অনুসর্গের প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

অনুসর্গের প্রয়োগ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের একটি পাঠ। ‘মনুষ্যজাতি প্রায় সমুদয় জন্তু অপেক্ষা অধিক কাল বাঁচে’ (বিদ্যাসাগর) । ‘ইহার অপেক্ষা সুব্যবস্থা এক্ষণে আর হইতে পারে না’ (বঙ্কিমচন্দ্ৰ)৷ ‘দেবতার চেয়ে মানুষের ’পরে তোমার বিশ্বাস বেশি’ (রবীন্দ্রনাথ)। ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি’ (কামিনী রায়)। ‘সে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না’ (শরৎচন্দ্র)। ‘ধর্ম বিনা জীবন হয়’ বৃথা হ রামমোহন)। ‘রঙ্গমহলের ভিতর প্রবেশ করিতে হইবে’ (বঙ্কিম)।

অনুসর্গের প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

‘চোখের জলের মতো বিষ্টির এক-একটি ফোটা ঝরে পড়ছে’ (অবনীন্দ্রনাথ)। অনুসর্গ প্রয়োগের ব্যাপারে “একটা কথা বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে”, রবীন্দ্রনাথ সেই কথাটি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন : “পালকিতে ক’রে যাওয়া চলে, পালকি দিয়ে চলে না। খাবার বেলায় বলি—‘হাতে ক’রে খাও’, নেবার বেলায় বলি, – ‘হাত দিয়ে নাও’।

 

অনুসর্গের প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

 

একটাতে হাত হচ্ছে উপায়, আর একটাতে হাত হচ্ছে আধার। ‘পালকিতে ক’রে মানুষ যায়, যায় ‘পথ দিয়ে’। এখানে পালকি উপায়, পথ আধার। কিন্তু অর্থ হিসেবে পারে, আধার বিকল্পে হাত উপায়ও হতে হতে পারে। তাই ‘হাত দিয়ে খাও’ বলাও চলে, ‘হাতে করে খাও ব’তেও দোষ নেই। ব’লে থাকি, ‘বড় রাস্তা দিয়ে যখন যাবে গাড়িতে ক’রে যেয়ো’; কোনো সাহেব যদি বলে, ‘রাস্তায় ক’রে যাবার সময় গাড়ি দিয়ে যেয়ো’ বুঝব সে বাঙালি নয়। ‘লোক দিয়ে পাঠাব চিঠি; লোকটা উপায়; ‘ব্যাগে করে সে চিঠি নেবে’, ব্যাগটা আধার। “পশুর থেকে মানুষের উৎপত্তি? এ কথা বলা চলে।

 

অনুসর্গের প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

 

কিন্তু ‘মানুষ থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে’ বলিনে—‘মানুষের গা থেকে কিংবা কাপড় থেকে’। ‘বিপিন থেকে টাকা পেয়েছি, বলা চলে না, বলতে হয় ‘বিপিনের কাছ থেকে টাকা পেয়েছি’। এর কারণ, অচেতন পদার্থের নামের সঙ্গেই ‘থেকে’ শব্দের সাক্ষাৎ সম্বন্ধ। তাই, ‘মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে, ‘পাখি থেকে গান ওঠে না, ‘পাখির কণ্ঠ থেকে গান ওঠে। কেবল ‘থেকে’ নয়, ‘হ’তে’ শব্দ প্রয়োগেও ওই একই কথা। ‘অযোদ্ধা হতে রাম নির্বাসিত হয়েছিলেন; কিন্তু ‘তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন রাবণের কাছ হতে।”

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment