আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার ,  ভূমিকা : একটি দেশের জনসংখ্যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণনাকরণকে বলা হয় আদমশুমারি। আভিধানিক অর্থে ‘আদমশুমারি’ বলতে লোকগণনা বা জনসংখ্যা নির্ধারণ বোঝালেও এর অর্থ ও তাৎপর্য অনেক ব্যাপক। প্রকৃত অর্থে আদমশুমারি বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট ভূখতে অবস্থিত জনসংখ্যার হিসাবসহ আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারার বিজ্ঞানসম্মত তথ্য-উপাত্ত সংগ্ৰহ বোঝায়।

আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

আদমশুমারি গণনা

এ তথ্য সংগ্রহের ফলে দেশের মোট জনসংখ্যা ছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির আনুপাতিক হার, বয়স অনুপাতে জনসংখ্যা, জন্ম-মৃত্যুর হার, পুরুষ-নারীর আনুপাতিক হার, মাথাপিছু আয়, বেকারত্বের হার, সাক্ষরতা ও শিক্ষার হার, স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা, আবাসন পরিস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত জানা যায় ।

আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

আদমশুমারি কি: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে দেশের মধ্যে যে সকল লোক বসবাস করেন তাদের প্রত্যেককে গণনা করা ও প্রত্যেকের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করার সরকারি প্রচেষ্টাকে বলা হয় আদমশুমারি। শুমারিতে সদ্য প্রসূত শিশু থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবণিতা সবাইকে গণনাভুক্ত করা হয়। মারির গণনা থেকে কাউকে বাদ দেয়া হয় না। দেশের প্রতিটি থানার সদস্য (যেমন খানা প্রধান ও তার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, অন্যান্য আত্মীয়, মেহমান, কাজের লোক ও অন্যান্য লোক),

যারা প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা সংরক্ষণ সংস্থার সদস্য, যারা হোটেল, মেস, হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা ইত্যাদির বসবাস করেন ও যারা রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, রাস্তা- ঘাট বা হাসপাতালের নিচে কিংবা কোনো বাড়ির সিঁড়ির নিচে ইত্যাদি যে কোনো জায়গায় রাত্রি যাপন করেন তাদের সকলকেই শুমারিতে গণনা করা হয়। শুমারিতে কখনো কোনো ব্যক্তিকে দুবার গণনা করা হয় না। প্রতি দশ বছর পর পর সারাদেশের আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়।

আদমশুমারির উদ্দেশ্য : মধ্যযুগে প্রাচ্য এবং প্রতীচ্যের সকল দেশের সরকার করারোপ ও সামরিক প্রয়োজনে মাঝে মাঝে আদমশুমারি করত। অতীতে আদমশুমারির উদ্দেশ্য ছিল মূলত করধার্য করার জন্য গোত্রের লোকসংখ্যা ও তাদের সম্পত্তির হিসাব রাখা কিংবা শত্রুর আক্রমণ মোকাবেলার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে জনসংখ্যার সক্ষমতার খতিয়ান বের করা। তবে আধুনিক কালে আদমশুমারির উদ্দেশ্য ও উপযোগিতা অনেক ব্যাপক। আদমশুমারির মাধ্যমে জনসংখ্যার নানা মাত্রিক চিত্র পাওয়া যায়।

জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, অভিবাসনসহ জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির হার ইত্যাদি সবই ধরা পড়ে আদম মারির প্রতিবেদনে। যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে বাস্তব  পরিকল্পনা প্রণয়নে আদমশুমারি এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় সহযোগিতায় ১৯৭৪,  ১৯৮১, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সারাদেশে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। জনবহুল আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান সঠিক জনসংখ্যা নিরূপণ । করার লক্ষ্যে এই শুমারি অপরিহার্য ও এর গুরুত্ব অপরিসীম।

লোকসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ। এই লোকসংখ্যার হিসাব রাখা ও প্রত্যেক ব্যক্তির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হয় আদমশুমারির মাধ্যমে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, প্রতি বর্গকিলোমিটারের জনবসতি, বিভিন্ন শ্রেণীর দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিকের সংখ্যা, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত লোকের সংখ্যা, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকসংখ্যা, বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ইত্যাদি তথ্য আদমশুমারি থেকে সংগৃহীত হয়। দেশের সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নসহ প্রশাসন ও জনগণের কল্যাণমূলক কর্মসূচি সুপরিকল্পিতভাবে চিহ্নিত ও বাস্তবায়ন করা হয় শুমারিতে সংগৃহীত তথ্যের সাহায্যে।

লোকগণনার ঐতিহাসিক পটভূমি : সুপ্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীতে লোকগণনার রীতি চলে আসছে। বাইবেলে এক ধরনের আদমশুমারির উল্লেখ আছে। হযরত মুসা (আ)-এর সময়ে বনি ইসরাইলদের শক্তি নিরূপণ করার জন্য লোকগণনা করা হয়েছিল। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে চীন ও মিশরে আদমশুমারি হয়েছিল বলে জানা যায়। ১০৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ রাজা ১ম উইলিয়াম প্রথম ভূমি ও ভূম্যধিকারী মানুষের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করান। তার এই কার্যাবলী লিপিবন্ধ করা হয় ডুমস ডে বুক নামের গ্রন্থে।

এই জরিপকে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আদিতম আদম’শুমারি বলে ধরে নেয়া হয়। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সম্রাট আকবর ভূমি জরিপ ও বন্দোবস্তি শুমারি পরিচালনা করেন, যা ছিল মৌজাভিত্তিক খাজনা আদায়ের এক বিস্তারিত গণনা। ইতিহাসে টোডর মল বন্দোবস্ত নামে পরিচিত এই জরিপ খাজনাদাতা, আবাদি জমি, উৎপাদনশীলতা অনুযায়ী জমির বিভাজন, বিভিন্ন শ্রেণীর জমির খাজনা কাঠামো, জমির মালিকদের তথ্য ও অন্যান্য তথ্য লিপিবদ্ধ করে। টোডর মল বাংলার সরকারদের এক তাত্ত্বিক জরিপও সম্পন্ন করেন যদিও বাংলা তখনো পুরোপুরি আকবরের শাসনাধীন রাজ্য ছিল না। তিনি বাংলার ১৭টি সরকার বা প্রদেশের খাজনাদাতার গণনা সম্পন্ন করেন ।

আঠারো শতকের শেষার্ধে এসে আদমশুমারি আধুনিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে নতুন বিন্যাসে প্রবর্তিত হয়। ১৭৯০ সালে মার্কিন সরকার প্রথম আধুনিক আদম’শুমারি পরিচালনা করে। ১৮০১ সালে দশবছর ভিত্তিক প্রথম ব্রিটিশ আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে আদমশু’মারি আর্থসামাজিক প্রবণতার দশবছর ভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যাপারে একটি অনুপম অনুশীলনের রূপ লাভ করে। ১৮০১ সালে বাংলার জেলাসমূহের একটি ধারণাগত আদমশুমারিও করা হয়। বাংলার কালেক্টর, ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিচারকগণকে তাদের আওতাভুক্ত জেলাসমূহের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে হয়। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর জনসংখ্যা গণনা করার পদ্ধতি ছিল পরিবার-পিছু গড়ে পাঁচ জনকে নিয়ে গণনা করা।

১৮৪০ এবং ১৮৫০-এর দশকে বাংলার খাজনা প্রদানকারী ও খাজনামুক্ত ভূ-সম্পত্তির জনসংখ্যাবিষয়ক বহু জরিপ ও আদম’শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৪০-১৮৫০ সময়কাল থাকবন্ত জরিপ বাংলার সকল জেলার গ্রামগুলোর সীমানা প্রথমবারের মতো নির্ধারণ করে, প্রতিটি মৌজার জন্য একটি স্কেলহীন মানচিত্র তৈরি করে এবং গ্রামের জনসংখ্যা গণনা করে, যা সংশ্লিষ্ট মৌজার মানচিত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। মানচিত্রে মৌজার পরিসংখ্যানগত বর্ণনাসহ একটি সারণি ছিল, যাতে পরিবার, জনসংখ্যা (পরিবার পিছু পাঁচ জনের ওপর ভিত্তি করে), পেশা এবং হিন্দু-মুসলিমের বিভাজন ইত্যাদিও লিপিবদ্ধ ছিল।

ছকে পশুসম্পদ, আবাদি জমি, পশ্চাদভূমি, জঙ্গল-ভূমি, জলাভূমি, নদী ও খাল, সেতু ও কালভার্ট ইত্যাদি সম্পর্কিত কিছু তথ্যও ছিল। এসব তথ্য ছিল ডব্লিউ ডব্রিউ হান্টার প্রণীত স্ট্যাটিসটিক্যাল একাউন্ট অব বেঙ্গল (লন্ডন, ১৮৭৬) শীর্ষক ২০ খণ্ডের বেঙ্গল গেজেটিয়ার প্রকাশের মৌলিক উপাদান। বাংলার প্রথম দশবছর ভিত্তিক আদমশুমারি ১৮৭২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রচেষ্টাটি তার পূর্ণ অভীষ্ট অর্জনে ব্যর্থ হয় । জনসংখ্যা গণনাকে সন্দেহজনক চোখে দেখে অনেক পরিবার সঠিক তথ্য প্রদান করে গণনাকারীকে যথাযথভাবে সাহায্য করেনি।

অবশ্য এই আদমশুমারির ফলে বাংলা যে একটি মুসলিমপ্রধান প্রদেশ এ বিশ্বয়কর সত্যটি স্পষ্ট হয়। ১৮৮১ এবং ১৮৯১ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় আদম’শুমারি অনেক বেশি ফলপ্রদ হয়, যদিও পূর্বের ঘাটতিগুলো পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হয়নি। জনসংখ্যাবিদদের মতে, ১৯৩১ এবং ১৯৪১ সালের আদম’শুমারির উপাত্তসমূহ ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করার কারণে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। সাম্প্রদায়িক উৎসাহের বশবর্তী হয়ে হিন্দু এবং মুসলমানগণ তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায় সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদান করে। পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম আদমশুমারি ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতেও বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতা ছিল। দুই দিকে অভিবাসনের প্রবণতা বহু জেলায় আদমশুমারিকে অর্থহীন করে তোলে। ১৯০১ সালের পর ১৯৬২ সালের আদম’শুমারি সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

দশবছর ভিত্তিক লোকগণনা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির কাছে এর গুরুত্ব হারাচ্ছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তাৎক্ষণিকভাবে সব ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ, সরবরাহকরণ, হালনাগাদকরণ ও তথ্যসমূহের আদ্যপান্ত দেখার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কম্পিউটারের সাহায্যে প্রক্রিয়াকৃত আদমশুমারির উপাত্তের মতো যথাযথ এবং বৈচিত্র্যময় তথ্যের সঙ্গে প্রচলিত ব্যবস্থার আদম’শুমারি, তা যত সযত্নেই পরিচালিত হোক না কেন, তুলনীয় হতে পারে না।

আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

আদমশুমারির প্রয়োজনীয়তা : জনসংখ্যার প্রকৃতি ও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও গতিপ্রকৃতির তথ্য-উপাত্ত ছাড়া দেশ পরিচালনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কঠিন হয়ে পড়ে। বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে ভুল হয়। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের উপযোগী শিশুর সংখ্যা জানা না থাকলে স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যবই মুদ্রণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য না পেলে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ আর্থসামাজিক- সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সাথে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা না হলে, কিংবা ঘাটতির ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা না হলে দেশে দুর্ভিক্ষ মহামারী দেখা দিতে পারে।

দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় আদম’শুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সেক্ষেত্রে দিতে পারে কার্যকর দিক- নির্দেশনা। দেশের জনসংখ্যার কত অংশ জনসম্পদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে, বেকারত্বের হার কত, কর্মসংস্থানের বাস্তব চিত্র কি, বিদেশে জনসম্পদ রপ্তানির সম্ভাবনা যাচাই ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে

সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদমশুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অপরিহার্য উপাদান বলে বিবেচিত হয়। অর্থনীতির ক্ষেত্রে তো বটেই, সমাজবিজ্ঞান ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণায়ও গবেষকদের আদমশুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সহায়তা নিতে হয়।

আদমশুমারির পদ্ধতি : আদমশুমারি বিশেষ পদ্ধতিতে সুপরিকল্পিত পন্থায় সম্পন্ন করা হয়। এজন্য আগে ভাগেই সুপরিকল্পিত ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়। আদম’শুমারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সমগ্র দেশকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণনাকারী নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তারা বিশেষভাবে প্রণীত প্রশ্নপত্রের ফরম নিয়ে। প্রত্যেক বাড়িতে বা স্থাপনায় গিয়ে তথ্য সপ্তাহ করেন। দক্ষ তত্ত্বাবধায়কের সতর্ক দায়িত্বে এ কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর সব তথ্য একত্রিত করা হয়।

প্রাপ্ত সব তথ্য পরীক্ষা ও শ্রেণীবিন্যাস করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে বিশেষ বিশেষ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্ববধানে সামগ্রিকভাবে গণনা ও বিশ্লেষণ করার পর চূড়ান্ত তথ্য বিবরণ প্রকাশিত হয়। ঐ বিবরণে দেশের সামাজিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বিকাশের ধারা, সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ইত্যাদির সামগ্রিক তথ্য ও চিত্র পাওয়া যায়। ঐ তথ্য ও চিত্র কেবল দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না, সমগ্র বিশ্ব পরিসরেও এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব থাকে। নিচে ১৮৭২ সাল থেকে জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি দেখানো হলো :

আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

আদমশুমারি নির্ভুলতার গুরুত্ব : আদম’শুমারির তথ্য নির্ভুল না হলে তার গুরুত্ব ও মূল্য কমে যায়। সেজন্য গণনা যথাসম্ভব বাস্তবভিত্তিক ও নির্ভুল হতে হয়। গণনা সাধ্যমতো নির্ভুল করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা ও আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। গণনার নির্ভুলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গণনাকারীর নিষ্ঠা ও সততা অপরিহার্য। গণনা নির্ভুল করার লক্ষ্যে সরকার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেন এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গণনা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেন।

শুমারি কিভাবে অনুষ্ঠিত হয় : দেশের আদমশুমারি শুমারি আইন’ ১৯৭২ সালে জারিকৃত প্রেসিডেন্টের আদেশ নং ৭০ (সংশোধিত) বলে অনুষ্ঠিত হয়। এই আইনের আওতায় সরকার ২০০১ সালের ২৩- ২৭ জানুয়ারি সারাদেশে চতুর্থ আদম’শুমারি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

২২ জানুয়ারি মধ্যরাত্রি থেকে গণনা কাজ শুরু হয় ও ঐ মধ্যরাত্রিকে ‘শুমারি রাত্রি বলা হয়। ২২ জানুয়ারি ২০০১ তমারি রাতিত্রে গণনাকৃত বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১২.৩১,৫১,২৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬,২৭,০৫,৯৮৮ জন এবং মহিলা ৬,০৪,১৫,২৫৮ জন। শুমারির পূর্ণতা এবং গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য ২৩-২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০১ তারিখের মধ্যে গণনা পরবর্তী যাচাই (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়। পিইসির ফলাফল সমন্বয় সাধনের পর ২২ জানুয়ারি ২০০১ তারিখে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১২,৯২,৪৭,২৩৩ জন

ক. শুমারিতে যে সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়: শুমারিতে কেবলমাত্র অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলোই জিজ্ঞাসা করা হয় । এই প্রশ্নগুলো গৃহ ও খানা সম্পর্কে ও অন্যগুলো প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পর্কে করা হয়।

খ. গৃহ খানা সম্পর্কে যে প্রশ্নগুলো করা হয়: ১. খানার প্রকার, ২. গৃহের সংখ্যা, ৩. খানা প্রধান গৃহের প্রকার, ৪. বাসস্থানের মালিকানা, ৫. খাবার পানির উৎস, ৬. পায়খানার সুবিধা, ৭. বিদ্যুৎ সুযোগ, ৮. নিজস্ব কৃষি জমি, ৯. প্রতিবন্ধী আছে কি ও ১০. খানার আয়ের প্রধান উৎস (গত এক বছরে) ।

গ. ব্যক্তিগত যে প্রশ্নগুলো করা হয়: ১. শুমারি রাত্রিতে খানার উপস্থিত সদস্যের নাম, ২. বয়স, ৩. খানা প্রধানের সাথে সম্পর্ক, ৪. লিঙ্গ, ৫. বৈবাহিক অবস্থা, ৬. ধর্ম, ৭. সর্বোচ্চ শ্ৰেণী পাস, ৮. পাসের ক্ষেত্র, ৯. ছাত্র কি? ১০. চিঠি লিখতে পারে কি?, ১১. প্রধান কাজ / পেশা (গত এ সপ্তাহে) ও ১২. কাজের মর্যাদা ।

আদমশুমারি গণনা | সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার

 

উপসংহার : আধুনিক বিশ্বে যে কোনো দেশের কিংবা বৈশ্বিক অগ্রগতির জন্য আদমশুমারির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যসহ দেশের সার্বিক তথ্য ও চিত্র হাতে থাকা দরকার। আদমশুমারির মাধ্যমে সে তথ্য ও চিত্র পাওয়া যায়। সে চিত্র যেন নির্ভুল ও বাস্তব হয় সেজন্য সরকার, জনগণ ও গণনাকারী সকলকে পালন করতে হয় সৎ ও সনিষ্ঠ ভূমিকা।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment