Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

আবার আসিব ফিরে কবিতা – জীবনানন্দ দাশ [ মূলভাব ও প্রশ্নোত্তর ]

আবার আসিব ফিরে গুরুকুল

আবার আসিব ফিরে গুরুকুল

“আবার আসিব ফিরে” কবিতা কবি জীবনানন্দ দাশের ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত একটি অমর সৃষ্টি। জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের একজন। তার কাব্যে নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতি, মৃত্যুবোধ এবং চেতনার গভীর অনুরণন অনুপমভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’ ১৯৫৩ সালে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয়। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করে। জীবনানন্দ দাশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রূপসী বাংলা’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘বেলা অবেলা কালবেলা’, এবং ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’— যেগুলোর মধ্য দিয়ে তাঁর কাব্যচিন্তা ও ভাষার বৈচিত্র্য নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটিও এই ধারার একটি উজ্জ্বল নিদর্শন, যেখানে কবি তার আত্মার পুনরাগমনের কথা বলে যান বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে অমোঘ একাত্মতায়।

এই কবিতাটি সাহিত্য কণিকার অন্তর্গত। এটি জীবনানন্দ দাশ রচিত কবিতা।’আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কবির ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিস কবির দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পরেছে কবিতায়।

 

 

আবার আসিব ফিরে কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায় – রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।

 

 

আবার আসিব ফিরে কবিতার শব্দার্থ ও টীকা:

ধানসিড়ি – ঝালকাঠি জেলার একটি নদী। নদীটি এখন মরে গেছে। –

শঙ্খচিল – এক ধরনের সাদা চিল ।

নবান্ন – নতুন ধানকাটার পর আমাদের দেশে এ উৎসব হয়। এ উৎসবে দুধ, গুড়, নারকেলের – সঙ্গে মিশিয়ে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়া হয়।

কার্তিকের নবান্নের দেশে— কবি নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নবান্নের দেশ বলেছেন। নবান্ন অর্থ নতুন ভাত । কার্তিক মাসে ঘরে নতুন ধান তুলে কৃষকেরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে।

ঘুঙুর – নূপুর, পায়ের অলংকার ।

জলাঙ্গী – কবি এখানে নদীকে জলাঙ্গী (অর্থাৎ জল যার অঙ্গে) নামে অভিহিত করেছেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে কবি জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা বলেছেন ।

ডাঙা  – জলাশয়ের নিকটবর্তী উঁচু স্থান ।

সুদর্শন – শকুনি ।

লক্ষ্মীপেঁচা – এক ধরনের পেঁচা।

রূপসা

– একটি নদীর নাম ।

ডিঙা – ছোট নৌকা ।

নীড়ে – পাখির বাসায় ।

ধবল – সাদা।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতাটির পাঠের উদ্দেশ্য:

কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবে। তাদের মনে নিজের দেশের প্রতি মমত্ববোধের জাগরণ ঘটবে।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতাটির পাঠ-পরিচিতি:

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কবির ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিস কবির দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পরেছে কবিতায়। কবি মনে করেন, যখন তাঁর মৃত্যু হবে তখন দেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন। আবার কখনও বা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যাবেন। এমনও হতে পারে, তিনি হাঁস হয়ে সারাদিন কলমির গন্ধে ভরা বিলের পানিতে ভেসে বেড়াবেন। এমনকি দিনের শেষে যে সাদা বকের দল মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসে তাদের মাঝেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এভাবে তিনি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন ।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতাটির কবি-পরিচিতি:

কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু হয় এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে কলকাতা সিটি কলেজ, দিল্লি রামযশ কলেজ, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ, খড়গপুর কলেজ, বরিষা কলেজ ও হাওড়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। এক সময় তিনি সাংবাদিকতার পেশাও অবলম্বন করেছিলেন।

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রং ও রূপের বৈচিত্র প্রকাশ ঘটেছে। অনেক অজানা গাছ, পশু-পাখি ও লতাপাতা তাঁর কবিতায় নতুন পরিচয়ে ধরা পড়েছে। প্রকৃতিপ্রেমিক এই কবি প্রকৃতি থেকেই তাঁর কবিতার রূপরস সংগ্রহ করেছেন। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ১৯৫৪ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতাটির কৰ্ম-অনুশীলন:

ক. কবিতাটির দৃশ্যচিত্র অবলম্বনে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন কর (শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশ গ্রহণে)।

খ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি অবলম্বনে একক ও দলগত আবৃত্তির আয়োজন কর ।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতার নমুনা প্রশ্ন:

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. ধানসিঁড়ি কিসের নাম?

ক. নদীর

খ. শহরের

গ. ধানের

ঘ. গ্রামের

২. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে ?

ক. ধূসর পাণ্ডুলিপি

খ. রূপসী বাংলা

গ. ঝরাপালক

ঘ. বনলতা সেন

৩. ‘সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে’– এখানে সারাদিন কেটে যাবে কার ?

ক. হাঁসের

খ. কিশোরীর

গ. কাকের

ঘ. কবির

কবিতাংশটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

‘গোধূলি লগনে জগদীশে স্মরণে

বিদায় লইব জনমের তরে

লুকাইব আমি সন্ধ্যার আঁধারে

বাংলা মায়ের ক্রোড়ে ।

8. উদ্দীপকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে ?

ক. স্বদেশচেতনা

খ. মৃত্যুচেতনা

গ. প্রকৃতিচেতনা

ঘ. ধর্মচেতনা

৫. উক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি উদ্ভাসিত হয়েছে নিচের কোন চরণে ?

i. আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়

ii. হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে

iii. আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i ও ii

খ. i ও iii

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. পল্লির সন্তান অমিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ফ্রান্স যায়। সেখানকার সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভালো লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ওদের ক্যাফে, মিউজিয়াম সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়িভাবে সেখানে থেকে যায়। তার অতীত স্মৃতি ফরাসি সৌন্দর্যের মোহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় ।

ক. উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় কে ?

খ. মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে জীবনানন্দ দাশ এদেশে ফিরতে চান কেন ?

গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উদ্দীপকের ফরাসি জাতির কোন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে ? বর্ণনা কর ।

ঘ. অমিতের অনুভূতি আর জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন—উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

২. ‘বাংলার হাওয়া বাংলার জল হৃদয় আমার করে সুশীতল এত সুখ শান্তি এত পরিমল কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া?

ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে ?

খ. ‘বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

গ. উদ্দীপক অবলম্বনে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দাও ।

ঘ. ‘কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া’ – কথাটির সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা কীভাবে সম্পর্কিত আলোচনা কর।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব :

বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি হাজার হাজার মানুষের মন ভরে দেয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য যে কোন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে আলাদা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দুই পাশে শস্যক্ষেত্র, বাতাসে পাকা ধানের গন্ধ, শীতের কুয়াশা, শিমুলের ডালে বসে লক্ষ্মীপেঞ্চা, উঠোনের ঘাসে ধান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিশুরা, কিশোররা নদীর কর্দমাক্ত পালের মধ্যে সাঁতার কাটছে প্রকৃতি এগুলোই বাংলার মানুষের মন ভরিয়ে দেয়।

কবি জীবনানন্দ দাশ তার প্রিয় জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। প্রিয় মাতৃভূমির সবুজ প্রকৃতি সব সময় কবির মনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই কবি তাঁর প্রিয় ধনসিন্দ্রীর তীরে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরেও। কবির কাছে বাংলাদেশ সব দেশের সেরা। তাই কবি বাংলাদেশে ফিরে আসার আশা প্রকাশ করেছেন।

কবি জীবনানন্দ দাশ তার জন্মভূমি বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এই কারণে, তার স্বদেশের সবকিছু তার কাছে আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দর হয়ে উঠেছে। তিনি তাঁর মৃত্যুর পরও বিভিন্ন ছদ্মবেশে বাংলার প্রকৃতিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর জন্মভূমিকে ভালোবাসতেন। কখনও সে মূর্তির ছদ্মবেশে ফিরে আসতে চায়, কখনও সকালে কাকের মতো।

যে কোনো মূল্যে বাংলার মাটিতে ফিরতে হবে, এটাই কবির ইচ্ছা। কারণ, বাংলার সৌন্দর্য কবিকে যতটা মুগ্ধ করেছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সৌন্দর্য তা করতে পারেনি। উদ্দীপকের মামুনের ক্ষেত্রেও একই কাজ হয়েছে। তাই তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। তাই আমরা বলতে পারি, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক তার দেশকে ভুলতে পারে না।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আবার আসিব ফিরে কবিতার জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন-১। কবি কোন নদীর তীরে ফিরে আসতে চেয়েছেন?

উত্তর: কবি ধানসিড়ি নদীর তীরে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন-২। কবি শঙ্খচিল শালিকের বেশে কোথায় আসতে চান?

উত্তর: কবি শখচিল শালিকের বেশে বাংলায় আসতে চান।

প্রশ্ন-৩। কবি কার্তিকের নবান্নের দেশে কী হয়ে ফিরে আসবেন?

উত্তর: কবি কার্তিকের নবান্নের দেশে ভােরের কাক হয়ে ফিরে আসবেন।

প্রশ্ন-৪। নবান্ন উৎসব কী মাসে হয়?

উত্তর: নবান্ন উৎসব কার্তিক মাসে হয়।

প্রশ্ন-৫। কুয়াশার বুকে ভেসে কবি কোথায় আসতে চান?

উত্তর: কবি কুয়াশার বুকে ভেসে বাংলার কাঁঠাল ছায়ায় আসতে চান।

প্রশ্ন-৬। কবি কীভাবে একদিন এ কাঁঠাল ছায়ায় ফিরে আসবেন?

উত্তর: কবি কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন একাঠাল ছায়ায় ফিরে আসবেন।

প্রশ্ন-৭। কার লাল পাড়ে কিশােরীর ঘুঙুর থাকবে?

উত্তর: হাঁসের লাল পাড়ে কিশােরীর ঘুঙুর থাকবে।

প্রশ্ন-৮। কী করে হাসের সারাদিন কেটে যাবে?

উত্তর: কলসির গন্ধভরা জলে ভেসে হাঁসের সারাদিন কেটে যাবে।

প্রশ্ন-৯। বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা কীসে ভেজা?

উত্তর: বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা।

প্রশ্ন-১০। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় সন্ধ্যার বাতাসে কী উড়ছে?

উত্তরঃ “আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ছে।

প্রশ্ন-১১। লক্ষ্মীপেঁচা কোথায় ডাকছে?

উত্তর: লক্ষ্মীপেঁচা শিমুলের ডালে ডাকছে।

প্রশ্ন-১২। উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় কে?

উত্তর: একটি শিশু উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায়।

প্রশ্ন-১৩। আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কোন নদীতে নৌকা বায়?

উত্তর: আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কিশাের রূপসা নদীতে নৌকা বায়।

প্রশ্ন-১৪। কিশােরের ছেড়া পালটি কী রঙের?

উত্তর: কিশােরের ছেড়া পালটি সাদা রঙের।

প্রশ্ন-১৫। রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে কে নীড়ে ফিরছে?

উত্তর: রাঙা মেঘ সঁতরায়ে ধবল বক নীড়ে ফিরছে।

প্রশ্ন-১৬। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটিতে কয়টি নদীর নাম উল্লেখ আছে?

উত্তর: ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটিতে দুইটি নদীর নাম উল্লেখ আছে।

প্রশ্ন-১৭। কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায় এর পরের চরণ লিখাে।

উত্তর: “কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাল ছায়ায় এর পরের চরণটি হলাে “হয়তাে বা হাঁস হবাে কিশােরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়।”

প্রশ্ন-১৮। ধানসিড়ি নদী কোন জেলায় অবস্থিত ছিল?

উত্তর: ধানসিড়ি নদী ঝালকাঠি জেলায় অবস্থিত ছিল।

প্রশ্ন-১৯। জলাঙ্গী কী?

উত্তর: আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি নদীকে জলাঙ্গী নামে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন-২০। ‘ডাঙা’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর: ‘ডাঙা’ শব্দটির অর্থ শুকনাে জায়গা।

প্রশ্ন-২১। সুদর্শন’ কী?

উত্তর: সুদর্শন হলাে এক দরনের গুবরে পােকা।

প্রশ্ন-২২। ‘লক্ষীপেঁচা’ কী?

উত্তর: লক্ষ্মীপেঁচা’ হলাে সুলক্ষণযুক্ত পেঁচা।

প্রশ্ন-২৩। ‘রূপসা’ কীসের নাম?

উত্তর: রূপসা একটি নদীর নাম।

প্রশ্ন-২৪। রূপসা নদীটি কোন জেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত?

উত্তর: রূপসা নদীটি খুলনা জেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত।

প্রশ্ন-২৫। “ডিভা’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর ‘ডিঙা’ শব্দটির অর্থ ছােট নৌকা।

প্রশ্ন-২৬। ধবল শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘ধবল’ শব্দের অর্থ সাদা।

প্রশ্ন-২৭। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কে লিখেছেন?

উত্তর: আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি লিখেছেন জীবনানন্দ দাশ।

প্রশ্ন-২৮। “আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

উত্তর: আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন-২৯। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটির উৎস কোন গ্রন্থ?

উত্তর: আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটির উৎস রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ।

প্রশ্ন-৩০। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি কোন বিষয়টি দেখিয়েছেন?

উত্তর: আবার আসিব কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যে তিনি নিজের দেশকে খুবই ভালােবাসেন।

প্রশ্ন-৩১। প্রিয় জন্মভূমির কোন জিনিসগুলাে কবির দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে?

উত্তর: প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলাে কবির দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে।

প্রশ্ন-৩২। কবির মতে, তার মৃত্যু হলেও কার সঙ্গে তার মমতার বাঁধন শেষ হবে না?

উত্তর: কবির মতে, তার মৃত্যু হলেও দেশের সঙ্গে তার মমতার বাঁধন শেষ হবে না।

প্রশ্ন-৩৩। জীবনানন্দ দাশ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন-৩৪। জীবনানন্দ দাশ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশােনা করেন?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশােনা করেন।

প্রশ্ন-৩৫। জীবনানন্দ দাশ কোন বিষয়ে এমএ পাশ করেন?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করেন।

প্রশ্ন-৩৬। জীবনানন্দ দাশ কোন বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।

প্রশ্ন-৩৭। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় কীসের বৈচিত্র ফুটে উঠেছে?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রং ও রূপের বৈচিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রশ্ন-৩৮। কোথা থেকে জীবনানন্দ দাশ কবিতার রূপ-রস সংগ্রহ করতেন?

উত্তর: প্রকৃতি থেকে জীবনানন্দ দাশ কবিতার রূপ-রস সংগ্রহ করতেন।

প্রশ্ন-৩৯। জীবনানন্দ দাশ কবে মারা যান?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ সালে মারা যান।

প্রশ্ন-৪০। জীবনানন্দ দাশ কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

 

আবার আসিব ফিরে কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। কবি কীভাবে এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছে?

উত্তর: কবি শঙ্খচিল, শালিকের বেশে অথবা ভােরের কাক বা হাস হয়ে এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি বাংলার প্রকৃতির অপরূপ রূপে মুগ্ধ তাই মৃত্যুর পরেও প্রিয় প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে কবি ফিরে আসতে চান। কবি ভােরের কাক হয়ে কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে ভেসে কাঁঠাল ছায়ায় ফিরে আসতে চান। অথবা হাঁস হয়ে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে বেড়াতে চান। প্রিয় প্রকৃতির সাথে পুনরায় মিশে যেতেই তিনি এই প্রকৃতির জীব হয়ে ফিরে আসতে চান।

প্রশ্ন-২। আবার ফিরে আসার আকাক্ষার আড়ালে কবির কোন চাওয়াটি প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশের আবার ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষার আড়ালে।

বঙ্গভূমির প্রতি তার ব্যাকুল ভালােবাসাই প্রকাশ পেয়েছে। কবি মনে করেন যখন তার মৃত্যু হবে, তখনও মাতৃভূমির সঙ্গে তার মমতার বাঁধন শেষ হবে না। কারণ এক জীবনে জন্মভূমিকে ভালােবেসে তিনি তৃপ্ত হতে পারেননি। তাই মৃত্যুর পরও তিনি নানা রূপে এই বাংলায় ফিরে আসতে চান।

প্রশ্ন-৩। কবি বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান কেন?

উত্তর: বাংলাকে ভালােবাসেন বলে কবি কুয়াশার বুকে ভেসেবাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

কবি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির বৈচিত্র্যে এতটাই মােহিত যে, বাংলার রূপ তার কাছে অনন্য মনে হয়। বাংলার নানা ঋতু নানারকম দৃশ্যের অবতাড়না করে। শীতকালের কুয়াশাভো প্রকৃতি কবির মনে যে মুগ্ধতা আনে, তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি মৃত্যুর পরে কুয়াশার বুকে ভেসে বাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন-৪। কবি কেন কুয়াশার বুকে ভেসে ফিরে আসতে চেয়েছেন?

উত্তর: বাংলাকে ভালােবাসেন বলে কবি কুয়াশার বুকে ভেসে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

কবি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির বৈচিত্র্যে এতটাই মােহিত যে, বাংলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রূপ ব্লার কাছে অনন্য বৈশিষ্ট্যের আধার মনে হয়। বাংলার নানা ঋতু নানারকম দৃশ্য নিয়ে আসে। শীতকালের কুয়াশাভেজা প্রকৃতি কবির মনে যে মুগ্ধতা আনে, তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি মৃত্যুর পরে কুয়াশার বুকে ভেসে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন-৫। কবি কেন সারাদিন কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে কাটাতে চান?

উত্তর: কবি বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্যই সারাদিন কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে কাটাতে চান।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতাে অসংখ্য নদী, নালা, খাল-বিল, দীঘি-জলাশয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ বাংলার নদীতে হাঁসেরা ঘুরে বেড়ায়। হাঁসদের সঙ্গে এসব ফুল ও ফুলের গন্ধভরা জলের যে সখ্য সেটা উপভােগ করার জন্য কবি সারাদিন হাঁস হয়ে ভেসে বেড়াতে চান।

প্রশ্ন-৬৷ সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে চরণটি বুঝিয়ে লেখাে।

উত্তর: কবি হাস হয়ে সারাদিন কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে বেড়াতে চান। বাংলাদেশ নদীঘেরা এক দেশ। এদেশের নদীতে, বিলে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় হাঁসের দল। হাঁসের সঙ্গে এদেশের নদী-বিলে ফোটা কলমি ফুলের যে সখ্য, তা উপভােগ করার জন্যই কবি সারাদিন হাঁস হয়ে কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে বেড়াতে চান।

প্রশ্ন-৭। শিমুলের ডালে লক্ষ্মীপেঁচা ডাকার মধ্য দিয়ে বাংলার কোন রূপ ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর: শিমুলের ডালে লক্ষ্মীপেঁচা ডাকার মধ্য দিয়ে কবি বাংলার মায়াময় রূপ তুলে ধরেছেন।

লক্ষ্মীপেঁচা বাংলাদেশের পাখি যার ভিন্নরকম সৌন্দর্য প্রকৃতিকে বিশেষ রূপ দান করে। অপরদিকে রক্তরাঙা শিমুল ফুলের সৌন্দর্য বাংলার রূপরঙে ভিন্ন সৌন্দর্য এনে দেয়। কাজেই লক্ষ্মীপেঁচা যখন শিমুলের ডালে বসে ডাকে, তখন তা বাংলার মায়াময় জাদুকরী রূপেরই একটি অসাধারণ চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে।

প্রশ্ন-৮। কিশােরের সাদা ছেড়া পালের মাধ্যমে বাংলার যে রূপটি ফুটে উঠেহে তা বুঝিয়ে লেখা।

উত্তর: আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কিশােরের সাদা হেঁড়া পালের মাধ্যমে নদীমাতৃক বাংলার চিরন্তন রূপটি ফুটে উঠেছে।

বাংলার নদী-নালায় গ্রাম্য বালক ও কিশােরেরা স্বভাবসুলভ দুরন্তপনায় ছােট ছােট নৌকা ও খেয়া নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। পাল তােলা ডিঙিতে করে তাদের এই ঘুরে বেড়ানাের মধ্যে অবাধ স্বাধীনতার রূপটি ফুটে ওঠে। বাংলার প্রকৃতির এই চিরন্তন অকৃত্রিম ভালােবাসার চিত্রটি প্রকাশ পায় কিশােরের সাদা-ছেড়া পালের মধ্যে।

প্রশ্ন-৯। বকের রঙা মেঘ সাতরিয়ে ঘরে ফেরা বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

উত্তর: বকের রাঙা মেঘ সাঁতরিয়ে ঘরে ফেরা বলতে গােধূলির সময় তার ঘরে ফেরাকে বােঝানাে হয়েছে।

গােধূলির সময় আকাশ রঙিন বর্ণ ধারণ করে। তখন আকাশের বুকে ধবল বকের ওড়া দেখে মনে হয় সে যেন রঙিন মেঘের মাঝে সাঁতার কার্টতে কাটতে ঘরে ফিরছে।

প্রশ্ন-১০। ধবল বকের নীড়ে আসার মধ্য দিয়ে কবি কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন? ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর: ধবল মেঘের নীড়ে আসার মধ্য দিয়ে কবি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পরম স্নেহশীল স্বদেশের বুকে ফিরে আসার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর প্রিয় জন্মভূমিকে এতটাই ভালােবাসেন যে, মৃত্যুর পরও নানা রূপে বার বার এখানে ফিরে আসতে চান। দূর-দূরান্ত থেকে বকেরা দল বেঁধে যেমন শেষ বেলায় মায়ের কোলের মতাে নীড়ে ফিরে আসে, কবিও তেমনি চিরকালের ভ্রমণ শেষে মাতৃভূমির মমতা জড়ানাে মাটিতে ফিরে আসার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন।

প্রশ্ন-১১। কবি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে ফিরে আসতে চেয়েছেন কেন?

উত্তরঃ জন্মভূমির প্রতি অপার মমত্ববােধের কারণে কবি তার প্রিয় ধানসিড়ি নদীর তীরে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

ধানসিড়ি নদীর সঙ্গে কবির নিবিড় যােগাযােগ রয়েছে। এ নদীর সান্নিধ্যে কবির জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে। এ কারণেই কবি বাংলাকে ভালােবেসে জন্মভূমির প্রিয় এ নদীর তীরেই তিনি ফিরে আসতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন-১২। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির কেমন মনােভাব প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর: ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির গভীর দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে।

আলােচ্য কবিতায় কবি মৃত্যুর পর বাংলায় আবার ফিরে আসার বাসনা ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে ভর করে বাংলার মাটিতে আবারও ফিরে আসতে চেয়েছেন। মূলত তিনি বাংলার সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জড়িয়ে থাকতে চেয়েছেন। তার এই মনােভাবের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালােবাসাই প্রকাশিত হয়েছে।

 

 

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন ১/

পল্লির সন্তান অমিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ফ্রান্স যায়। সেখানকার সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভালাে লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ওদের ক্যাফে, মিউজিয়াম সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়ীভাবে সেখানে থেকে যায়। তার অতীত স্মৃতি ফরাসি সৌন্দর্যের মােহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় ।

ক. উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় কে?

খ. মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে জীবনানন্দ দাশ এদেশে ফিরতে চান কেন?

গ. আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উদ্দীপকের ফরাসি জাতির কোন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে? বর্ণনা করাে।

ঘ. অমিতের অনুভূতি আর জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন উক্তিটি মূল্যায়ন করাে।

 

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর:

ক। একটি শিশু উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায়।

খ। বাংলার প্রকৃতির আরও কাছাকাছি থাকার বাসনায় জীবনানন্দ দাশ শঙ্খচিল, শালিকের বেশে এদেশে ফিরতে চান।

জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসায় কোনাে মানুষই বিস্মৃত হয় না। কবিও এদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্যকে হৃদয় দিয়ে উপভােগ করেছেন আজীবন। তার বিশ্বাস, এ বন্ধন মৃত্যুর মধ্য দিয়েও ছিন্ন হবে না। তাই তিনি এদেশের নদী-মাঠ, প্রকৃতিকে ভালােবেসে মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

গ। উদ্দীপকের ফরাসি জাতির দেশপ্রেম আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির দেশপ্রেমেরই অনুরূপ।

মাতৃভূমির প্রতি ভালােবাসা দেখানাে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এদেশের নদী-মাঠ-ভাটফুল, ভােরের কাক কিংবা ধবল বক সবই আমাদের চেতনায় সর্বদা জেগে থাকে আপন সৌন্দর্য নিয়ে। কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায়ও তেমন মনােভাবই ব্যক্ত করেছেন।

উদ্দীপকের অমিতের বর্ণনায় উঠে এসেছে ফরাসি জাতির সৌন্দর্য প্রীতির নানা দিক। তাদের রাস্তা-ঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজসহ প্রতিটি জায়গা দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি দিয়ে সজ্জিত। এছাড়া ফরাসিদের স্বদেশপ্রেম দেখেও সে বিস্মিত হয়। ফলে সে সেদেশেই থেকে যায়। ঠিক এমনই চিত্র আমরা আলােচ্য কবিতাটিতেও লক্ষ করি। কবি বাংলার রূপ দেখে এতই মুগ্ধ যে মৃত্যুর পরও তিনি ক্ষুদ্র প্রাণী হয়েও এদেশে জন্মগ্রহণ করতে চান। প্রবল দেশপ্রেমের ফলেই তিনি এমনটি মনে করেন, যা উদ্দীপকের ফরাসি জাতির মধ্যে লক্ষ করা যায়। সুতরাং, আলােচ্য কবিতায় কবির দেশপ্রেমের দিকটি ফরাসি জাতির দেশেপ্রেমের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

ঘ। উদ্দীপকের অমিতের অনুভূতি আর আবার আসিব ফিরে’ কবিতার জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি তাদের চেতনা ও দেশপ্রেমের বিচারে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের আশাবাদ জন্মজন্মান্তরেও এই বাংলার সঙ্গে তার বন্ধন ছিন্ন হবে না। নিজের দেশকে ভালােবেসে তার মনে হয় যখন তার মৃত্যু হবে, তখনও এদেশের সঙ্গে তার মমতার বাধন শেষ হবে না।

উদ্দীপকে উল্লেখিত অমিত বিদেশে পাড়ি জমাননার পর ধীরে ধীরে দেশকে ভুলে সেখানেই স্থায়ী বসবাস শুরু করে। আর কবি জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুর পরও বার বার এই বাংলায় ফিরে আসার আকুতি ব্যক্ত করেন।

উদ্দীপকের অমিত বাংলার প্রকৃতির কোলেই ছােট থেকে বড়াে হয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে বিদেশ যাওয়ার পর স্বদেশ ও স্বদেশের প্রকৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলে সহজেই। তার চিন্তা-চেতনায় বাংলার রূপ কখনােই এতটা প্রভাব বিস্তার করেনি। কবি জীবনানন্দ দাশ ও উদ্দীপকের অমিতের অন্তরে স্বদেশ সম্পর্কে ভিন্ন চেতনা লক্ষণীয়। তাদের অনুভূতি ও চেতনা দেশপ্রেমের বিচারে একসূত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

 

প্রশ্ন ২/

বাংলার হাওয়া বাংলার জল,

হৃদয় আমার করে সুশীতল

এত সুখ শান্তি এত পরিমল

কোথা পাব আর বাংলা না।

ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

খ. বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. উদ্দীপক অবলম্বনে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দাও।

ঘ. “কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া’- কথাটির সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা কীভাবে সম্পর্কিত আলােচনা করাে।

 

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ। বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা বলতে সবুজে আবৃত আর্দ্রভূমির বাংলাদেশকে বােঝানাে হয়েছে।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাছাড়া এদেশের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে সবুজের অপূর্ব সমারােহ চোখে পড়ে। নদীবিধৌত বাংলার পলিমাটি সব সময় আর্দ্র ও উর্বর থাকে। ফলে চারিদিকে এত সবুজের ছড়াছড়ি। কবি বাংলার এমন মাটি ও প্রকৃতিকেই সবুজ করুণ ডাঙা বলেছেন।

গ। প্রদত্ত উদ্দীপক এবং ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

নদীমাতৃক বাংলার রূপ বর্ণনায় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। প্রকৃতির বিভিন্ন দিককে তিনি তাঁর কবিতার প্রতিটি লাইনে তুলে ধরেছেন। এদেশের নদী, পাখি, মাঠ-ঘাট সবকিছুর মধ্যেই তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় যেমন চিরচেনা বাংলার রূপবৈচিত্র্য প্রাধান্য পেয়েছে, তেমনি উদ্দীপকের চরণগুলােতে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি উদ্দীপকের কবি ধারণা করেছেন, বাংলার এই মনােহরা ছায়া সুনিবিড় রূপ বাংলা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টিতে ভােরের কাক থেকে শুরু করে শালিক, শঙ্খচিল, এমনকী সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন কোনােকিছুই এড়ায়নি।

উদ্দীপকের কবিতাংশেও বাংলার হাওয়া, বাংলার জল অনন্যরূপে হাজির হয়েছে। অর্থাৎ উভয়স্থানেই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের ‘কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া কথাটি কবি জীবনানন্দ দাশের, মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চাওয়ার চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলার রূপ বর্ণনায় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জীবনানন্দ দাশ অদ্বিতীয়। তিনি তার মুগ্ধ দৃষ্টিকে সবসময় বাংলার প্রকৃতিতে নিবদ্ধ রেখেছিলেন। লমির গন্ধভরা জল কিংবা বাংলার সবুজ করুণ ডাঙায় তিনি শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশের কবির বিশ্বাস বাংলার চিত্ত শীতল করা ছায়া সুনিবিড় প্রকৃতি বিশ্বে বিরল। এমনই অনুভূতি থেকে মৃত্যুর পরও আবার বাংলায় ফিরে আসতে চান আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ।

বাংলার সবুজ-শ্যামল মায়াময় রূপ মায়ের স্নেহের মতােই স্নিগ্ধ ও কোমল। এত সুখ-শান্তি বাংলার বাইরে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় বলেই উদ্দীপকে উল্লেখিত হয়েছে। আর এমন দেশপ্রেম লালন করেন বলেই কবি জীবনানন্দ দাশও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বাংলার বুকে ফিরতে চান।

উদ্দীপকের কবির এ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের আকাঙ্ক্ষার কোনাে প্রভেদ নেই। তাই তাে তিনি মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।

 

প্রশ্ন ৩/

অংশ-১: “একি অপরূপ রূপে মা তােমায়

হেরিনু পল্লিজননী

ফুলে ও ফসলে কাদা-মাটি-জলে

ঝলমল করে লাবণি”

অংশ-২: “জন্মেছি মাগাে তােমার কোলেতে

মরি যেন এই দেশে।”

ক. লক্ষ্মীপেঁচা কোথায় ডাকছে?

খ. ‘রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে’—কথাটি বুঝিয়ে লেখাে।

গ. উদ্দীপকের অংশ-১ এ আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন ভাবটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের অংশ-২ আবার আসিব ফিরে’, কবিতার মূলভাবকেই প্রকাশ করেছে”- উক্তিটি মূল্যায়ন করাে।

 

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর:

ক। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় লক্ষ্মীপেঁচা শিমুলের ডালে ডাকছে।

খ। বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির মধ্যে কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে- উস্তৃত অংশটি দ্বারা কথাই তিনি বােঝাতে চেয়েছেন।

কবি মনে করেন জন্মভূমি বাংলার সঙ্গে তার আত্মার বাঁধন কোনােদিনও শেষ হবে না। মৃত্যুর পর তিনি এদেশে আবার ফিরে আসবেন। ভােরের কুয়াশা, ফসলের মাঠ, শঙ্খচিল, কলমির গন্ধভরা বিল কিংবা দিনের শেষে রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে নীড়ে ফেরা সাদা বক— এদের মধ্যে কবি তাকে খুঁজে নিতে বলেছেন। কারণ এই বাংলার রূপময় এই প্রকৃতির মধ্যেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

গ। প্রদত্ত উদ্দীপকের অংশ-১-এর বর্ণনায় আবার আসিব ফিরে কবিতার বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আড়ালে কবির দেশের প্রতি গভীর দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে।

নদীমাতৃক বাংলার রূপ বর্ণনায় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। প্রকৃতির বিভিন্ন দিককে তিনি তাঁর কবিতার প্রতিটি লাইনে তুলে ধরেছেন। এদেশের নদী, পাখি, মাঠঘাট সবকিছুর মধ্যেই তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। আলােচ্য কবিতায় চিরচেনা বাংলার রূপবৈচিত্র্য প্রাধান্য পেয়েছে, যা তার অকৃত্রিম দেশপ্রেমের নামান্তর।

উদ্দীপকের চরণে বাংলার প্রকৃতির কথা এসেছে। এখানে দেশকে তিনি মা বলে সম্বােধন করেছেন। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কবি পল্লিজননী হিসেবে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি উদ্দীপকের কবি বাংলার এই মনােহরা ফুল-ফসল, কাদা-মাটি-জলের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টিতে ভােরের কাক থেকে শুরু করে শালিক, শঙ্খচিল এমনকি সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন কোনােকিছুই এড়ায়নি। উদ্দীপকের কবিতাংশেও বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্যরূপে হাজির হয়েছে। উভয়স্থানে মূলত কবির দেশের প্রতি গভীর মমত্ববােধ প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের অংশ-২ এর চরণে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চাওয়ার চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলার রূপ বর্ণনায় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জীবনানন্দ দাশ অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর, মুগ্ধ দৃষ্টিকে সবসময় বাংলার প্রকৃতিতে নিবন্ধ রেখেছিলেন। আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতােটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পরে তিনি আবার কলমির গন্ধভরা জল কিংবা বাংলার সবুজ করুণ ডাঙায় শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকের অংশ-২ এর কবির প্রত্যাশা তিনি যেন বাংলার বুকেই মৃত্যুবরণ করতে পারেন। এখানে কবি এদেশে জন্মগ্রহণ করে এতটাই মুগ্ধ যে তিনি এখান থেকে কোথাও যেতে চান না, এমনকি এখানেই মৃত্যুবরণ করতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন বাংলার চিত্ত শীতল করা ছায়া সুনিবিড় প্রকৃতি বিশ্বে বিরল। এমনই অনুভূতি থেকে মৃত্যুর পরও আবার বাংলায় ফিরে আসতে চান ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ।

বাংলার সবুজ-শ্যামল মায়াময় রূপ মায়ের স্নেহের মতােই স্নিগ্ধ ও কোমল। এত সুখ-শান্তি বাংলার বাইরে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় বলেই উদ্দীপকের অংশ-২ এর কবি দেশকে ভালােবেসে এখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চান। আর এমন দেশপ্রেম লালন করেন বলেই কবি জীবনানন্দ দাশও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বাংলার বুকে ফিরতে চান।

উদ্দীপকের কবির এ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের আকাঙ্ক্ষার কোনাে প্রভেদ নেই। তাই তাে তিনি মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন। অর্থাৎ উদ্দীপকের অংশ-২ এর কবির মনােভাব ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবকেই প্রকাশ করেছে।

 

প্রশ্ন ৪/

দৃশ্যকল্প-১: বিস্তৃত মাঠে পাকা ধান। কৃষকের মুখে ফসলের হাসি। ক’দিন পর কৃষকের ঘরে আনন্দ উৎসব হবে। উৎসবে মেতে উঠবে বাংলার প্রতিটি কৃষকের ঘর। এ যেন চিরায়ত বাংলার অতি পরিচিত চেনা রূপ।

দৃশ্যকল্প-২: গােধূলি লগনে জগদীশে স্মরে

বিদায় লইব জনমের তরে

লুকাইব আমি সন্ধ্যার আঁধারে

বাংলা মায়ের ক্রোড়ে।

ক. ‘সুদর্শন’ কী?

খ. ‘জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা’— বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “দৃশ্যকল্প-২ মূলভাব এবং আবার আসিব ফিরে কবিতার কবির মনােভাব অভিন্ন।”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করাে।

 

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর:

ক। “সুদর্শন” এক প্রকার গুবরে পােকা।

খ। ‘জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা’ বলতে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বােঝানাে হয়েছে।

কবি এখানে নদীকে জলাঙ্গী বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদী জালের মতাে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তাই বাংলার সব স্থানের মাটিই যেন অসংখ্য নদীর জলে বিধৌত হয়েছে। এ কারণেই কবি বাংলাকে জলাশীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা বলেছেন।

গ। দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে আবার আসিব ফিরে’ কবিতার নবান্ন উৎসবের দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি ভােরের কাক হয়ে কার্তিকের নবান্নের দেশে ফিরে আসতে চান। নবান্ন হচ্ছে একটি উৎসব। যা কার্তিক মাসে ধান কাটার পরে হয়ে থাকে। ঋতুবৈচিত্র্য ও পার্বণের দেশ বাংলাদেশে কার্তিক মাসে যে ধান হয়, সে ধানকে কেন্দ্র করে যে উৎসব তাকে বােঝায়।

উদ্দীপকে মাঠ জুড়ে পাকা ধান দেখে কৃষকের মুখে ফসলের হাসির কথা বুঝিয়েছেন। ধান তােলার পর কৃষকের ঘরে আনন্দ উৎসব হয়। বাংলার প্রতিটি ঘরের কৃষক আনন্দে মেতে উঠবে, এটা বাংলার পরিচিত একটি রূপ। আলােচ্য কবিতাতেও কবি নিজ দেশকে নবান্নের দেশ বলেছেন। যেখানে কবি ভােরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চান। বাংলার কার্তিক মাসের ধান কাটার বিষয়টিই উদ্দীপক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাদৃশ্য রচনা করেছে।

ঘ। “দৃশ্যকল্প-২ এর মূলভাব এবং আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির মনােভাব অভিন্ন” উক্তিটি যথার্থ।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি প্রিয় জন্মভূমির তুচ্ছ অনুষগুলােও নিবিড়ভাবে অবলােকন করেছেন। কবি জন্মভূমির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে মমতার বন্ধন ছিন্ন করতে চান না। বারবার এই বাংলার বুকে ফিরে এসে কবি এ দেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকতে চান।

উদ্দীপকের কবিতাংশেও জন্মভূমি মায়ের প্রতি কবির অনিঃশেষ ভালােবাসা প্রকাশিত হয়েছে। কবি এ দেশের প্রকৃতিকে ভালােবেসে বাংলার বুকেই রয়ে যেতে চান। এ দেশের মাঝে থেকেই তিনি চিরবিদায় নিতে চান। আবার সন্ধ্যার আকাশে বাংলা মায়ের কোলে ঠাই খোঁজেন।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতা ও উদ্দীপকের কবিদ্বয়ের মাঝে মূলত দেশপ্রেমের অনুভূতিই সমানভাবে অবস্থিত। উভয় কবিতাতেই কবিরা দেশকে ভালােবেসে বাংলার প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে যেতে চান মৃত্যুর পরও। মূলত বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তারা এমন মনােভাব প্রকাশ করেছেন। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

 

প্রশ্ন ৫/

স্তবক-১: এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র

পাহাড় কোথায় এমন হরিৎক্ষত্র আকাশতলে মেশে।

এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।

স্তবক-২: মধুর চেয়ে আছে মধুর

সে আমার এই দেশের মাটি

আমার দেশের পথের ধুলা

খাটি সােনার চাইতে খাটি।

ক. সুদর্শন কী?

খ. কবি এ দেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ’ বলেছেন কেন?

গ. স্তবক-১ এর মূলভাব আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রকৃতির যে দিকটি নির্দেশ করে তার বর্ণনা দাও।

ঘ. “স্তবক-২ এর মূলকথা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার এক বিশেষ চেতনার ধারক।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

 

৫নং প্রশ্নের উত্তর:

ক। সুদর্শন হলাে এক ধরনের গুবরে পােকা।

খ। কার্তিকের ধানকাটা শেষে এদেশের কৃষকরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে বলে এদেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলা হয়েছে।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষকরা হেমন্তকালে অর্থাৎ কার্তিক মাসে নতুন ফসল ঘরে তােলে। এ সময় তারা নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে। এ উৎসবে দুধ, গুড়, নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়া হয়। এ উৎসব গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ। কবি তাই এদেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলেছেন।

গ। স্তবক-১ এর মূলভাব ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় প্রকাশিত দেশাত্মবােধ ও জন্মভূমির সৌন্দর্যের দিকটি নির্দেশ করে।

কবির চোখে বাংলার প্রকৃতি অনবদ্য ও অপূর্ব; তাই তিনি বারবার এ দেশের বুকে ফিরে আসতে চান। জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসার কারণে। এর তুচ্ছ অনুষঙ্গগুলােও তার চোখে অপূর্ব হয়ে ধরা পড়েছে। বাংলার প্রকৃতিতে তিনি অনাবিল সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন। তাই এ দেশকে তার কাছে এতাে মােহময় বলে মনে হয়েছে। আজন্ম এই ভূমির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

স্তবক-১ এর কবিতাংশে জন্মভূমি কবির রূপমুগ্ধতা প্রকাশিত হয়েছে। কবি মনে করেন তার দেশের সৌন্দর্য এতটাই মনােমুগ্ধকর যে তা সমগ্র পৃথিবীতে বিরল। কবি মনে করেন, এমন দেশ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর মধ্য দিয়ে কবির দেশাত্মবােধের পরিচয় মেলে অর্থাৎ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মতােই স্তবক-১ এ জন্মভূমিকে অনাবিল সৌন্দর্যের আকর বলা হয়েছে। তাই বলা যায়, স্তবক-১ এ আলােচ্য কবিতায় প্রকাশিত দেশাত্মবােধ ও জন্মভূমির সৌন্দর্যের দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ। স্তবক-২ এর মূলকথা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার এক বিশেষ চেতনার ধারক মন্তব্যটি যথার্থ ।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি স্বদেশের প্রতি কবির গভীর মমত্ববােধ ও ভালােবাসার নিদর্শন। দেশকে গভীরভাবে ভালােবাসেন বলেই জন্মভূমির প্রতি কবি এতটা মুগ্ধ। তার কাছে জন্মভূমির তুচ্ছ জিনিসও আকর্ষণীয় হয়ে ধরা পড়েছে। তাইতাে মৃত্যুর পরও তিনি এ দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না।

উদ্দীপকের কবিও দেশকে ভালােবাসেন। দেশের মাটিকে তিনি মধুর চেয়েও বেশি মধুর বলেছেন, দেশের পথের ধুলা তার কাছে সােনার চেয়েও দামি। তিনি বাটি সােনা বলতে দেশের ধুলা মাটিকে বুঝিয়েছেন। দেশের প্রতি কবির গভীর অনুভূতিতে তার দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতা ও উদ্দীপকে গভীর দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আলােচ্য কবিতার কবি দেশকে ভালােবেসে মৃত্যুর পরও দেশের আলাে-ছায়ায় নানারূপে ফিরে আসতে চান। তিনি মনে করেন, রূপময় এই প্রকৃতির বুকে তিনি মিশে থাকবেন। উদ্দীপকের কবিও দেশকে ভালােবেসে সােনার চেয়েও খাটি বলে উল্লেখ করেছেন। দেশকে তিনি মধুর চেয়েও মধুর বলে দেশের প্রকৃতির ধুলাকে সােনা মনে করেছেন। দেশের প্রতি এই দেশপ্রেমের চিত্রই আবার আসিব ফিরে’ কবিতার এক বিশেষ চেতনার ধারক হয়ে উঠেছে।

 

আবার আসিব ফিরে কবিতা বিশ্লেষণ :

 

Exit mobile version