ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ জানিয়ে ছোট ভাইকে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চিঠি আদানপ্রদান করেছে, ইলিয়াডে তার উল্লেখ ছিল। হিরোডোটাস এবং থুসিডাইডিসের রচনাবলীতেও তা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ জানিয়ে ছোট ভাইকে পত্র
কলেজ ছাত্রাবাস, খুলনা ১৫ এপ্রিল, ২০০০
স্নেহের ‘ক’,
আমার আদর ও স্নেহ নিও। গতদিন তোমার চিঠি পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছি তুমি প্রথম স্থান অধিকার করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছ। ভবিষ্যতেও তুমি এ-রকম কৃতিত্ব দেখাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
তুমি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে চাও এবং এ-বিষয়ে আমার পরামর্শ চেয়েছ। এক কথায় উত্তর করলে বলতে হয় যে, তুমি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছ এবং তোমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমরা এখন একুশ শতকের মানুষ, বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অগ্রগতি নিয়ে এই শতকে পদার্পণ করেছি। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। নতুন পৃথিবী, নতুন স্বপ্ন। পৃথিবীর মানুষ এই নতুন স্বপ্নে বিভোর। তুমি নিশ্চয়ই জান যে, পৃথিবী দ্রুত বদলে যাওয়ার মূলে রয়েছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। আর এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির অন্যতম অবদান হলো ইন্টারনেট।
ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিসই ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সমূহের একটি বিশ্বব্যবস্থা। যেহেতু তোমার নিজের একটি কম্পিউটার রয়েছে এবং কম্পিউটার সম্পর্কে অল্প-বিস্তর ধারণাও আছে, তাই ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে তোমার এখন থেকেই সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। তুমি জেনে অবাক হবে যে, ইন্টারনেট একটি বিশাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যার বিস্তৃতি পৃথিবীময়। বিশ্বের লাখ লাখ বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি লোকের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেটের শত-সহস্র ব্যবহারিক সুবিধার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল দেশ-বিদেশের সকল প্রকার শিক্ষা ও গবেষণার যাবতীয় তথ্য সহজভাবে জানা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে আমেরিকার ‘ইউনাইটেড স্টেট অব কংগ্রেস’ বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ বিশ্বের যে কোনো লাইব্রেরির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং দুষ্প্রাপ্য তথ্যাদি জানা যায়। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আমদানী-রপ্তানী, সরকারি-বেসরকারিসহ অনেক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অটোমেটিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে।

চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, ইন্টারনেট বা অনলাইনে আবেদপত্র জমা, সরকারি বিভিন্ন ফরম, জাতীয় পরীক্ষার ফল, অনলাইনে পণ্য বেচাকেনা, দেশি-বিদেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, ডিজিটাল ফটো ও ভিডিও এবং শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার আজকাল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। আশা করা হচ্ছে ক্রমান্বয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে পরিণত করা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বময় জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তুমি হয়ে ওঠতে পার আধুনিক বিশ্বের একজন সচেতন ও উৎপাদনশীল নাগরিক। তবে, ইন্টারনেটের সোসাল ন্যাটওয়ার্কিং যেমন— ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগিং ইত্যাদিসহ আরও কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান ও সচেতন হতে হবে; যেন ইন্টারনেট তোমার জন্য কুফল বয়ে না আনে।
তোমার নিরন্তর মঙ্গল কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখবে। মনে রাখবে, সুস্থ দেহ ও মনই সফলতার চাবিকাঠি। আব্বু-আম্মুর নিকট চিঠি দিও। ভালো থেকো।
ইতি তোমার
বড় ভাই
আরও দেখুন: