আমার প্রিয় বই, প্রিয় বই প্রতিবেদন রচনা। Essay on My favourite book

আমার প্রিয় বই, প্রিয় বই   [ Drug addiction and its remedies ] অথবা, আমার প্রিয় বইয়ের নাম – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

আমার প্রিয় বই রচনা । Essay on My favourite book
আমার প্রিয় বই রচনা । Essay on My favourite book

আমার প্রিয় বই রচনার ভূমিকা:

প্রিয় গ্রন্থ বলতে গেলেই মনে একটা সংকোচ আসে। কেননা আমার প্রিয় বইটি অন্যের কাছে প্রিয় নাও হতে পারে। তখন যদি কেউ আমার রুচি নিয়ে কটাক্ষ করে, তবে তা হবে আমার কাছে প্রচন্ড দুঃখের এবং লজ্জার ব্যাপার। কিন্তু ভালো লাগা আর মন্দ লাগার কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আমার ভাললাগা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই নিজের অভিজ্ঞতার সূত্রেই আমার প্রিয় গ্রন্থ সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করব।

আমার প্রিয় বইয়ের নাম :

একটা ভালাে বই পড়া মানে নিজেকে আবিষ্কার করা। মানব দূষণের একমাত্র প্রতিষেধক বই। একটা ভাল বই মানুষের আত্মার সঙ্গীত।বইয়ের ভুবনে যখন আমি প্রবেশ করি আমার বুকের মধ্যে ভূলােক, দ্যুলােক জ্বলে উঠে। প্রতিদিনের জীবনের গ্লানি তুচ্ছ মনে হয়। তবে উপন্যাস পড়তেই আমার বেশি ভালাে লাগে। উপন্যাসের পৃথিবীতে আমার প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত শ্রীকান্ত’।

আমার প্রিয় বই রচনা । Essay on My favourite book
আমার প্রিয় বই রচনা । Essay on My favourite book

 শ্রীকান্ত প্রিয় হবার কারন :

বড় প্রেম শুধু শুধু কাছেই টানে না ইহা কখনাে কখনাে দূরেও ঠেলিয়া দেয়। এই জীবনাদর্শের জন্যই শ্রীকান্ত সকলের কাছে যেমন প্রিয় তেমনি আমার কাছেও। এই উপন্যাসে সমাজের বৈশিষ্ট্য এবং বাস্তবতা আমাদের টানটান বিস্ময়ে স্তব্ধ করে দেয়। এক ভবঘুরে জীবনের কাহিনি রােমান্টিক প্রেমের আদর্শ আলেখ্যের নসি-কাথা রচনা করেছে। গল্পের কাহিনি পড়তে বসে আমি যেন শ্রীকান্তেরই সংস্করণ হয়ে পড়ি।

শ্রীকান্ত উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য :

চারটি খণ্ডে বিভক্ত ‘শ্রীকান্ত’ একটি সুবৃহৎ উপন্যাস। লেখক হিসাবে শরৎচন্দ্র শুধু বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক নন, জনপ্রিয় সাহিত্যিকও। শরৎসাহিত্যের প্রতি আমি যতটা আকর্ষণ অনুভব করি অন্যান্য সাহিত্যিকের সাহিত্যের প্রতি ততটা করি না। মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখের জোয়ার ভাটার কাহিনি নিয়েই লেখা ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসটি। দেশ, সমাজ, মানুষের জীবন যাত্রা, আচার-ব্যবহার, কুসংস্কার, ঝগড়া-ঝাটি, প্রেমপ্রীতি বিনিময় সবকিছুই এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। এত বড়াে পরিসর ও এতবেশি চরিত্র আর কোন উপন্যাসে নেই। তাই শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের প্রতি আমার এত আকর্ষণ।

প্রথম প্রিয় গ্রন্থ পাঠের অভিজ্ঞতা :

এই উপন্যাসের কাহিনির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় স্কুলের নিচের ক্লাসে। এই উপন্যাসের শ্রীনাথ বহুরূপী অংশটি পাঠের মাধ্যমে। এই ঘটনা শৈশবকালেই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আর একটু বড় হয়ে অর্থাৎ ক্লাস টেন-এ এসে পড়লাম নতুন দার’ অংশটি। দুটি অংশ ছােটবেলা থেকেই আমাকে নাড়া দিয়েছিল। মনে মনে বুঝলাম ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসটি হবে অতি সাধারণ বেশে অসাধারণের জীবন কথা।

আমার প্রিয় বই রচনা । Essay on My favourite book
আমার প্রিয় বই রচনা । Essay on My favourite book

শ্রীকান্ত উপন্যাসে চরিত্র ও সমাজের বৈশিষ্ট্য :

উপন্যাসটির মধ্যে আছে এক ভবঘুরের জীবন কাহিনি। শ্রীকান্তের জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সে বহু জায়গায় গিয়েছে এবং বহু মানুষের সান্নিধ্যে এসেছে। জীবন সম্পর্কে সে প্রথম দীক্ষা লাভ করেছিল ইন্দ্রনাথের কাছ থেকে। যে ইন্দ্রনাথ ছিল অসীম সাহসী ও অন্যের দুঃখে কাতর ।

যতক্ষণ সে এই উপন্যাসে উপস্থিত থেকেছে ততক্ষণ সমগ্র কাহিনি পেয়েছে তাব্ৰ গতি ও আকর্ষণীয় ঘটনার সম্ভার। তাছাড়া এই উপন্যাসের মেজদা চরিত্রটিও বড়ােই মজার। তাই এই চরিত্রটি পড়তে আমার বেশ মজাই লাগত। আর একটু পরিণত বয়সে বঝতে পারলাম এই উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে বাঙ্গালি চরিত্রের বিচিত্র সংগ্রহ শালা।

বিশেষ করে নারী চরিত্রগুলি এ উপন্যাসে খুবই আকর্ষণীয়, যেমন – মাজলক্ষ্মী, অন্নদাদিদি, মেজদিদি, বড়দিদি, অভয়া প্রভৃতি চরিত্রগুলি আমাদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।উপন্যাসটির মধ্যে বাস্তবতার পরিচয় আছে। তাছাড়া আছে মাতৃত্বের হাহাকার, খাঁটি প্রেমের মাধুর্য, ব্যর্থ-পেত কোথাও বা ভুল বােঝাবুঝি, কিন্তু সর্বত্রই বিরাজ করেছে মানবতার প্রতিষ্ঠা বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।সমাজে যারা অবহেলিত, বঞ্চিত, শােষিত, , যাদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফুটে না – এ সব বিশেষ করে নারীদের স্বপক্ষে কলম ধরে তাদের কথা বলে গেছেন।

উপন্যাসটিতে বাস্তবতা :

শ্রীকান্ত মূলত আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস ।তাই এই উপন্যাসের সমস্ত বিষয়-আশয় ও চরিত্রের উপস্থাপনা বাস্তব অভিজ্ঞতার উপরে প্রতিষ্ঠিত, বাস্তবের মাটিতে গভীরভাবে সংযুক্ত, যদিও সাহিত্য শিল্পের খানি কিছুটা বাড়তি মশলার সংযােগ করতেই হয়। তথাপিও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও তার বিশ্বাসযােগ্যতা এই উপন্যাসটিকে আলাদা আসনে বসিয়েছে। তার লেখনিতে তুলে ধরা চরিত্রগুলি জীবন্ত, সজীব ইন্দ্রনাথ ডানপিটে, দুর্জয় সাহসী, অসাধারণ বাহুবলের অধিকারী, আবার তাঁর ছােট বুকটি অপরিসীম স্নেহ, করুণা ও মমতায় ভরা। এই উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলিও নারীত্বের মহিমায়, বঞ্চিত প্রেমের মহিমায় চিরসুন্দর।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

উপসংহার :

আমি এই উপন্যাসটি বারবারই পড়ি। শ্রীকান্তের জীবন কাহিনি এক ভবঘুরের জীবন কাহিনি। তাঁর জীবন চলমান জীবন। কোন বন্ধন তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। কোন নারীর স্নেহ,প্রেম, ভালবাসা তাকে আটকে রাখতে পারে নি। শ্রীকান্ত চলমান জীবন-পথের পথিক। পরিশেষে এ কথাটি বলব আমার এ গ্রন্থটির লেখক শরৎচন্দ্রের জীবন সম্পর্কেও কৌতুহল জন্মেছে। একটু পড়াশুনা করে জেনেছি তাঁর জীবন ও সাহিত্যের মধ্যে কতটুকু নিবিড় সম্পর্ক।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment