অলিম্পিক, অলিম্পিক গেমস প্রতিবেদন রচনা । Essay on Olympic

অলিম্পিক, অলিম্পিক গেমস [ Essay on Olympic ] অথবা, অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

অলিম্পিক, অলিম্পিক গেমস প্রতিবেদন রচনা । Essay on Olympic
অলিম্পিক রচনা । Essay on Olympic

অলিম্পিক গেমস রচনার ভূমিকা:

বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক। পুরাে দুনিয়াকে প্রাণের জোয়ারে মাতিয়ে দিতেই অলিম্পিক মহােৎসবের আয়ােজন হয়। প্রতি চার বছর অন্তর আয়ােজিত হয় এ ক্রীড়া প্রতিযােগিতার আসর। আয়ােজক দেশ মহা ধুমধামে বিশ্বের সকল দেশকে একই মেলবন্ধনে গ্রথিত করার ব্রত নেয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা’ এ মূলনীতি অবলম্বন করে আয়ােজন করা হয় অলিম্পিক ক্রীড়া আসরের। আর সে আসরের উন্মাদনায় ভাসার অপেক্ষায় থাকে গােটা বিশ্ব।

অলিম্পিক ইতিহাস:

রেকর্ড বুক অনুযায়ী ৭৭৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক চালু ছিল। প্রতি চার বছর অন্তর অলিম্পিয়া নগরীতে বসত ক্রীড়া প্রতিযােগিতার আসর। ৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট প্রথম থিওডােসিয়াস গ্রিসের প্রাচীন এ অলিম্পিকের সমাপ্তি টানেন। ১৮৯৬ সালে এথেন্সে পিয়েরে দ্য কুবার্তার উদ্যোগে সূচনা হয় আধুনিক অলিম্পিকের ।

৪৩টি প্রতিযােগিতায় অংশ নেন ১৪ দেশের ২৪৫ ক্রীড়াবিদ। কিন্তু বাদ পড়ল নারীরা। ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে ৭৫টি প্রতিযােগিতার মধ্যে কেবল লন টেনিস আর গলফে অংশগ্রহণের অনুমতি পেল ১১ জন নারী। এভাবে প্রতি চার বছর পর পর বিশ্বের একেক দেশ আয়ােজন করে অলিম্পিকের জমকালাে আসরের। দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯১৬, ১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়নি।

সর্বশেষ অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে এতে ৩০৬টি ইভেন্টে ১০,৫০০ জনেরও বেশি ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করে। সকল ভেদাভেদ আর অন্যায়ের উর্ধ্বে ভ্রাতৃত্ববােধের আদর্শে যােগদানের উদ্দেশ্যেই বিশ্ববাসীর দরবারে অবদান রেখে যাচ্ছে পিয়েরে দ্য কুবার্তার অলিম্পিক ।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

অলিম্পিক আনুষ্ঠানিকতা:

জমজমাট আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠিত হয় অলিম্পিক। প্রতিটি আয়ােজক দেশ তাদের শক্তি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষই তুলে ধরতে চায় এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিশ্ববাসীর দরবারে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণই এ আয়ােজনের লক্ষ্য। প্রতিটি দেশ নিজেদের মতাে করে অনুষ্ঠানের আয়ােজন করলেও কিছু আনুষ্ঠানিকতা আধুনিক অলিম্পিকের সূচনালগ্ন থেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

যেমন- পায়রা ওড়ানাে, অগ্নিশিখা ও মশাল জ্বালানাে, পতাকা উত্তোলনের সাথে অলিম্পিক সংগীত পরিবেশন ও অলিম্পিক শপথ গ্রহণ। অলিম্পিকের অনুষ্ঠানস্থলে বিশালাকার মশালটি জ্বালানাের পর শান্তির চিহ্ন হিসেবে মুক্ত করা হয় পায়রা। বাজানাে হয় অলিম্পিক সংগীত। নেয়া হয় অলিম্পিক শপথ।

বিশ্বমৈত্রী সৃষ্টিতে অলিম্পিক:

বিশ্বের এ বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞের মাধ্যমে বিশ্বভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিরই আহ্বান জানানাে হয়। অলিম্পিকের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বের সকল প্রাণ একই প্রাণ-স্পন্দনে মেতে ওঠে। অলিম্পিক পতাকার মধ্যে যে পাঁচটি বৃত্ত রয়েছে তা আফ্রিকা, দুই আমেরিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া আর ইউরােপ এ পাঁচটি মহাদেশকে নির্দেশ করে।

যদিও নির্দিষ্ট মহাদেশের জন্যে কোনাে বৃত্ত নির্ধারণ করা হয়নি। সামগ্রিকভাবে পাঁচটি বৃত্ত বলে দেয় অলিম্পিক গেমস হচ্ছে সর্বজনীন এবং বৈশ্বিক। সমগ্র বিশ্বের খেলােয়াড়দের এক মিলনমেলা। এ পতাকার ছয়টি রং কালাে, নীল, সবুজ, লাল, হলুদ ও সাদা একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে অর্থাৎ অলিম্পিকের সর্বজনীনতা ও বৈশ্বিকতাই প্রকাশ করে। কেননা সারা বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের পতাকায়।

ছয়টি রং কোনাে না কোনােভাবে আছে। বিশ্বমৈত্রীবােধে উদ্বুদ্ধ হয়ে পিয়েরে দ্য কুবার্তাই ১৯১২ সালের অলিম্পিকের পর এ পতাকার নকশা তৈরি করেন। আর এ অলিম্পিকেই প্রথম পাঁচ মহাদেশের খেলােয়াড়রা অংশ নিয়েছিল। খেলার জগতে এটাই একমাত্র আয়ােজন যেখানে বিশ্বের সকল ক্রীড়ামােদীর জন্যে দ্বার উন্মুক্ত থাকে।

অলিম্পিক রচনা । Essay on Olympic
অলিম্পিক রচনা । Essay on Olympic

অলিম্পিক মানে সুস্থ বিনােদন:

খেলার জগৎ মানুষের শরীর-মন গঠনের অন্যতম উৎস। এ জগতেই মানুষ খুঁজে পায় প্রতিভা বিকাশের উন্মুক্ত বিশালতা। জীবনসংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার দুর্জয় মনােভাবও এ জগৎ থেকে পাওয়া যায় । খেলাধুলার আনন্দময় পরিবেশ সুস্থ মানসিক বিকাশে রাখে অনন্য ভূমিকা। কেননা সুস্থ বিনােদনই পারে সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে ।

এক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর কাছে অলিম্পিক সুস্থ বিনােদনের অতুলনীয় মাধ্যম । দেশ-জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে এ আয়ােজন কেবলই মানুষকে নির্মল আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে করা হয়। সকল প্রকার অন্যায়, অকল্যাণ, অসত্য এ আসরে থাকে অস্বীকৃত। বিশ্বের সবাই একই স্বপ্ন, একই বন্ধুত্বের হাত ধরে এ আয়ােজনের অংশীদার হয়। খেলাধুলার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে মৈত্রী ও মনুষ্যত্বের দুর্লভ ঐশ্বর্য দানই অলিম্পিকের মূল লক্ষ্য।

অলিম্পিক আয়ােজনের গুরুত্ব:

একই স্বপ্ন-মন্ত্রে উদ্দীপ্ত ও একাত্ম হওয়ার দুর্লভ সুযােগ বিশ্ববাসী একমাত্র অলিম্পিকের মাধ্যমেই পায়। বিশ্বের অগণিত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রামী চেতনা, আদর্শবাদ, সংস্কৃতির সাথে একই সময়ে পরিচিত হওয়ার সুযোগও এ বৃহত্তম ক্রীড়া আসরে পাওয়া যায়। দলীয় নয়, বরং ব্যক্তির নিজস্ব অর্জনের ওপরই বেশি জোর দেয় অলিম্পিক।

তাই বিশ্ববাসীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে এ আয়ােজনের গুরুত্ব অপরিসীম। এক সাথে এতগুলাে খেলার আয়ােজন করে বিশ্বের সকল দেশকে, সকল মানুষকে একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করানাের ক্ষেত্রে অলিম্পিক আয়ােজনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । বিশ্বের এ বৃহত্তম ক্রীড়া আয়ােজনের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার যে আহ্বান জানানাে হয় তার আবেদন সর্বকালের সেরা আবেদন।

উপসংহার:

অলিম্পিককে বলা হয় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শাে অন আর্থ’। যেখানে হীন স্বার্থচেতনা নয় বরং এর বিশাল প্রাঙ্গণে থাকে বিশ্বমানবতার প্রতি উদার ও উচ্চ আহ্বান। একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুরাে দুনিয়া দুর্লভ অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। বিশ্বের সকল প্রাণ একই প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ফলে মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্র হয় সুবিশাল, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্র হয় প্রসারিত। তাই অলিম্পিক মহােৎসব মানেই মিলনের মহামূল্য আয়ােজন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment