Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

আশা কবিতা || সিকানদার আবু জাফর

dakhil ssc class 9 10 bangla 1st 7 আশা কবিতা || সিকানদার আবু জাফর

আশা কবিতা মাদ্রাসা দাখিল বাংলা , এসএসসি বাংলা প্রথম পত্রের, সাহিত্যপাঠ বই এর অংশ। পাশাপাশি এই ক্লাসটি পলিটেকনিক এর বাংলা (৬৫৭১১) বিষয় এর অংশ।

 

সিকান্দার আবু জাফর

 

 

সিকান্দার আবু জাফর (১৯ মার্চ ১৯১৮/১৯১৯ – ৫ আগস্ট ১৯৭৫) একজন বাঙালি কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক। তিনি ভারত বিভাগোত্তর কালে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা সমকাল সম্পাদনার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। তার একটি বিখ্যাত কবিতা হলো “জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে বাঁচবার অধিকার কাড়তে দাস্যের নির্মোক ছাড়তে অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ চলবেই চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই” এটি পরে জনপ্রিয় গণসঙ্গীতে রূপান্তরিত হয়।

 

আশা কবিতা

 

কবি পরিচিতি :

খুলনা জেলার তেতুলিয়া গ্রামে ১৯১৯ সালে সিকানদার আবু জাফর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেমী পেশায় ছিলেন কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ী। সিকানদার আবু জাফর ১৯৩৬ সালে তালা বি.দে. ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অতঃপর কিছুকাল কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন সাংবাদিক। দেশ বিভাগের পরে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করেন। এ সময় তিনি রেডিও পাকিস্তানে  চাকরি থেকে শুরু করে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল প্রভৃতি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা আন্দোলন বেগবান করে তোলার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সংস্কৃতিক কর্মী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর লেখা ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে’ গানটি স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর গণসঙ্গীত ও কবিতা মেহনতী মানুষের মুক্তির প্রেরণায় সমৃদ্ধ।

সিকানদার আবু জাফরের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : প্রসন্ন প্রহর, বৈরী বৃষ্টিতে, তিমিরান্তক, লগ্ন, মালব কৌশিক ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। ৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে সিকানদার আবু জাফর মৃত্যুবরণ করেন।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আশা

আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই,

যেথায় গভীর-নিশুত রাতে

জীর্ণ বেড়ার ঘরে

নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে ভাই ॥

যেথায় লোকে সোনা-রূপায়

পাহাড় জমায় না,

বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনায়

আয়ু কমায় না;

যেথায় লোকে তুচ্ছ নিয়ে

তুষ্ট থাকে ভাই ॥

সারাদিনের পরিশ্রমেও

পায় না যারা খুঁজে

একটি দিনের আহার্য-সঞ্চয়,

তবু যাদের মনের কোণে

নেই দুরাশা গ্লানি,

নেই দীনতা, নেই কোনো সংশয়।

যেথায় মানুষ মানুষেরে

বাসতে পারে ভালো

প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে

জ্বালতে পারে আলো,

সেই জগতের কান্না-হাসির

অন্তরালে ভাই

আমি হারিয়ে যেতে চাই ॥

 

পাঠ পরিচিতি :

সিকানদার আবু জাফরের ‘মালবকৌশিক’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। জাগতিক এই পৃথিবী ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। মানুষ ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের বাড়ছে ব্যবধান। কারও মনেই যেন শান্তি নেই। বিত্ত-বৈভব অর্জন করা আর সুখের দুর্ভাবনায় তাদের আয়ু কমে যাচ্ছে। কিন্তু কবি এসব অতিক্রম করে যেতে চাইছেন সেইসব মানুষের কাছে যারা প্রকৃত অর্থেই মানুষ। মনুষ্যত্বের আলো যারা জ্বালিয়ে রেখেছেন। দরিদ্র হলেও এই মানুষ বিত্তের পেছনে ছোটে না। সোনা-রূপার পাহাড় গড়ে তোলে না।

 

জীর্ণ ঘরে বসবাস করেও তারা সুখী। তুচ্ছ, ছোট ছোট আনন্দ অবগাহনেই কাটে তাদের দিন। সারাদিন তারা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে, তাতে হয়তো একটি দিনের আহার্যও জোটে না। তবু কোন দুরাশা বা গ্লানি তাদের গ্রাস করে না। কোন দীনতা বা সংশয়ে তাদের জীবন ক্লিষ্ট নয়। বরং দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও তারা মানুষকে ভালবাসতে পারে। প্রতিবেশীকে সাহায্য করে। কবি মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষে সান্নিধ্য পেতে চাইছেন, হারিয়ে যেতে চাইছেন তাদের মাঝে। তিনি মনে করেন, এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মানুষ।

 

আশা কবিতা বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version