আসাদের শার্ট কবিতা – আসাদের রক্তমাখা শার্ট গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের জ্বলন্ত মেঘের মতো ঢাকা শহরের হাওয়ায় ওড়ে। আসাদের শার্ট হয়ে ওঠে প্রাণের পতাকা। কবি শামসুর রাহমান লিখে ফেলেন তাঁর অমর কবিতা ‘আসাদের শার্ট’।
আসাদের শার্ট কবিতা – শামসুর রাহমান
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় ।
বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে ।
ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শেভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চূড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় ।
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।
আসাদের শার্ট কবিতা ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত)ঃ
হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সেই সাহস আর প্রতিবাদের ভাষায় উজ্জীবিত হয়ে বের করে এক শোক মিছিল। উল্লেখ্য যে, মেয়েরাই প্রথম শুরু করেছিল এই মিছিল। পুরোভাগে মেয়েরা থাকলেও ক্রমে সবাই যোগ দেয় তাতে। ছাত্র, সাধারণ মানুষ, ছোট-বড় অফিস আদালতের কর্মচারী, সবাই। দুই মাইল দীর্ঘ এই মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করেছিল সেদিন এই শার্ট নিয়ে।
শেষ হয়েছিল এসে শহীদ মিনারে। ‘আসাদের মন্ত্র/জনগণতন্ত্র’—নতুন এই স্লোগান তৈরি হয়েছিল ঢাকায়। বাঙালি অবাক হয়ে দেখেছিল ভীরুতার দিন শেষ। এবার গর্জে ওঠার দিন। ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য। এবার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়। আসাদের রক্তমাখা শার্ট গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের জ্বলন্ত মেঘের মতো ঢাকা শহরের হাওয়ায় ওড়ে। আসাদের শার্ট হয়ে ওঠে প্রাণের পতাকা। কবি শামসুর রাহমান লিখে ফেলেন তাঁর অমর কবিতা ‘আসাদের শার্ট’। এভাবেই আসাদ নামের তরুণটি বাঙালির হৃদয়ে চিরকালের জন্য ঠাঁই পেয়ে যান।

পরদিন আসাদকে গ্রামের বাড়ি ধানুয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ওইদিন মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার পল্টনে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ২২ জানুয়ারি ১৯৬৯ সংখ্যায় লিখল: ঢাকা স্টেডিয়ামে শহীদ ছাত্রটির জন্য প্রার্থনায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে, যেখানে বিরোধী দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
আসাদের মৃত্যু নানা দিক দিয়ে তাৎপর্যময়। কেননা, এই মৃত্যু একটি গণ-আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিয়েছিল। এই মৃত্যুর ঠিক চার দিন পর ঢাকা শহরের পরিস্থিতি মোনায়েম খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং আইয়ুব শাহির পতন ঘটে।
আসাদের শার্ট কবিতা বিশ্লেষণ ঃ
আরও দেখুনঃ