Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

আমি তপু | মুহম্মদ জাফর ইকবাল

book review e0a686e0a6aee আমি তপু | মুহম্মদ জাফর ইকবাল

আমি তপু আমাদের “বুকরিভিউ [ Book Review ]” সিরিজের ১১ম পর্ব। আমাদের “বুকরিভিউ [ Book Review ]” সিরিজটিতে মূলত বিভিন্ন বই পাঠ ও এর রিভিউ করা হয়েছে। আজকের ভিডিওতে “আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল [ Ami Topu – Muhammad Zafar Iqbal ]” বইটি পাঠ ও এর রিভিউ করা হয়েছে।

 

আমি তপু

 

তের বছরের কিশোর তপু উপন্যাসের নাম ও প্রধান চরিত্র। তপু অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। মাত্র দশ বছর বয়সে সে তার বাবাকে হারায় এক সড়ক দুর্ঘটনায়। বাবার মৃত্যুর শোক তপুর মা সহ্য করতে পারেন না। তিনি এই দুর্ঘটনার জন্য তপুকেই দায়ী করেন। এতে তপুর পারিবারিক জীবন দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে যায়। তার মা তাকে সহ্য করতে পারেন না, আপনজনেরা দূরে সরে যায়, তার আচরণে ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তন আসে। এতে তার বন্ধুরাও তাকে ছেড়ে চলে যায়।দেখতে দেখতে তপু একদম একা হয়ে যায়।

 

 

তপু একসময় ঠিক করে সে বাসা থেকে পালিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে সে শেষবারের মত স্কুলে যায় যেখানে তার সাথে প্রিয়াংকার পরিচয় হয়।প্রিয়াংকা তপুর ক্লাসে নতুন ভর্তি হয়।সে অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, হাসিখুশি, সহজ সরল, বন্ধুবৎসল একটা মেয়ে। তার মা মারা গেছেন।বাবার জীবন হুইলচেয়ারে বন্দি। অন্যকে আনন্দ দিয়ে প্রিয়াংকা নিজের আনন্দ খুঁজে নেয়। প্রিয়াংকার প্রথম ক্লাসে তার সাথে তপুর হালকা কথাকাটাকাটি হয়। কিন্তু প্রিয়াংকা যেন সেটাকে পাত্তাই দেয় না।

প্রথম পিরিয়ডে বাংলার শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন সরকার স্যার এসে ছেলে মেয়েদের একসাথে বসা নিয়ে বকাবকি করেন এবং এরপর হিন্দু শিক্ষার্থীদের পেটাতে শুরু করেন। যা দেখে প্রিয়াংকা প্রতিবাদ করে ওঠে। স্যার যখন প্রিয়াংকাকে মারতে যাচ্ছিলেন তখন তপু কঠোর ভাষাতে প্রতিবাদ করে ওঠে। তার লাল চোখ আর কথাবার্তার ধরন দেখে স্যার ভয় পেয়ে প্রিয়াংকাকে ছেড়ে দেন।

তোফাজ্জল স্যার স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে প্রিয়াংকা আর তপুর নালিশ দিলে তিনি তাদের অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে তপু বলে যে তোফাজ্জল স্যার ক্লাসে কখনো রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ান না, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে টিটকারি মারেন, হিন্দু ছাত্রদের পেটান। এ কথা শুনে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম গম্ভীর হয়ে যান এবং তপু ও প্রিয়াংকাকে তাদের ক্লাসে যেতে বলেন।

এরই মধ্যে তপুর সাথে রান্নাঘরের নেংটি ইঁদুরের সখ্য গড়ে উঠে। সে অবাক হয়ে খেয়াল করে সে খুব ভালো অঙ্ক করতে পারে। জটিল অঙ্ক করতে তার বেশি ভালো লাগে। কিন্তু ক্লাসের শিক্ষক খাতা দেখে ভাবেন তপু নকল করেছে।একমাত্র প্রিয়াংকা তপুর অঙ্ক করার প্রতিভা খেয়াল করে।

এরপরের এক ক্লাসে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আসেন।তিনি তপুদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এক গাঁয়ে” কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান। তাদের তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের শহিদ হওয়ার গল্প শোনান। সেই রাত্রে তপু রান্নাঘরে বসে পড়াশোনার চেষ্টা করতে থাকে। এমন সময় তার কলমের কালি ফুরিয়ে যায়। কলম আনতে সে চুপিসারে তার ভাইয়ের ঘরে গেলে তপুর মা তাকে চোর মনে করে খুব মারেন। প্রচণ্ড মার খেয়ে তপুর জ্বর চলে আসে এবং সে কয়েকদিন পর বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

তপু বাসা থেকে পালিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে বসলে দেখতে পায় প্রিয়াংকা দৌড়ে তার কাছে আসছে আর চিৎকার করছে।তপু কিছু বুঝতে না পেরে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেয়।প্রিয়াংকা তাকে জানায় সে তপুর বাসাতে গিয়েছিল একটা অঙ্কের বই উপহার দিতে। সেখানে কাজের লোক দুলি খালার কাছ থেকে সে সব জানতে পারে।প্রিয়াংকা তপুকে বলে সে তপুর সবচেয়ে কাছের বন্ধু হবে, সহায় হবে। তপু আবার স্বপ্ন দেখার সাহস খুঁজে পায়।

প্রিয়াংকা উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় তপুর মাঝে নতুন শক্তি ফিরে আসে। সে নিজেকে পরিবর্তন করতে চায়, নতুন ভাবে পড়াশোনা করতে শুরু করে।এরই মাঝে খবর আসে জাতীয় গণিত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।প্রিয়াংকা অনেক কষ্ট করে তপুর নাম নিবন্ধন করে দেয়।সে নিজেও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেয়।সেই প্রতিযোগিতায় তপু সেরাদের মাঝে সেরা নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তাকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন।

এ ঘটনার পর থেকে তপুর জীবন একেবারে বদলে যায়। সবাই তার পাশে এগিয়ে আসে। এরই মাঝে প্রিয়াংকাকে সবাই উপহার দিতে চায়।কিন্তু কোনো কিছু না জেনে উৎসবের আকস্মিকতায় প্রিয়াংকা সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়।এতে তার হাত ভেঙে যায়।

হঠাৎই তপুর জীবনে বড় ধরনের ঝড় আসে। তপুর মায়ের মাথায় টিউমার ধরা পড়ে। সেটা অপসারণ করা বেশ কঠিন। কেউ তপুকে তার মায়ের কাছে যেতে দেয় না। পাছে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁর অপারেশনের পর তপু একবার দেখা করতে যায়। সেখানে তপুর মা তপুকে বলে, তপুর বাবার মৃত্যুর পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি তপুকে সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তপুকে বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। এভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়।

তপু বাইরে ফিরে এসে কান্নাভরা চোখে প্রিয়াংকার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। কারণ শেষ পর্যন্ত তপু তার হারানো সবকিছু ফিরে পেয়েছিল, ক্ষণিকের জন্য হলেও।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আমি তপু | মুহম্মদ জাফর ইকবাল :

 

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version