আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা [ ২০০০+ শব্দ ]

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে নমুনা রচনা তৈরি করে দেয়া হল। এই রচনাটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে রচনা লেখা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ধারণা নেবার জন্য দেয়া হল, মুখস্থ করার জন্য নয়। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য নেবেন ও লেখা সম্পর্কে ধারণা নেবেন। তারপর নিজের মতো করে নিজের ভাষায় লিখবেন বা প্রকাশ করবেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা [ ২০০০+ শব্দ ]

 

ভূমিকা :

একুশ আমাদের চেতনা, একুশ আমাদের প্রেরণা। একুশের প্রেরণা আমাদেরকে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত করেছে। একুশের ত্যাগ অপরিসীম। তবে এ ত্যাগের চরম মূল্যায়নও হয়েছে। যে একুশ শুধু বাঙালি জাতির অহঙ্কার ছিল, আজ তা সারা বিশ্বের অহঙ্কার ও গর্ব। যে একুশ ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল আজ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পৃথিবীর অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতির বিস্তৃতপ্রায়, অবলুপ্তপ্রায় ভাষাকে অস্তিত্ব দিতে সহায়ক হবে ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি :

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার যে উদ্যোগ গৃহীত হয় তার বিরোধিতা করে বাংলাভাষাকে উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বাঙালিদের যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা-ই ভাষা আন্দোলন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দিবস | বাংলা রচনা সম্ভার

 

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় :

পাকিস্তান-পূর্ব ভাষা বিতর্ক বাদ দিলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। প্রথম পর্যায় হচ্ছে ১৯৪৭-৪৮। এ সময়ে ভাষার প্রশ্নে বিতর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তা প্রতিবাদ বিক্ষোভে রূপ নেয়। জিন্নাহর ঢাকা ঘোষণা এবং এর বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদ ছিল মুখ্য ঘটনা । দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে ১৯৫২ সাল। এ সময়ে সংঘটিত হয় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা :

পাকিস্তান পূর্ব ভাষা বিতর্কের ধারাবাহিকতায় নতুন রাষ্ট্রের রাজধানী করাচিতে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্র-বুদ্ধিজীবী মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পরিষদের ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রথম আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়। এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ, সমাবেশ, ছাত্র ধর্মঘট, প্রাদেশিক আইন পরিষদ ঘেরাও ইত্যাদি কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল।

রাষ্ট্রভাষার জন্য বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা :

পাকিস্তানে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত ছিল না বরং উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের এ অগণতান্ত্রিক, পক্ষপাতমূলক ভাষানীতি ও রাজনীতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই পূর্ব বাংলার ছাত্র, যুবক, রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এগিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিভিন্ন সংগঠন।

এর মধ্যে কামরুদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে গঠিত গণ-আজাদ লীগ (জুলাই ১৯৪৭); তসাদ্দক আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক লীগ (সেপ্টেম্বর  ১৯৪৯); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে গঠিত তমুদ্দিন মজলিস (সেপ্টেম্বর ১৯৪৭); একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নূরল হক ভূঁইয়াকে (পরবর্তীকালে শামসুল আলম) আহবায়ক করে গঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ (অক্টোবর ১৯৪৭) এবং তৎকালীন যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (৪ জানুয়ারি ১৯৪৮) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে এসব সংগঠন বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে ।

খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ৮ দফা চুক্তি ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা সফরে আসার তারিখ স্থির হয়। এদিকে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতিদানের দাবিতে পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ সমাবেশ, ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। যেমন ২৬ ফেব্রুয়ারি (১৯৪৮) ছাত্র ধর্মঘট, ১১ মার্চ ঢাকায় বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘট এবং ১৩ মার্চ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এতে অনেক ছাত্র যুবনেতা গ্রেপ্তারবরণ করে। এমনই এক পরিস্থিতিতে ১৫ মার্চ পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন এবং রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে একটি ৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দফাসমূহ নিম্নরূপ :

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ৮ দফা:

১. ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ হইতে বাংলাভাষার প্রশ্নে যাহাদিগকে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে তাহাদিগকে অবিলম্বে মুক্তিদান করিতে হইবে।

২. পুলিশ কর্তৃক অত্যাচারের অভিযোগ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তদন্ত করিয়া একমাসের মধ্যে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করিবেন।

৩. ১৯৪৮ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব বাংলা সরকারের ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারী আলোচনার জন্য যেইদিন নির্ধারিত হইয়াছে সেইদিন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার এবং ইহাকে পাকিস্তান গণপরিষদে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষাদিতে উর্দুর সমমর্যাদা দানের জন্য একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হইবে।

৪. এপ্রিল মাসে ব্যবস্থাপক সভায় এই মর্মে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হইবে যে, প্রদেশের ভাষা হিসাবে ইংরেজি উঠিয়া যাইবে । ইহা ছাড়া শিক্ষার মাধ্যমও হইবে বাংলা ।

৫. আন্দোলনে যাঁরা অংশগ্রহণ করিয়াছেন তাহাদের কাহারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না ।

৬. সংবাদপত্রের উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হইবে ।

৭. ২৯ ফেব্রুয়ারি হইতে পূর্ব বাংলার যে সকল স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হইয়াছে সেখান হইতে তাহা প্রত্যাহার করা হইবে।

৮. সংগ্রাম পরিষদের সাথে আলোচনার পর আমি এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হইয়াছি যে, এই আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় নাই । বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নাজিমুদ্দীন সরকারের আশু লক্ষ্য ছিল উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে জিন্নাহর ঢাকা সফরকে নির্বিঘ্ন করা।

জিন্নাহর ঢাকা ঘোষণা ও এর প্রতিবাদ:

ঢাকায় আগমনের পর ২১ মার্চ (১৯৪৮) তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ভাষা প্রশ্নে জিন্নাহ এক পর্যায়ে ঘোষণা করেন,  *উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। তার এ ঘোষণার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো হয়। এরপর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি তার পূর্ব ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করলে সেখানেও প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়।

নাজিমুদ্দিনের ঘোষণা ও দ্বিতীয় পর্বের ভাষা আন্দোলন শুরু :

১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা সফরে এসে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করলে তৎক্ষণাৎ এর প্রতিবাদ ওঠে। এরপর ধারণা করা হচ্ছিল পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সতর্ক ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এদিকে ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিন্নাহ মৃত্যুবরণ করলে খাজা নাজিমুদ্দীন গভর্নর জেনারেল হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন।

১৯৫১ সালে আততায়ীর গুলিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান নিহত হন এবং খাজা নাজিমুদ্দীন নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে ছাত্রসমাজের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করে ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিমুদ্দীন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার নতুন ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব।

একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য বাঙালির আত্মদান:

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন কর্তৃক উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার নতুন ঘোষণা দেয়ার (২৬ জানুয়ারি ১৯৫২) সাথে সাথে পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। একুশে ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। নতুন করে ছাত্র আন্দোলন দেখা দেয়ায় পূর্ব বাংলার নূরুল আমিন সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। তখন চলছিল প্রাদেশিক আইনসভার অধিবেশন ।

সরকার কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সমাবেশ অনুষ্ঠান ও মিছিল ৰৈয় করার চেষ্টা করে। বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখে অনুষ্ঠিত এমনই এক সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। শহীদ হন সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে । বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে রচিত হলো এক রক্তাক্ত অধ্যায়। এরপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়।

১৯৫৬ সালের সংবিধানে তা স্বীকৃত হয়। এরপর থেকে শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনাই বাঙালিকে স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। এ সংগ্রামের পথ ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। আজ ভাষা দিবস কেবল আমাদের একার নয়, বিশ্বের ১৮৮টি দেশে পালিত হবে এ দিন। ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, “১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সেদিন যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দিবস | বাংলা রচনা সম্ভার

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি এলো যেভাবে :

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পেছনে রয়েছে এক চমকপ্রদ ঘটনা। রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি ১৯৯৬ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। বিদেশে ইংরেজি, ফ্রান্স, স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ প্রভৃতি ভাষার অধিপত্যে অনেক জাতির নিজস্ব ভাষা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাকে ব্যথিত করে তোলে। একুশে  ফেব্রুয়ারির চেতনার আলোকে সকল মাতৃভাষাকে কিভাবে সম্মান দেখানো যায় তার একটি পথ বের করার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুভব করেন।

তিনি এ বিষয়ে বিশেষ কিছু ব্যক্তির সঙ্গে মত বিনিময় করে ৯ জানুয়ারি, ১৯৯৮ জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর পর প্রেরণে উদ্বুদ্ধ হন। এর মূল কথা ছিল বিশ্বের প্রতিটি ভাষার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য প্রতি বছর বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস পালন করা হোক এবং যেহেতু বাঙালিরা প্রাণ উৎসর্গ করে তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে, সেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৯৮ জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে Department of Public Information-এর Officer in Charge হাসান ফেরদৌসের নিকট থেকে রফিকুল ইসলাম একটি চিঠি পান, যার মূল কথা ছিল—প্রস্তাবটি যেন কোনো সদস্য দেশ থেকে উত্থাপন করা হয়।

কফি আনানের পক্ষে হাসান ফেরদৌসের চিঠি পেয়ে ভ্যাঙ্কুভারে বসবাসরত আবদুস সালামসহ বেশ কিছু বাংলাদেশী ও অন্যান্য দেশ ও ভাষার ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে রফিকুল ইসলাম ৭টি দেশের ১০ ব্যক্তিকে নিয়ে Mother Language Lovers of the World নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে একই প্রস্তাব সম্বলিত ৭ ভাষাভাষীয় ১০ ভাষাভাষীর স্বাক্ষরিত আরো একটি পত্র জাতিসংঘে উত্থাপন করার জন ২৯ মার্চ, ১৯৯৮ Canadian Embassy of UN-এর নিকট পাঠানো হয়। কিন্তু Embassy কর্তৃপক্ষ উক্ত পত্রটি কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। চেষ্টা সত্ত্বেও আট মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়। অতঃপর জনাব রফিক এই পত্রের কপি জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর প্রেরণ করেন।

১৯৯৯-এর ফেব্রুয়ারি মাসে তথ্য অধিদপ্তরের হাসান ফেরদৌস বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন UNESCO-এর সাথে যোগাযোগ করার উপদেশ দেন। রফিকুল ইসলাম ধৈর্যহারা না হয়ে প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে টেলিফোন করেন এবং ইউনেস্কোর ভাষা বিভাগের পরিচালক আল্লা মারিয়ার কাছে ১৯৯৯-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন।

১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ আন্না মারিয়া রফিকুল ইসলামের টেলিফোনের বরাত দিয়ে লেখেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য আপনার অনুরোধ খুবই চমকপ্রদ।’ একই বছর ৮ এপ্রিল মারিয়া রফিকুল ইসলামকে আবারো চিঠি লেখেন এবং উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করেন, “বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে উত্থাপনের কোনো সুযোগ নেই, ইউনেস্কোর পরিচালনা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের মাধ্যমে বিষয়টি উত্থাপিত হতে হবে।’

আন্না মারিয়া রফিকুল ইসলামকে আরো জানান : ১. প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে হলে জেনারেল কনফারেন্স করতে হবে। ৩০তম অধিবেশন ১৯৯৯ সালের নভেম্বর/ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে। ২. প্রস্তাবটি সমর্থন করে যে কোনো একটি দেশ তার নিজের প্রস্তাব হিসেবে উপস্থাপন করবে। ৩. এ ব্যাপারে ইউনেস্কো ন্যাশনাল কমিশন-এর প্রস্তাবক হিসেবে কয়েকটি দেশকে অনুরোধ করতে বলেন। দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, কানাডা, ফিনল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি।

মারিয়া তার নিজস্ব ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে রফিকুল ইসলামকে উল্লিখিত দেশগুলোর ঠিকানা প্রেরণ করেন..মে, ১৯৯৯ থেকে অক্টোবর, ১৯৯৯ পর্যন্ত রফিকুল ইসলাম উল্লিখিত ৫টি দেশের সাথে যোগাযোগ করেন। ১৬ আগস্ট, ১৯৯৯ হাঙ্গেরি প্রস্তাব সমর্থনের কথা জানায়। অতঃপর ফিনল্যান্ড ও প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রফিকুল ইসলাম চিঠি প্রেরণ করেন ২৩ জুন, ১৯৯৯। জুলাই, ১৯৯৯ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে।

৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ জনাব রফিক বাংলাদেশের শিক্ষা সচিব কাজী রকিব উদ্দিনের সাথে পুনরায় টেলিফোনে কথা বলেন, প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯-এর মধ্যে অবশ্যই পৌঁছাতে হবে— এ বিষয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। শিক্ষা সচিব গভীর আল্লাহ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকের নিকট বিষয়টি তুলে ধরেন।

৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির সার্বিক গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বলেন এবং ৯ তারিখ রাতেই তা ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে প্রেরণ করতে নির্দেশ দেন। তদানুসারে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর মাননীয় সচিব প্রফেসর কফিল উদ্দিন আহমদ কর্তৃক ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ স্বাক্ষরিত একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার ঐতিহাসিক আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি ঐ রাতেই ফ্যাক্সযোগ ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে পৌঁছে যায়।

১৯৯৯ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ১৫৭তম অধিবেশন ও ৩০তম দ্বিবার্ষিক সাধারণ সম্মেলন প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল সে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা ছিলেন শিক্ষাসচিব ড. সা’দত হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর সাইদুর রহমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আয়েশা খাতুন, ইউনেস্কো বাংলাদেশ জাতীয় কমিশনের সাবেক সম্পাদক প্রফেসর কফিল উদ্দিন এবং ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।

সম্মেলনে উদ্বোধনী সেশনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করেন। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর ইউনেস্কোর টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২ (যা এ ব্যাপারে সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থা)-এ বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক প্রস্তাবটি (নম্বর ৩০ সি/ডি/আর-৩৫) ২৮টি দেশের লিখিত সমর্থনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। কমিশন ২-এর সভাপতি স্লোভাকিয়ার লুডোভিট স্ট্যানিস্লাভ মোলনার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবটির ওপর কারো কোনো আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলেন পর পর তিনবার। সৌভাগ্য আমাদের সৌভাগ্য ২০ কোটি বাঙালির।

বিনা আপত্তিতে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো। পরবর্তীতে ১৭ নভেম্বর রুটিন বিষয় হিসেবে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের ভাস্কর এ দিনটি বিশ্ব স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাভাষার মর্যাদা যেমন বেড়েছে তেমনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে। ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকেই স্বীকৃতি দেয়নি, অমর একুশের শহীদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে। সাথে সাথে বাঙালি জাতির পরিচয় ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে আরো উজ্জ্বল ও মহীয়ান করেছে।

এ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতির জন্য আমরা কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের অবদানের কথা সর্বপ্রথম স্মরণ করবো। এছাড়া ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক টনির অবদানও অপরিসীম । সর্বশেষে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৯ সালের   ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং পরে ৪ জানুয়ারি ২০০০ ইউনেস্কোর মহাসচিব কইচিরো মাতসুরা এক চিঠিতে ১১৮টি সদস্য দেশের জাতীয় কমিশনকে প্রথমবারের মতো ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই ঐতিহাসিক দিবসটি পালনের আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য :

ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ইউনেস্কোর সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলা হয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহু ভাষা ভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না, তা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য হলো সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেয়া, যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া, বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর প্রভুত্ব আরোপের অপচেষ্টা না করা, ছোট-বড় সকল ভাষার প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন।

এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালোবাসবে তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে মানুষ। বাঙালি জাতি নিজের রক্ত দিয়ে সারা বিশ্বকে শিখিয়ে দিয়ে গেল ভাষাকে ভালোবাসার মন্ত্র । মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসা, তার জীবনাচারকে ভালোবাসা আর তার জন্য গর্ববোধ করার মধ্যে ।

উপসংহার :

স্বদেশপ্রেশ ও মাতৃভাষাপ্রীতি মানুষের মজ্জাগত প্রবণতা। মানুষের মনে স্বদেশ চেতনা ও স্বদেশপ্রেম উৎসারণে ভাষা এক বড় অবলম্বন ও উৎস। নিজের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় তা পালনের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী তাদের নিজ মাতৃভাষাকে রক্ষা করার সুযোগ পাবে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ কেবল বিশেষ কোনো দেশ বা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর চেতানাকেই সম্মানিত করবে না বরং সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি জাতির মুখের ভাষার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করবে এবং বিশ্বের দুর্বল, অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত জাতিগুলোকে তাদের নিজেদের মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। ২১ ফেব্রুয়ারির এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে আমাদের দায়িত্ব আরো অনেক বেড়ে গেল। নিজের মাতৃভাষার উন্নয়নে আমাদের সকল কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের মাতৃভাষার দৈন্যতা মোচন করতে হবে যাতে বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে এবং আমরা বিশ্বের দরবারে সঠিকভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহার ও স্বীকৃতির জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের কর্মকাণ্ডে আমরা সহযোগিতা করবো এক গভীর একাত্মবোধে । তাহলেই আমরা বিশ্বব্যাপী যে স্বীকৃতি পেয়েছি তার যথার্থ মূল্যায়ন হবে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে গুরুকুলের ক্লাস ১:

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে গুরুকুলের ক্লাস ২:

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment