“আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অনন্য ঋতুবিষয়ক কবিতা, যা বসন্তের আগমনের মাধুর্য ও নবজাগরণের প্রতীকী অভিব্যক্তি। এই কবিতায় কবি বসন্তকে এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যে যেন দ্বারে এসে জাগরণের আহ্বান জানায়। কবি প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধের মাধ্যমে মানবমনে আনন্দ, প্রেম ও সৃষ্টিশীলতার উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছেন। কবিতাটিতে বসন্ত শুধু ঋতু নয়, বরং নতুন জীবনের, নবতর আশার, এবং মানসিক উন্মেষের প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ এই কবিতার মাধ্যমে পাঠককে আহ্বান জানান – পুরনো ক্লান্তি, অবসাদ ও শূন্যতা ঝেড়ে ফেলে নতুন দিনের আলোকে গ্রহণ করার জন্য। “আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে” কেবল একটি ঋতুবরণ কবিতা নয়, এটি এক নান্দনিক ও দার্শনিক উপলব্ধির কাব্যিক প্রকাশ।
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (গীতাঞ্জলি)
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।
অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে–
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।
‘আহা আজি এই বসন্তে,
এতো ফুল ফোঁটে,
এতো বাঁশি বাজে এতো পাখি গায়।’
‘বসন্ত এলো এলো এলোরে,
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে।’
‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়,
ফুল ফুটেছে বনে বনে,
শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে।
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আবৃত্তিঃ