উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্ককরণ তৈরি করবেন। সাধারণত ভাব সম্প্রসারণ করার জন্য প্রদত্ত কবিতার অংশ অথবা গদ্যের অংশ অতিসংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। আর এই ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সহস্ত্র ভাবের ইঙ্গিত। আর এইভাবে রিংগিত কে সম্প্রসারণ করার জন্য অবশ্যই সতর্কতার সাথে সেই মৌলিক বিষয় খুঁজে বের করতে হয় এবং এর মাধ্যমে ভাব সম্প্রসারণ করতে হয়।

উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে

উত্তম আর অধমের জীবনপথে কোনো সংকট নেই। কিন্তু যে মধ্যম তার সমস্যার জটিলতা আছে, তার সংকট অনেক বেশি। নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্যে তাকে সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই সে সকলের সঙ্গে মিশতে পারে না। তার অবস্থান স্বতন্ত্র অস্পষ্ট। সে দোলাচলে ভোগে।

 

উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে

 

মানুষের চালচলন ও আচার-আচরণে— এক কথায়, মৌলিক চরিত্র-বিচারে মানব-সমাজকে তিনটি সুস্পষ্ট শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয় : উত্তম, মধ্যম ও অধম। উত্তমের চারিত্রিক পরিচয় হল – সে শ্রেষ্ঠ; অধমের চারিত্রিক পরিচয়— সর্ববিষয়ে সে নিকৃষ্ট। কিন্তু যত গোলমাল মধ্যমকে নিয়ে। উত্তম এবং অধমের শ্রেণী-চরিত্র সুস্পষ্ট, তাতে কোনোরূপ ভ্রান্তি-প্রমাদের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু মধ্যমের শ্রেণী-চরিত্র বড়ই রহস্যময়। সে অত্যন্ত সাবধানী— সদাসতর্ক। তার সুস্পষ্ট পরিচয় জানার উপায় নেই; তাই তার কাছে পদে পদে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা।

কিন্তু সমাজে যিনি চরিত্রগুণে বলীয়ান, যিনি মহৎ ও ব্যক্তিত্ববান তার কোনোরূপ স্খলনের ভয় নেই। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তাই তাঁর শক্তি। তাঁর রয়েছে অপরিমেয় আত্মবিশ্বাস। তিনি কোনো খারাপ বা নিকৃষ্ট কাজ করতে পারেন না, বরং ওইসব খারাপ কাজ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তাই তিনি সমাজের সর্বস্তরের, সর্বশ্রেণীর লোকের সঙ্গে অনায়াসে, অসংকোচে মিশতে পারেন। পৃথিবীর যে-সব মানুষ তাঁদের হৃদয়ের মহত্ত্বে, উদারতায় এবং দুর্লভ চরিত্র-সুষমায় বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন, তাঁরা মানবজাতির কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে তাদের হৃদয়ের সিংহাসনে রয়েছেন চির- প্রতিষ্ঠিত; মানুষ নির্দ্বিধায় তাঁদের পদতলে রাখে হৃদয়ের স্বতোৎসারিত ভক্তি-শ্রদ্ধার নির্মাল্য।

 

উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে

 

তাঁরা মানুষের পরমাত্মীয়। মানুষের দুঃখ-মোচনের ব্রতে নিজেদের যথাসর্বস্ব, এমন-কি প্রাণ পর্যন্ত দান করে তাঁরা মানব- হিতৈষণার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যান। অন্যদিকে যারা অধম— খল, কপট এবং মানবতার শত্রু, তাদের সম্বন্ধেও বিশ্ববাসীর মনে কোনো সংশয় থাকে না। তারা আলোকের বিপরীত মেরুর অধিবাসী। তাদের নীচতা, ক্রূরতা এবং হীনম্মন্যতা সম্পর্কে পৃথিবী সচেতন।

তাদের চালচলন, রীতিনীতি এবং কথায়-বার্তায় তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও সুচিহ্নিত; সুতরাং তাদের কাছে প্রতারিত হবার তেমন কোনো সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় মধ্যপন্থীদের নিয়ে। তাদের যেমন শ্রেণীচরিত্র সুস্পষ্ট নয়, তেমনি তাদের চালচলন, রীতিনীতি বড়ই রহস্যাবৃত। তারা চরিত্রবলে অত দৃঢ় নন, নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, স্বাধীন মতামত দিতে পারেন না- এ ধরনের লোক দুর্বলচিত্ত ও নানা সংশয়ে ভোগেন। তারা আসলে ছদ্মবেশী, স্বার্থপর সুবিধাবাদীর দল। তারা এক দুর্বোধ্য ছদ্মবেশের অন্তরালে সর্বদা আত্মগোপন করে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পানি না ছুঁয়েই তারা মাছ শিকারে অত্যন্ত দক্ষ, যে-কোনো রূপ বিপদ-বাধা, দুঃখ-যন্ত্রণাকে এড়িয়ে সকলকে ফাঁকি দিয়ে, সুযোগ-সুবিধার সন্ধানে অনায়াসে উপনীত হয় তারা। তারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য কখনো ধারণ করে উত্তমের ছদ্মবেশ, কখনো ধারণ করে অধমের বেশবাস। তাই পৃথিবীতে তাদের দ্বারা পদে পদে প্রতারিত হবার থাকে সমূহ সম্ভাবনা। তাদের সম্পর্কে মানুষকে তাই থাকতে হয় সদা-সতর্ক। যিনি চরিত্রবান ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি হীন-অধম-নীচ সবার সঙ্গে মিশতে পারেন। কারণ তাঁর মনে কোনো দোলাচলবৃত্তি নেই, তেমনি নেই কোনো দুর্বলতা। সুতরাং আমাদের চরিত্রের দৃঢ়তা অর্জন করতে হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment