আমার শখ, আমার প্রিয় শখ [ Essay on My Hobby ] অথবা, শখের কাজ – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

Table of Contents
আমার শখ রচনার ভূমিকা:
প্রতিটি মানুষের জীবনে নিজস্ব পেশা অনুসারে নির্দিষ্ট কিছু কাজ থাকে। যেমন আমরা ছাত্র, তাই আমাদের কাজ পড়াশোনা করা; আমার বাবা ব্যবসায়ী, তাই তার কাজ ব্যবসা করা; আবার আমার মা গৃহকর্ত্রী, তাই তার কাজ ঘর সামলানো। প্রতিটি মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের কাজ করতে হয়।
তবে কোনো মানুষই একভাবে কোন কাজ করে চলতে পারে না। তাহলে সেই কাজের প্রতি একঘেয়েমি কাজ করে। যেমন আমি ছাত্র হিসেবে কখনোই সারাদিন পড়াশোনা করতে পারিনা। সেই কারণে প্রতিটি মানুষের নিজস্ব কিছু শখ থাকে। আমরা আমাদের অবসর সময়ে সেই শখ গুলি নিয়ে চর্চা করে থাকি।
সবাই নিজেদের মনের ইচ্ছা অনুসারে আলাদা আলাদা শখ বেছে নেয়। যেমন আমার মায়ের শখ সেলাই করা, বাবার শখ বাগান পরিচর্যা করা, আমি আমার শখ বই পড়া। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা দিনের নানা অবসরে আমি বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে ভালোবাসি।
কেন আমার প্রিয়:
খুব ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি আমার খানিক অন্য রকমের ভালোবাসা জন্মেছিল। ছোটবেলায় যখন সকালের স্কুলে পড়তাম তখন দুপুর বেলা স্কুল থেকে বাড়ি এসে নিস্তব্ধ দুপুরে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে আমার দিনগুলি কেটে যেত। আমি পৃথিবীর সকল কিছু সম্বন্ধে জানতে ভালোবাসি। সেই আগ্রহ থেকেই আমি মূলত বই পড়ি।
তাছাড়া বিভিন্ন বই আমায় এমন এক কল্পনার জগতে নিয়ে যায় যেখানে হয়তো আমি কখনো বাস্তবে পৌঁছাতে পারবো না। বইয়ের পাতার সেই কল্পনার জগতে বিচরণ করে আমি অদ্ভুত আনন্দ লাভ করি। তাছাড়া পৃথিবীর নানান প্রান্তের নানান মানুষকে আমি বই পড়ে চিনতে পারি।
বইয়ের মাধ্যমে আমার দেশে বসেই নিজের কল্পনায় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার সাথে আমার পরিচিতি ঘটে। এই সকল কারনেই বই পড়ার শখ আমার সবচেয়ে প্রিয়।

কি ধরনের বই ভালো লাগে:
সত্যি কথা বলতে আমি সব ধরনের বই পড়ে থাকি। তবে সেই বইয়ের লেখনি সুন্দর না হলে তা পড়তে আমার খুব একটা ভালো লাগে না। আমি মনে করি বইয়ের লেখনি সুন্দর হলে যেকোনো বিষয়ই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া বিষয়গত দিক থেকে আমি ঐতিহাসিক এবং ভ্রমণ কাহিনী পড়তে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
ঐতিহাসিক কাহিনী আমায় অতীতকালের স্বপ্নের দেশে নিয়ে গিয়ে ঘোড়ায় চড়া তরোয়ালধারী রাজাদের সাথে পরিচয় করায়। এই ধরনের কাহিনী পড়ে একদিকে যেমন ইতিহাস সম্বন্ধে জানা যায় তেমনি কল্পনার মাধ্যমে অতীতকালের মানুষের মতন করে সময় কাটানো যায়। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ঐতিহাসিক কাহিনীগুলি আমার বিশেষভাবে প্রিয়।
এছাড়া ভ্রমণ কাহিনী পড়ে পৃথিবীর নানা দুর্গম প্রান্তের কথা রোমাঞ্চকর মুহূর্তের বর্ণনার মাধ্যমে চোখের সামনে ফুটে ওঠে। আমার প্রিয় ভ্রমণ কাহিনীগুলির মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী সবচেয়ে কাছের। এই দুই ধরনের বই ছাড়াও আমি গোয়েন্দা গল্প, বিজ্ঞান বিষয়ক গল্প পড়তেও ভালোবাসি। সত্যজিৎ রায়ের লেখা প্রফেসর শঙ্কু আর ফেলুদা উপন্যাস আমার খুব প্রিয়।
আমার প্রিয় একটি বই:
আমার প্রিয় শখ বই পড়া সম্বন্ধে প্রবন্ধ রচনায় আমার সবথেকে প্রিয় বইটির ব্যাপারে উল্লেখ করতেই হয়। আমার পড়া সবচেয়ে প্রিয় বইটি হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অ্যাডভেঞ্চারমূলক ভ্রমণ উপন্যাস চাঁদের পাহাড়। এই বইটি আমি পাঁচবারেরও বেশী পড়েছি। প্রত্যেকবার নতুন করে বইটি আমার ভালো লেগেছে।
এই বইটি পড়ার সময় ঘরে বসেই আমার কল্পনায় আমি পৌঁছে যেতে পারি আফ্রিকার ঘন জঙ্গলে, ঝর্ণাধারা কিংবা গুহার ভেতরে। আমার বন্ধুরা যারা এই বই পড়েছে, তাদের কাছে এই বইয়ের প্রিয় চরিত্র হলো শংকর। কিন্তু আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আলভারেজকে। আলভারেজের অদম্য সাহস আর প্রখর বুদ্ধি আমায় সব সময় প্রেরণা জোগায়।
আমার শখের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
আমার এই প্রিয় শখটি নিয়ে বড় হয়ে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ছোটবেলা থেকে জমানো বইগুলোকে আমি এতটাই ভালবাসি যে আলমারী ভর্তি হয়ে গেলেও তাদেরকে চোখের সামনে থেকে সরাতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু নতুন বই কেনার লোভও সামলানো যায় না। তাই জায়গার অভাবে পুরনো বইগুলিকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও রাখতে হয়।

উপসংহার:
বইপড়া আমার জীবনের শখের থেকেও প্রতিদিনকার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অবসর সময় ছাড়াও, পড়ার সময়ও লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়ার জন্য আমি একাধিকবার মা-বাবার কাছে বকা খেয়েছি। এমনকি স্কুলেও পড়ার বইয়ের তলায় গল্পের বই নিয়ে পড়ার জন্য শ্রেণি শিক্ষক আমার মাকে একবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন। যদিও তিনি আমাকে বকেননি, শুধু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সময়ের কাজ সময়ে করলে তবেই জীবনের প্রিয় শখগুলি বজায় রাখা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুনঃ