আলোয় তাদের ভিন্ন রকমের সংকেত, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপসর্গগুলো শব্দের মাথায় চড়া সেইরকম সিগন্যাল। কোনোটাতে আছে নিষেধ, কোনোটা দেখায় এগোবার পথ, কোনোটা বাইরের পথ, কোনোটা নীচের [নিচের দিকে, কোনোটা উপরের দিকে, কোনোটা চার দিকে, কোনোটা ডাকে ফিরে আসতে। ‘গত’ শব্দে আ উপসর্গ জুড়ে দিলে হয় ‘আগত’, সেটা লক্ষ করায় কাছের দিক, ‘নির’ জুড়ে দিলে হয় “নির্গত’, দেখিয়ে দেয় বাইরের দিক; “অনু” জুড়ে দিলে হয় ‘অনুগত’, দেখিয়ে দেয় পিছনের দিক, তেমনি “সংগত’, ‘দূর্গত’, ‘অপগত’ প্রভৃতি শব্দে নানা দিকে তর্জনী চালানো। উপসর্গ থাকে সামনে, প্রত্যয় থাকে পিছনে। তারা আছে একই শব্দের নানা অর্থ বানাবার কাজে।”

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version