বাংলা সাহিত্যের আলোচিত কবি আবুল হাসানের রচিত কবিতা উচ্চারণগুলি শোকের একটি গভীর মানসিকতা এবং মানবিক অনুভূতির প্রতিফলন। এই কবিতায় তিনি শোকের বহুমাত্রিক দিকগুলোকে সূক্ষ্মভাবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে শোক শুধুমাত্র দুঃখ নয়, বরং মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবুল হাসানের ভাষা সাদামাটা হলেও অর্থপূর্ণ, যা পাঠকের হৃদয়ে সরাসরি প্রবেশ করে। উচ্চারণগুলি শোকের কবিতাটি মানুষের অন্তরাত্মার অনুভূতিকে স্পর্শ করে এবং জীবনের যন্ত্রণাকে এক শিল্পময় রূপে প্রকাশ করে। এই কবিতার মাধ্যমে আবুল হাসান শোকের বহুমাত্রিকতা ও তার প্রভাব নিয়ে গভীর ভাবনার উদ্বোধন করেছেন, যা পাঠকদের চিন্তা-ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
উচ্চারণগুলি শোকের – আবুল হাসান
লক্ষ্মী বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখি না,
হাঁটি হাঁটি শিশুটিকে কোথাও দেখি না;
কতগুলি রাজহাঁস দেখি,
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি
কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখি না
শিশুটিকে কোথাও দেখি না।
তবে কি বউটি রাজহাঁস
তবে কি শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ?
অনেক যুদ্ধ গেল
অনেক রক্ত গেল
শিমুল তুলোর মতো সোনা-রুপো ছড়াল বাতাস।
ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না,
নরম নোলকপরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখি না।
কেবল পতাকা দেখি,
কেবল পতাকা দেখি,
স্বাধীনতা দেখি!
তবে কি আমার ভাই আজ ওই স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন তিমিরের বেদিতে উৎসব?
চুয়াত্তরের প্রসব যন্ত্রনা এবং – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
by রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহরুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
চিরদিন যে রমনী গভীর বিশ্বাসে
খুলে দিয়েছে শরীরের যাবতীয় পোশাক
সময়ে_অসময়ে, কালে-অকালে
বার বার মেতেছে নিষিদ্ধ অবৈধ সংগমে,
প্রতিবার এক উষ্ম প্রত্যয়ে হয়েছে অন্তসত্ত্বা ।
যে রমনী শুয়ে আছে স্নেহের অশ্লীল ভঙ্গিতে
তার তপ্ত ঘামের সোঁদা ঘ্রাণে একদিন অবক্ষয় ছেড়ে
আমি জ্বলন্ত যুবক হয়ে শুয়ে ছিলাম বিপরীতে ।
বায়ান্নর অবৈধ প্রসব তার স্বপুরুষ আজ
একাত্তরের সন্তান তার যক্ষাক্রান্ত হলো ।
সে যক্ষা একাত্তরের নয়- সে যক্ষা আমার-
সে কঠিন যক্ষা আমাদের সমস্ত শরীরে ।
বিদেশী নোতুন মডেলের দুরন্ত চাকায়
মুছে গেছে জন্মের রক্ত, কিশোরী আকাংখা ।
আমার আধগতি দেখে বন্ধুরা হাসে বলে ‘এ কেমন সন্তান হলো!’