উপসর্গের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আজকের আলাপ। উপসর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, ‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’, উপসর্গগুলোর প্রত্যেকটি এক একটি শব্দাংশ বা শব্দখন্ড। এদের নিজেদের কোনো অর্থ নেই, বা পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয় না। কেবল ধাতু বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হলেই এরা শব্দ গঠন করে এবং অর্থের বৈচিত্র্য সাধন করে।
Table of Contents
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিভাগ | ভাষা ও শিক্ষা
উপসর্গ যখন শব্দ গঠন করে তখন গঠিত শব্দের মাধ্যমে মূল ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, সংকোচন বা অর্থের পূর্ণতা সাধন করে। হৃ (হরণ করা) ধাতু থেকে ‘হার’ শব্দটি এসেছে। এই ‘হার’-এর পূর্বে বিভিন্ন উপসর্গ যোগে অনেকগুলো নতুন শব্দ গঠিত হতে পারে।
এভাবে অর্থহীন উপসর্গগুলো বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি করে বলে বলা হয় যে, “উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে।’ উপসর্গগুলোর সঙ্গে কোনো বিভক্তি বা প্রত্যয় যুক্ত হয় না বলে এদের রূপের কোনো পরিবর্তন হয় না। এজন্য ব্যাকরণে উপসর্গকে অব্যয় বলেও গণ্য করা হয়।
ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, উপসর্গের সংস্কৃত সংজ্ঞার্থ — উপসর্গের দ্বারা ধাতুর অর্থ বলপূর্বক অন্যত্র নীত হয়— বাংলা ভাষায় এরূপ অচল, কেননা বাংলা ভাষায় শুধু কৃদন্ত পদের পূর্বে নয়, নাম শব্দের পূর্বেও কতকগুলো অব্যয় শব্দ ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায় ইংরেজি ব্যাকরণের Prefix বা উপশব্দের প্রভাবে যে কোন নাম বা কৃদন্ত শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত অব্যয় শব্দকে উপসর্গ বলে স্বীকার করা হয়।
বাংলা ভাষায় যেসব উপসর্গের ব্যবহার আছে সে-সব খাঁটি বাংলা উপসর্গ নয়। বেশির ভাগ উপসর্গ এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। এছাড়া বিদেশি ভাষা থেকেও কিছু উপসর্গ এসেছে। বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ আছে। যথা- ১. বাংলা উপসর্গ ২. সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ ও ৩. বিদেশি উপসর্গ
১। বাংলা উপসর্গ :
বাংলা ভাষায় খাটি বাংলা উপসর্গের সংখ্যা বর্তমানে ২১টি। খাঁটি বাংলা শব্দের আগে এগুলো যুক্ত হয়। যথা : অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন (উনা), কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।
শব্দ গঠন : অ + কাজ – অকাজ, অঘা + চন্ডী অঘাচন্ডী, তর + দুপুর – ভরদুপুর ইত্যাদি।
২। সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ :
তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গের সংখ্যা ২০টি। এগুলো তৎসম শব্দ বা ধাতুর আগে যুক্ত হয়। যথা: প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দূর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অভি,
অপি, উপ, আ। শব্দ গঠন: পরা + জয় পরাজয়, প্রতি + বাদ প্রতিবাদ, অনু + সরণ – অনুসরণ।
৩। বিদেশি উপসর্গ :
বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি উপসর্গেরও আগমন ঘটেছে। বাংলা ভাষার সঙ্গে এসব উপসর্গ ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গেছে। বিভিন্ন শব্দের আগে এগুলো যুক্ত হয়। যেমন :
ইংরেজি : ফুল, হাফ, হেড, সাব। যেমন : হাফ হাতা =হাফ হাতা, হেড+ পণ্ডিত = হেড পণ্ডিত
আরবি : আম, ঘাস, র, লা, খয়ের, বাজে। যেমন খাস জমি খাসজমি, আম + দরবার আমদরবার, গা + জাওয়ার লাজওয়াব, গর + হাজির – গরহাজির ইত্যাদি।
ফারসি : – কার, দর, না, নিম, ফি, বদ, বে, বর, ব, কম। যেমন নিমরাজি নিমরাজি,
ফি+ বছর ফিবছর, বদ + খেয়াল – বদখেয়াল, কম + জোর = কমজোর ইত্যাদি।
উর্দু ও হিন্দি : হর, হরেক। যেমন : হর+দম = হরদম, হয় + এক হয়ের, হরেক + রকম – হরেকরকম ইত্যাদি।

আরও দেখুন: