“অদ্ভুত আঁধার” কবিতাটি বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট আধুনিক বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনার মধ্যে একটি। এটি তাঁর “জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা” সংকলনের অন্তর্ভুক্ত। জীবনানন্দ দাশ বাংলা আধুনিক কবিতার পথিকৃতদের অন্যতম, যিনি তাঁর গভীর ভাবনা ও ভাষার সূক্ষ্মতায় বাংলা কাব্যকে নতুন দিশা দেখিয়েছেন। তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “বনলতা সেন” ১৯৫৩ সালে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয় এবং ১৯৫৫ সালে “শ্রেষ্ঠ কবিতা” গ্রন্থ ভারতের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনের গভীরতাকে অনন্য ছন্দ ও ভাষায় ফুটিয়ে তোলা জীবনানন্দের অন্যান্য প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “রূপসী বাংলা,” “মহাপৃথিবী,” “বেলা অবেলা,” “কালবেলা” ইত্যাদি। “অদ্ভুত আঁধার” কবিতায় তাঁর শিল্পীসত্তার অন্তর্নিহিত দার্শনিক গভীরতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়।
জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।
অদ্ভুত আঁধার এক কবিতা – জীবনানন্দ দাশ
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহত্ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।