শখের মৃৎশিল্প, মৃৎশিল্প [ Essay on Hobby Potery ] অথবা, মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য- নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

Table of Contents
শখের মৃৎশিল্প রচনা
শখের মৃৎশিল্প রচনার ভূমিকাঃ
বাঙালির প্রাচীনতম ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য, গৌরব ও অহংকারের অন্যতম অংশীদার। জাদুঘরে রক্ষিত এসব মাটির তৈরি শিল্পই প্রমাণ করে যে এদেশের সাধারণ মানুষের মন শিল্পীর মন প্রাচীনকাল থেকেই।
মৃৎশিল্প ও পরিচয়ঃ
মাটির তৈরি শিল্প কর্মকেই মৃৎশিল্প বলে। এ শিল্পে মাটি লাগবেই। তবে যেকোন মাটি দিয়ে সম্ভব নয়। প্রয়োজন পড়ে এঁটেল মাটি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল এঁটেল মাটি আঠালো। কিন্তু দোআঁশ মাটি আঠালো নয়। আবার বেলে মাটি ঝুরঝুরে। এ মাটি দিয়ে মাটির পুতুল, হাঁড়ি, সরা, বাসন-কোসন, থালা, মটকা, প্রতিমা, পেয়ালা ইত্যাদি তৈজস পত্র বানানো হয়।
মৃৎশিল্পের উপকরণঃ
মাটি, কাঠের চাকা, এ চাকায় নরম মাটির তাল লাগিয়ে নানা আকারের মাটির পাত্র তৈরি করে কুমোররা। এছাড়া রং সহ শ্রম আর যত্ন অবশ্যই প্রয়োজন।

মৃৎশিল্পের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যঃ
বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের এক গৌরবময় অধ্যায় রয়েছে, ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাচীন কালে ও মধ্য যুগে মৃৎশিল্প বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৃৎশিল্পঃ
মৃৎশিল্প যেমন একদিকে সাং¯ৃ‹তিক পরিচয় বহন করে অন্যদিকে অর্থনৈতিক সার্বিক অবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা পালন করে। কুমোররা তাদের শ্রম দিয়ে মৃৎ শিল্পকে তৈরি করে এবং এর দ্বারা তাদের জীবিকা চলে। এর মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থও আয় হয়।
মৃৎশিল্পের বৈশিষ্ট্যঃ
মৃৎশিল্পতে অল্প খরচে মাটির জিনিস তৈরি করা যায়, ফলে পুঁজি কম লাগে। অল্প টাকা ব্যয় করে ঘরে বসেই মাটির জিনিস তৈরি করা হয়। এতে কারিগরি দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। এর জিনিস সুন্দর ও টিকে বেশি। এর ব্যবসায়িক চাহিদাও বেশি।

মৃৎশিল্পের অতীত অবস্থাঃ
মৃৎশিল্প সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অবসর সময়ে বিনোদনের মাধ্যমও ছিল বটে। এগুলো আবারও বর্তমান সভ্য সংস্কৃতির পথিকৃৎ। আধুনিক আবিস্কার এগুলো বিলিন করছে দিনের পর দিন। কুমোররা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেদের হাতেই তৈরি করত আবার বাজারে বিক্রয় করত। কিন্তু যা ছিল ঐতিহ্য তা কেবলই স্মৃতি। মেশিন জায়গা দখল করেছে হাতের পরিবর্তে।
মৃৎশিল্পের বর্তমান দুর্দশাঃ
যুগের বিবর্তনে কাঁচ, চীনামাটি,মেলামাইন, টিন, পিতল, এলুমেনিয়াম ইত্যাদি দিয়ে মানুষ তৈজসপত্র তৈরি করছে। ফলে মৃৎশিল্প অবলুপ্ত প্রায়।
মৃৎশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাঃ
আধুনীক যুগ যান্ত্রিক যুগ। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হয়েছে। এর ফলে অনেক নিঁখুত তৈজসপত্র বানানো যায়। একারণে হাতে তৈরি মৃৎশিল্পের ব্যবহার অনেকাংশ কমে গেছে। এর সমৃদ্ধ ইতিহাসই এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।
মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয়তাঃ
মৃৎশিল্প অনেক প্রাচীন একটি শিল্প কুমোর শ্রেণির লোকেরা অনেক পরিশ্রম করে তৈরি করে এসব রকমারি তৈজসপত্র। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

উপসংহারঃ
বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পচর্চার প্রমাণ পাওয়া যায় মৃৎশিল্পে। মানুষকে রুচিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এর ভূমিকার কথা বলাই ধৃষ্টতা। আমাদের জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনকারী মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং আধুনীকায়ন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ