Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

আমার পথ প্রবন্ধ || কাজী নজরুল ইসলাম

hsc alim class 11 12 bangla e0 9 আমার পথ প্রবন্ধ || কাজী নজরুল ইসলাম

আমার পথ প্রবন্ধ  এইচএসসি বাংলা, আলিম ক্লাস বাংলা প্রথম পত্রের, সাহিত্যপাঠ বই এর অংশ।

 

আমার পথ প্রবন্ধ

 

লেখক পরিচিতি :

কাজী নজরুল ইসলাম এর ডাক নাম – দুখু মিয়া, ছদ্মনাম: ধূমকেতু, জন্মপরিচয় জন্মতারিখ : ২৫শে মে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ)। জন্মস্থান : বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রাম। পিতৃ ও মাতৃপরিচয় পিতার নাম : কাজী ফকির আহমদ। মাতার নাম : জাহেদা খাতুন। শিক্ষাজীবন প্রাথমিক শিক্ষা : গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষালাভ। মাধ্যমিক : প্রথমে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল স্কুল। সর্বশেষ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করেন কর্মজীবন/পেশা প্রথম জীবনে জীবিকার তাগিদে তিনি কবি দলে, রুটির দোকানে এবং সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন।

পরবর্তীতে পত্রিকা সম্পাদনা, গ্রামোফোন রেকর্ডের ব্যবসায়, গান লেখা ও সুরারোপ এবং সাহিত্য সাধনা। সাহিত্যকর্ম কাব্যগ্রন্থ : অগ্নি-বীণা, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণি-মনসা, জিঞ্জীর, সন্ধ্যা, প্রলয়শিখা, দোলনচাঁপা, ছায়ানট, সিন্ধু হিল্লোল, চক্র`বাক। উপন্যাস : বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা।

গল্প : ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, জিনের বাদশা। নাটক : ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে। প্রবন্ধগ্রন্থ : যুগ-বাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দীর জবানবন্দী, ধূমকেতু। জীবনীগ্রন্থ : ‘মরুভাস্কর’ (হযরত মুহম্মদ (স) এর জীবনীগ্রন্থ)। অনুবাদ : ‘রুবাইয়াত-ই-হাফিজ’, ‘রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম’। গানের সংকলন : বুলবুল, চোখের চাতক, চন্দ্রবিন্দু, নজরুল গীতি, সুরলিপি, গানের মালা, চিত্তনামা ইত্যাদি। সম্পাদিত পত্রিকা : ধূমকেতু, লাঙ্গল, দৈনিক নবযুগ।

পুরস্কার/সম্মাননা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি লাভ। রবীন্দ্রভারতী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে। তাছাড়া ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কবিকে ‘একুশে পদক’ প্রদান এবং জাতীয় কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ।সমাধিস্থান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ।

 

 

আমার পথ প্রবন্ধ এর মূলভাব :

আমার কর্ণধার আমি। আমাকে পথ দেখাবে আমার সত্য। আমার যাত্রা শুরুর আগে আমি সালাম জানাচ্ছি। নমস্কার করছি আমার সত্যক। যে পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়। রাজভয় লোকভয় কোন ভয়েই আমাকে বিপথে নিয়ে যেতে পারবে না। আমি যদি সত্য ভাবে আমার সত্যকে চিনে থাকি আর আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকে না তাহলে বাইরের কোন ভয়েই আমার কিছু করতে পারবে না। যার ভিতরে ভয় তারাই বাইরে ভয় পায়। যার মনে মিথ্যা সেইতো মিথ্যাকে ভয় পাবেই।

নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা আপনি একটি বড় জোর আসে যে সে আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কুর্নিশ করে না। অর্থাৎ কেই তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত করতে পারে না। ভুল স্বীকারের মাধ্যমে আত্মাকে জানা যায় বলে ‘আমার পথ- কাজী নজরুল ইসলাম’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন। সত্যকে জানতে আত্মাকে জানার জন্য ভুল সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ভুলের মাধ্যমেই কোন ব্যক্তি নিজেকে জানতে পারে এবং নিজেকে সংশোধনও করতে পারে। কিন্তু ভুল করে যদি তা স্বীকার করা না হয়, তবে তা হয় ভণ্ডামির শামিল। প্রাবন্ধিক এরূপ ভণ্ডামি করতে রাজি নন।

তাই বলা যায়, আত্মকে জানার জন্যেই প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন। সত্য জানা ও আত্মাশক্তির বিকাশের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা আসে। অন্যের ওপর নির্ভর বেঁচে থাকাকে বলা হয় পরনির্ভরতা। যার নিচের শক্তির ওপর বিশ্বাস নেই, যে আত্মশক্তি ও সত্যকে জানে না সে-ই পরনির্ভর। লেখকের মতে, পরনির্ভরশীলতাকে বর্জন করতে হলে নিজের সত্যকে জানতে হবে, নিজের শক্তির ওপর আত্মা স্থাপন করতে হবে। আর তা হলেই মানুষ হয়ে উঠবে আত্মনির্ভরশীল। এভাবেই আত্মনির্ভরতা আসে।

 

 

আমার পথ প্রবন্ধ এর সারমর্ম ঃ

আমার পথ- কাজী নজরুল ইসলাম প্রবন্ধে নজরুল এমন এক ‘আমি’র আবাহন প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ; সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক অসংকোচ। তাঁর এই ‘আমি’-ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছ্বাস জাগায়। নজরুল প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি’র সীমায় ব্যপ্ত করতে চেয়েছেন; একই সঙ্গে এক মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে ‘আমরা’ হয়ে উঠতে চেয়েছেন। তিনি তাই অনায়াসে বলতে পারেন, ‘আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’ নজরুলের কাছে ভগ্ন আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয়।

এর পরিবর্তে তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান; কেননা তাঁর বিশ্বাস, সত্যের দম্ভ যার মধ্যে রয়েছে তার পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। নজরুল এই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, তিনি ভুল করতে রাজি আছেন কিন্তু ভন্ডামি করতে প্রস্তুত নন। ভুল জেনেও তাকে ঠিক বলে চালিয়ে দেবার কপটতা কিংবা জেদ তাঁর দৃষ্টিতে ভন্ডামি। এই ভুল ব্যক্তির হতে পারে, সমাজের হতে পারে কিংবা হতে পারে কোন প্রকার বিশ্বাসের।

তবে তা যারই হোক এর থেকে বেরিয়ে আসাই নজরুলের একান্ত প্রত্যাশা। তিনি জানেন, এই বেরিয়ে আসা সম্ভব হলেই মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটানো সম্ভব হবে। মানুষ্যত্ববোধে জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উম্মোচিত হবে, এক ধর্মেও সঙ্গে অপর ধর্মেও বিরোধ মিটে যাবে। সম্ভব হবে গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা; আর এই ঐক্যের মূল শক্তি হলো সম্প্রীতি।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আমার পথ প্রবন্ধ বিশ্লেষণ :

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version