সড়ক দুর্ঘটনা তার কারণ ও প্রতিকার আলোচনা সভায় ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

সড়ক দুর্ঘটনা তার কারণ ও প্রতিকার আলোচনা সভায় ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা আজ অত্যন্ত একটি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনায় অংশ নিচ্ছি। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সৃষ্ট স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোরে সংবাদপত্র হাতে নিলেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার আহত ও নিহতদের মর্মান্তিক দুঃসংবাদ। আজকাল শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে চলাফেরা রীতিমত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বর্তমানে বাসায় সঠিক সময়ে কেউ না ফিরলে যে কথাটি সর্ব প্রথম মনে উদয় হয় তা হল- সড়ক দুর্ঘটনা। এ কারণে আজ সর্বমহল থেকে দাবি উঠেছে, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। সুধীবৃন্দ, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার যেসব চিত্র পাওয়া যায় তা সত্যিই ভয়াবহ দুঃখজনক।

সড়ক দুর্ঘটনা তার কারণ ও প্রতিকার আলোচনা সভায় ভাষণ

 

সড়ক দুর্ঘটনা তার কারণ ও প্রতিকার আলোচনা সভায় ভাষণ

 

সম্মানিত সভাপতি, আমন্ত্রিত আলোচকবৃন্দ ও সুধীবৃন্দ

দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ছিনিয়ে নিচ্ছে মানুষের অমূল্য জীবন, ভেঙে দিচ্ছে অসংখ্য সাজানো সংসার। স্বজন হারা মানুষের আহাজারি, পিতৃহারা সন্তানের আকুতি ‘আর যেন কোন সন্তানকে এতিম হতে না হয়।’ সরকারি হিসাবেই এ সংখ্যা বছরে প্রায় চারশ’। কোথাও বাসের সাথে বাসে, কোথাও বাসে-ট্রাকে, কোথাও টেম্পু-বাসে ঘটে এ দুর্ঘটনা। আবার কোথাও রিক্সা বা নিরীহ পথচারীকে চাপা দেয় দ্রুতগামী বাস বা ট্রাক, কেড়ে নেয় অমূল্য মানবজীবন। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়।

নানাবিধ কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হল :

(১) চালকদের অসাবধানতা, অদক্ষতা ও লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক ।

(২) ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন।

(৩) রাস্তার স্বল্পতা ও অপ্রশস্ততা।

(৪) প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালানো এবং ওভারটেকিং দুর্ঘটনার জন্যে সবচেয়ে বেশি দায়ী।

(৫) প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশের অভাব ও ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করা।

(৬) রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা। ওভারব্রিজের স্বল্পতা।

(৭) অসাবধানে রাস্তা পারাপার বা রাস্তা পারাপারের নিয়ম না জানা।

(৮) রিক্সা ও ভ্যানের সংখ্যাধিক্য এবং সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা;

(৯) ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ ও ক্ষেত্রবিশেষে বদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অদক্ষ রিক্সাচালকদের রিক্সা ও ভ্যান চালনা।

(১০) ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা স্বল্পতা ও দায়িত্বহীনতা;

(১১) বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করে যখন-তখন যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি।

(১২) অতিরিক্ত মাল ও যাত্রী বোঝাই, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পথ অবরোধ, পথ-সভা, হরতাল প্রভৃতি কারণে যানজট সৃষ্টির ফলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।

এর ফলে অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে ছোটখাট আরও নানাবিধ কারণ রয়েছে। প্রিয় সুধীবৃন্দ, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনার হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি বলে তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়। বিআরটিএ- র এক জরিপ মতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহাণি ছাড়াও বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছরে ৫ হাজারেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এসব দুর্ঘটনায় ১ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারায় এবং ১০ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়। বিগত ৫ বছরে (২০০০-২০০০৫) সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৬১৯৪ এবং আহতের সংখ্যা ১১৭৫৭। व गान अর্বল সচন্ড चाা সত্ত্বেও नিরিত হচ্ছে না। এর ফলে অকালে মা হচ্ছেন সন্তান হারা, স্ত্রী হচ্ছে স্বামী হারা আর সন্তান হচ্ছে পিতৃহারা। তাই আজ গণবিবেক জেগে উঠেছে। আমাদেরকে আজ ভাবতে হচ্ছে এর প্রতিকার ব্যবস্থা নিয়ে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে :

(১) সাবধানে গাড়ি চালনার জন্য চালকগণকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি মহাসড়কে অবৈধ রিকশার অনুপ্রবেশ রোধ।

(২) অনির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং বন্ধ।

(৩) লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা ভালভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। লাইসেন্সবিহীন কেউ যেন গাড়ি চালাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও আবশ্যক।

(৪) গাড়ি রাস্তায় বের করার পূর্বে এর যান্ত্রিক কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।

(৫) সড়ক দুর্ঘনার শাস্তি অর্থাৎ সিআরপিসি-র ৩০৪ বি ধারা পরিবর্তন করে সাজার পরিমাণ সাত বছর থেকে কমিয়ে তিন বছর করা হয়েছে। এ শাস্তির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে ১০ বছর করা দরকার।

(৬) মোটর যান অধ্যাদেশের ১৪৩, ১৪৬ ও ১৪৯ ধারায় যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে তা বাড়ানো দরকার।

(৭) বিআরটি-এ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রচলিত পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদানে প্রতিবন্ধকতা ও লাইসেন্সের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কম দামে জাল লাইসেন্স তৈরি ও বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। যা কাগজপত্রের প্রমাণের অভাবে প্রতিকার করা দুরূহ। এ ধরনের জাল সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ করা জরুরি।

(৮) রাস্তায় পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(৯) ফুটপাত হকারদের দখলমুক্ত করে পথচারী চলাচলের উপযোগী করে তোলার বিষয়গুলো মাথায় রেখে গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন ঘটানো অপরিহার্য।

অন্যথায় সড়ক দুর্ঘটনা দিনের পর দিন আরও বাড়তে থাকবে, যা দেশ ও জাতির জন্যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি পথচারীকেও ট্রাফিকের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। (১০) গাড়ির প্রতিটি চালক ও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অতিরিক্ত মাল ও যাত্রীবাহন বন্ধ করা। সম্মানিত সুধীবৃন্দ, প্রতিটি জীব বা প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে হবে, আমাদেরও মরতে হবে।

 

সড়ক দুর্ঘটনা তার কারণ ও প্রতিকার আলোচনা সভায় ভাষণ

 

কিন্তু নিশ্চয়ই পথের বলি হয়ে কেউ মরতে চাই না। তাই সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি যতই জটিল সমস্যা হোক না কেন সকলের সামগ্রিক চেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এ থেকে রক্ষা পাওয়া তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’— এ শ্লোগানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment