Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি, আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তি প্রতিবেদন রচনা | Essays on modern life and technology

আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি, আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তি [ Essays on modern life and technology  ] অথবা, আধুনিক প্রযুক্তি ও আমরা অথবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও আধুনিক সভ্যতা- নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি রচনার ভূমিকা:

জীবন গতিশীল। পুরাতনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় নতুনের পথে। তাই নতুন নতুন সৃষ্টি ও আবিষ্কারের প্রতি মানুষের ঝোঁক আদিকাল থেকে। শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল অতিক্রম করে মানুষ নানা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সভ্যতাকে নতুনরূপে গড়ে তুলেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ বর্তমান পৃথিবীতে বসবাসরত জীবনকেই আমরা বলি আধুনিক জীবন।

প্রযুক্তি ও জীবন:

বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করার প্রবণতা থেকেই প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ। এর অগ্রগতি মানুষের মেধা ও কল্পনাশক্তির বলেই সম্ভব হয়েছে। মানুষ আজ আর প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল নয়। তার প্রয়োজনে সে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পণ্য উৎপাদন করছে। আর এ কৌশল আধুনিক জীবনকে দিয়েছে মহিমা, মানব সভ্যতার ইতিহাসকে চিহ্নিত করেছে এক সম্ভাবনাময় শক্তির উৎস হিসেবে। বিজ্ঞান মানুষকে পরিমিত শক্তির অধিকারী করেছে। সে শক্তি দৈবশক্তি নয়, পরনির্ভরশীল নয়, সে শক্তি আত্মশক্তিরই আবিষ্কৃত রূপ। মানুষ কলাকৌশলের সুষ্ঠু প্রয়োগে অসম্ভবকে সম্ভব করায় যে অসাধারণ প্রতিভার বিচ্ছুরণ আজ ঘটাচ্ছে বুদ্ধি ও কৌশলের মাধ্যমে, তা কয়েক যুগ আগেও অভাবিত ছিল।

আধুনিক জীবন :

আধুনিক জীবন কর্মচঞ্চল। অলস, বিলাসী হওয়া এখন আর মানব সমাজের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য রক্ষার অনুকূল নয়। পরিশ্রমী মানুষ বুদ্ধি ও শক্তির সমন্বয়ে এক নতুন জীবন চেতনার অনুসারী হয়েছে। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারে পৃথিবীর চেহারা যেমন বদলে যাচ্ছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন প্রবাহের গতি। আর আবিষ্কারের সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে প্রযুক্তি প্রয়োগের কৌশলে। আধুনিক জীবন প্রযুক্তিরই অবদান। তাই প্রযুক্তিবিহীন জীবন অকল্পনীয়।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ :

অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের প্রযুক্তিগত বিপ্লবের পথ ধরে শিল্প বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। দ্রুতগতিতে তার সম্প্রসারণ ঘটে উন্নত বিশ্বে। ক্রমে ক্রমে কুটির শিল্পের স্থান গ্রহণ করা যন্ত্রশিল্প। মানুষ হল যান্ত্রিক। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিবিদ্যা একই স্রোতধারায় প্রবর্তিত হতে থাকল। প্রযুক্তিবিদ্যার কারিগরি কৌশল নিয়ে বিজ্ঞানকে মানব জীবনের সর্বস্তরে কার্যকর করা হল। প্রযুক্তিবিদ্যার আবির্ভাব ও বিকাশকে মূলত তিনটি যুগে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথম যুগে ছিল বাষ্পীয় যন্ত্রের প্রাধান্য দ্বিতীয় যুগে প্রাধান্য ছিল বিদ্যুতের, আর তৃতীয় অর্থাৎ বর্তমান যুগে রয়েছে পারমাণবিক ও সৌরশক্তির প্রাধান্য।

প্রযুক্তির সুফল :

মানব সভ্যতার ইতিহাস নানা যুগে বিভক্ত। বর্তমানে মানুষ শিল্প সমৃদ্ধির যুগে বসবাস করছে শিল্পের ক্ষেত্রে এখন সুষম প্রয়োগ কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে বৃহৎ শিল্প বর্তমানে এক অনন্য মহিমার জন্য দিয়ে চলেছে। আর সে মহিমা নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির সফল প্রয়োগেরই ফল। মানুষের চাহিদা সীমাহীনভাবে বেড়ে চলেছে। সে চাহিদা মানুষ তার শ্রমশক্তি দিয়ে পূরণ করতে পারছে না। তাই যন্ত্রশিল্পের আশ্রয় গ্রহণ করতে হচ্ছে।

বর্তমান যুগতে যন্ত্রযুগ বললেও বেশি বলা হবে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ সফল প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন জীবনায়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের শিল্প সৃষ্টি এবং শিল্পের যন্ত্র তৈরির কৌশল জীবনকে নতুন মহিমায় অভিষিক্ত করেছে। কল-কারখানা, যাতায়াত ব্যবস্থা, কৃষি, উৎপাদন এবং অন্যান্য প্রয়োজনে যন্ত্র এক প্রধান উৎপাদকের ভূমিকা নিয়েছে। সফল প্রযুক্তির মাধ্যমে কল-কারখানার উন্নতি সাধন হয়েছে। আকাশযান, জলযান, স্থলযান সর্বত্রই দ্রুত গমনের যে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ উদ্ভাবন করেছে তা সফলতা লাভ করেছে সুষ্ঠু প্রয়োগ কৌশলের পারদর্শিতায়।

প্রযুক্তি একান্তই আধুনিককালের নয়। অতীতেও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের নিদর্শন দেখা যায়। সফল প্রযুক্তির দ্বারাই প্রাচীন মিসরীয়রা পিরামিডের মত আশ্চর্য স্থাপত্যশিল্পের জন্য। দিতে সক্ষম হয়েছিল। তবে আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির সুফল অতীতের চেয়ে অনেক ব্যাপক। যন্ত্রযুগে মানুষ দৈহিক শক্তির অপচয় রোধ করতে পেরেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। বর্তমানে প্রযুক্তিবিহীন জীবন অর্থহীন। জীবন মানের উন্নয়ন ও সভ্যতা বিকাশে উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা এখন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কৌশলের ওপর নির্ভরশীল।

প্রযুক্তির বিরূপ প্রভাব :

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “Everything has a bad side.” অর্থাৎ প্রতিটি জিনিসেরই একটা খারাপ দিক আছে। সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা থাকাটা স্বাভাবিক। আলোর নিচে যেমন অন্ধকার, ভালোর পিছনেও তেমনি খারাপ। তেমনি প্রযুক্তি আধুনিক জীবনের হাতিয়ার হলেও প্রযুক্তির কিছু কিছু ক্ষতিকারক দিকও আছে। যেমন- প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহারে ব্যর্থ হলে প্রযুক্তি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে প্রযুক্তিকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে দেশ ও দশের ক্ষতি সাধন করে। ফলে প্রযুক্তির অবদান থাকা সত্ত্বেও এর প্রতি মানুষের একটা বিরূপ ধারণা আছে। মানুষ প্রযুক্তিকে তখন ঘৃণা করতে শুরু করে। তাই প্রযুক্তিকে যাতে কেউ অসৎ পথে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।

উপসংহার :

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির কল্যাণে অতি অল্প সময়ে সহজে বেশি সুবিধা লাভ করছে। ঘরে বাইরে সবখানেই আজ বিজ্ঞানের নিয়ন্ত্রণ অপরিসীম। বাইরে তো বটেই, ঘরের ভেতরেও বিজ্ঞান আমাদের উপর তার প্রভুত্ব বাড়িয়ে চলেছে। শুধু শহরের জীবনেই নয়, গ্রামীণ জীবনেও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। তাই আধুনিক জীবনে প্রযুক্তিগত জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন। যে দেশ প্রযুক্তির দিক দিয়ে যত সমৃদ্ধ সে দেশ তত উন্নত এবং মানুষের জীবন তত আধুনিক।

আরও পড়ুন:

Exit mobile version