শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রচনা [ Martyr intellectuals day Essay ] লিখবো আজ। আমরা আপনাদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নমুনা রচনা বা নমুনা প্রতিবেদন তৈরি করে দিচ্ছি। তবে এগুলো আপনাদের মুখস্থ করার জন্য নয়। বরং এই প্রতিবেদনগুলো থেকে ধারণা নিয়ে আপনি আপনার নিজের মতো করে লিখবেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি বিশেষ দিবস। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবী হ-ত্যা করে।এ কাজে বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল।
Table of Contents
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রচনা [ Martyr intellectuals day Essay ]
ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে । প্রায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দান করেছেন এদেশের অজস্র মানুষ। তাদের মধ্যে যেসব খ্যাতনামা বরেণ্য একটি শহীদ হয়েছেন তারাই হলেন শহীদ বুদ্ধি-জীবী। এসব শহীদ বুদ্ধি-জীবীর মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদি, রাজনীতিবি, সঙ্গীতজ্ঞ ও সমাজসেবক।
বুদ্ধিজীবী কি? বুদ্ধিজীবী কারা?
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী যারা দৈহিক শ্রম এর বদলে মানসিক শ্রম বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম দেন তারাই বুদ্ধিজীবী। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত শহীদবুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে বুদ্ধিজীবীদের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলঃ
“বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক, বিজ্ঞানী , চিত্রশিল্প, কণ্ঠশিল্প, সকল পর্যায়ের শিক্ষ, গবেষ, সাংবাদি, রাজনীতি, আইনজীব, চিকিৎস, প্রকৌশল, স্থপতি, ভাস্ক, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচার, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্ত, সমাজসেবী এবং সংস্কৃতি সেবি”।
প্রধানত তিন ধরনের ব্যক্তিগণ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমাজে পরিচিত হতে পারেন
১. একজন ব্যক্তি বিমুর্ত, চিন্তা ধারা ও তাত্বিক বিষয়ে জড়িত;
২. দর্শন তত্ত্ব, সাহিত্যিক সমালোচন, সমাজতত্ত, আই, রাজনৈতিক বিশ্লেষণকারী, তাত্বিক বিজ্ঞানী হিসেবে একজন ব্যক্তির পেশা একান্তই উৎপাদনমুখী ভাবনায় নিমজ্জিত হবে
৩. উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক এবং বিশেষজ্ঞ শিল্পজ্ঞ্যান যা তাকে জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম।
বুদ্ধিজীবিদের হত্যার নীল নকশাঃ
পাকিস্থানী সৈন্যরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ওরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠূর হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি পরিকল্পিত ভাবে একে একে হত্যা করে এদেশের বরেণ্য ব্যাক্তিদের। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পুরো দেশের নানা পেশার মেধবী মানুষকে হত্যার জন্য তারা তালিকা তৈরি করে।
পাকিস্থানের মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০ বুদ্ধিজিবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর মাধ্যমে তারা হত্যার এ নীলকশা বাস্তবায়ন করে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীঃ
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পারে পাকিস্থানি শাসকচক্র বাংলাদেশকে চিরোতরে মেধাশূণ্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তারা এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর সহায়তায় এ দেশের চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও সৃজনশীল ব্যাক্তিদের হত্যা করার জন্য নতুনভাবে পরিকল্পনা করে।
১৯৭১ সালের ১০ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্য তারা ঢাকার বাড়ি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় দেশের বিশিষ্ট ও প্রতিভাবান মানুষকে। এদের মধ্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও আনোয়ার পাশা, ইতিহাসের অধ্যাপক সন্তোষ চন্দ্র ভট্রাচার্য ও গিয়াশ উদ্দিন আহমদ, ইংরেজীর অধ্যাপক রাশিদুল হাসান।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিলো মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে। কারও কারও লাশও পাওয়া যায় নি। তাদের স্বরণে আমরা প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধি-জীবী দিবস পালন করি।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে সক্রিয় ব্যাক্তিবর্গঃ
বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন ব্রি. জে. আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্ণেল তাজ, কর্ণেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, ডঃ মোহর আলী, আল বদরের এবিএম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মইনুদ্দীন। এদের নেতৃত্ব দেয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
শহীদ বুদ্ধিজীবী সৃতিসৌধঃ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্বরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী সৃতিসৌধ নির্মিত হয়। সৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস।
![শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রচনা [ Martyr intellectuals day Essay ] 4 আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2023/01/google-news-300x225.jpg)
১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামের আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়। আর নকশা করেন জামী-আল সাফী ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। আর এটি উদ্বোধন করেন ১৯৯সালের ১৪ই ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপসংহারঃ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলা-দেশের গণতন্ত্র মনস্ক বুদ্ধিজীবীদের কে বাছাই করে হত্যা করেছে। শহীদের রক্তে ভিজে আছে বাংলাদেশের মাটি। যেমন তাদের জন্য ভিজে আছে স্বজনদের চোখ। দেশের জন্য প্রাণ দিলেন, তারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমাদের অতি আপনজন। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা বাংলা-দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি,আমরা তাদের ভুলবো না।
আরও দেখুনঃ