তৎপুরুষ সমাস নিয়ে আজকের আলোচনা। আজকের আলোচনায় থাকবে তৎপুরুষ সমাস, তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ ইত্যাদি |
Table of Contents
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান বলে বিবেচিত হয় এবং পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। আরও বিস্তৃতভাবে বললে বলা যায়, পূর্বপদে কর্ম প্রভৃতি কারকের বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গযুক্ত পদের সঙ্গে অথবা সদস্যপদের সঙ্গে সমাস হয়ে যদি পরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন : ধানের ক্ষেত – ধানক্ষেত, ভাতকে রাঁধা ভাতরাধা ইত্যাদি। এ সমাসে পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত বিভক্তি থাকে এবং সমাস গঠনের ফলে সে সব বিভক্তি লোপ পায়।
তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ:
তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন
১। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। দ্বিতীয়া বিভক্তির চিহ্ন কে. রে। যেমন : গাকে ঢাকা গা-ঢাকা, বইকে পড়া – বই-পড়া ইত্যাদি। এ-রকম আত্মরক্ষা, আত্মহত্যা, কাপড় কাচা, গুনটানা, জাতিগত, দর্পচূর্ণ, দুঃখপ্রান্ত, নারী নির্যাতন, পদত্যাগ, চুক্তি-সম্পাদন, বৃত্তিপ্রান্ত, বুকজুড়ানো, দেশত্যাগ, প্রাণনাশ, ফুলতোলা, বর্ণনাতীত, বিপদাপন্ন ব্যক্তিগত, হস্তগত, রেখাপাত, মর্মগত, মজ্জাগত ইত্যাদি।
ব্যাপ্তি অর্থে কালবাচক পদের সঙ্গে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ হয়। যেমন চিরকাল ধরে সুখ – চিরসুখ, ক্ষণকাল।
ধরে স্থায়ী – ক্ষণস্থায়ী ইত্যাদি। এ-রকম চিরকুমারী, চিরকৃতজ্ঞ, চিরদুঃখী, চিরবঞ্চিত, চিরবসন্ত,
চিরশত্রু, চিরস্থায়ী, চিরস্মরণীয়, দীর্ঘস্থায়ী ইত্যাদি।
পূর্বপদটি বিশেষণের বিশেষণ বা ক্রিয়া-বিশেষণ হলে পরবর্তী কৃদন্ত পদের সঙ্গে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ হয়। যেমন: অর্থরূপে নিচ্ছে অর্ধসিদ্ধ, আধভাবে মরা আধমরা ইত্যাদি।
২। তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়া কর্তৃক ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ’ সমাস হয় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ ‘সমাস বলে। যারা, দিয়া, কর্তৃক এসব তৃতীয়া বিভক্তি। যেমন : মন দ্বারা গড়া – মনগড়া, শ্রম দ্বারা লব্দ = শ্রমলব্দ , মধু দিয়ে মাখা মধুমাখা ইত্যাদি।
উন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ ‘সমাস হয়। যথা- এক যারা উন- একোন, বিদ্যা দ্বারা হীন – বিদ্যাহীন, জ্ঞান দ্বারা শূন্য জ্ঞানশূন্য ইত্যাদি।
উপকরণবাচক বিশেষ্যপদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ’ সমাস হয়। যেমন : স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত – স্বর্ণমণ্ডিত, এ-রকম : অস্ত্রাঘাত, আইনসংগত, ঋণগ্রস্ত, কণ্টকাকীর্ণ, কুরুচিপূর্ণ, কষ্টার্জিত, ক্ষতিগ্রস্ত, গুণান্বিত, ঘটনাবহুল, চন্দনচর্চিত, চিনিপাতা, ছন্দোবদ্ধ, ছায়াশীতল, চুরিকাঘাত, ছায়াচ্ছন্ন, মাটাপেটা, ঢেঁকিছাটা মুখপোষ্য, ধর্মান্ধ, প্রথাবর, প্রীতিপূর্ণ, বায়ুচালিত, বিকারগ্রস্ত, বিজ্ঞানসম্মত, ভারাক্লান্ত মন্ত্রমুগ্ধ, রাহুগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত, শস্যশ্যামল, সর্পদষ্ট, হীরকখচিত ইত্যাদি।
৩। চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি (কে, রে ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ’ সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ’ সমাস বলে। চতুর্থী বিভক্তির চিহ্ন কে, রে। নিমিত্ত বা জন্য অর্থেও চতুর্থী তৎপুরুষ- সমাস হয়। যেমন : দেবকে দত্ত দেবদত্ত বিয়ের জন্যে পাগল – বিয়েপাগল। এ রকম অতিথিশালা, আকেলসেলামি, এতিমখানা, ঔষধালয়, কাদানে গ্যাস, কিশোর পত্রিকা, গুরুভক্তি ছাত্রাবাস, জিয়নকাঠি, ডাকখরচ, পাঠশালা, পাগলাগারদ, পাঠকক্ষ, পা শালা, পান্থনিবাস, ফাঁসিকাষ্ঠ, বসতবাড়ি, মুক্তিপণ বিশ্রামঘর, বৈঠকখানা, ভজনালয়, তোজনালয়, শিশুবিভাগ, হজযাত্রা, স্বদেশপ্রেম, সভামঞ্চ ইত্যাদি।
উদ্দেশ্য বোঝাতে নিমিত্তার্থে চতুর্থী তৎপুরুষ হয়। তখন এর জন্যে’, ‘এর নিমিত্ত’, ‘এর তরে’ ইত্যাদি যুক্ত হয়। যেমন মাপের জন্যে কাঠি মাপকাঠি, বসতের জন্যে বাড়ি – বসতবাড়ি ইত্যাদি।
8। পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ’ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ’ সমাস বলে। হতে, থেকে, চেয়ে এসব পঞ্চমী বিভক্তির চিহ্ন। যেমন: পরানের চেয়ে প্রিয় পরানপ্রিয়; বিলাত থেকে ফেরত – বিলাতফেরত, বদ থেকে জাত – বজ্জাত ইত্যাদি। এ-রকম : কণ্ঠনিঃসৃত মুখভ্রান্ত, বোঁটাৎসা, স্বর্গচত, ঋণমুক্ত, কারামুক্ত, কৃষিজাত, খাঁচাছাড়া, গদিচ্যুত, দলচ্যুত, বৃন্তচ্যুত, লক্ষ্যচ্যুত, চাকভাঙা, জেলফেরত, দলছুট, দভ্রষ্ট, পথভ্রষ্ট, সভ্য, কখনমুক্ত, বিরুয়ল, বিদেশাগত, মেঘমুক্ত, শাপমুক্ত, রোগমুক্ত, স্কুলপালানো, স্নেহবঞ্চিত, হাতছাড়া ইত্যাদি।
সাধারণত চ্যুত, জাত, আগত, তাঁত, গৃহীত, বিরক্ত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, স্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে পঞ্চমী তৎপুরুষ’ সমাস হয়। কোনো কোনো সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ ‘সমাসের ব্যাসবাক্যে ‘এর’, ‘চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়। যথা পরানের চেয়ে প্রিয় পরানপ্রিয়।
৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ ‘সমাস হয় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ’ সমাস বলে। বর্তী বিভক্তির চিহ্ন ‘র’, ‘এর’। যেমন বটের তলা – বটতলা, ঘোড়ার গাড়ি ঘোড়াগাড়ি, রান্নার ঘর রান্নাঘর ইত্যাদি।
এ-রকম অশ্বডিম্য, কবিগুরু, কর্মকর্তা, কর্মক্ষেত্র, কর্মাধ্যক্ষ, কার্যক্রম, কার্যনির্বাহক, কাপপ্রবাহ, কল্পনাশক্তি, ক্ষতচিহ্ন, খাদ্যপ্ৰাণ, গঠনপ্রণালি, গৃহকর্তা, গৃহসজ্জা, গ্রন্থাগার, ঘোড়দৌড়, চন্দ্রগ্রহণ, ছাত্রসমাজ, জগ, জাহাজঘাট, জীবনচরিত, জ্ঞানতাপস, বিশ্লেফুল, টিকিটম্বর, ঠাকুরঘর, তত্ত্বানুসন্ধান, দমননীতি, দলনেতা, দলপতি, দাসত্ব প্রথা, দেশবন্ধু, দেহাতীত, ধর্মচর্চা, ধর্মসংস্কার, ধানক্ষেত, ধারণাতীত, নদীতট, নদীতীর, নির্মাণকৌশল, নীতিবিরুদ্ধ, পথখরচ, পদোন্নতি, পরাধীন, পর্যায়ক্রম পরি-উন্নয়ন, পুকুরঘাট, প্রশ্নমালা, ফুলকলি, বর্ণমালা, বাপঝাড়, বাডুবল বিশ্বনবী, বিশ্বাসঘাতক, বৃক্ষছায়া, বোধোদয়, ভগ্নিপতি, ভাগ্যফল, ভাবাবেগ, ভাবোচ্ছাস, মনোতার, মানহানি, মায়াডোর, মুক্তিপিপাসা, মুখভঙ্গি, মৃত্যুশয্যা, রণকৌশল, রাজকন্যা, রাজপ্রাসাদ, রাশিচক্র, রাষ্ট্রপতি, লীলাভূমি, লোকনিন্দা, লোকালয়, শব্দকোষ, শয়নকক্ষ, শোকাতীত, শোকোচ্ছাস, শ্বশুরবাড়ি, সংখ্যাতীত সভাগৃহ, সভানেত্রী, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদি।
৬। সপ্তমী তৎপুরুষ’ সমাস :
পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ ‘সমাস হয় তাকে। সপ্তমী তৎপুরুষ’ সমাস বলে। এ, য়, তে – এগুলো সপ্তমী বিভক্তির চিহ্ন। যেমন দানে বীর – দানবীর,
গাছে পাকা – গাছপাকা মাথায় ব্যথা মাথাব্যথা, গলাতে ধাক্কা গলাধাক্কা ইত্যাদি।
এ-রকম অকালপক্ক, জলমগ্ন, মহাকাশভ্রমণ, ঝুড়িভরতি, শ্রুতিমধুর, অকালমৃত্যু, অধ্যয়নরত, আকাশভ্রমণ, কর্মকুশল, কর্মনিপুণ, কার্যক্ষম, গুণমুগ্ধ, গৃহবন্দি, ঘরপোড়া, চরণাশ্রিত, চিন্তামগ্ন, দেশবিখ্যাত, ধর্মবিশ্বাস, ধর্মভীরু, ধ্যানমগ্ন, পাঠানুরাগ, পাঠরত পানিবন্দি, বনবাস, বনভোজন, বাক্সবলি, বিশ্ববিখ্যাত, তোজন পটু, রণনিপুণ, রৌদ্রস্য, শক্তিহীন, সংখ্যালঘু, শিরোধার্য, শয্যাশায়ী ইত্যাদি।
৭। নঞ তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদে নঞর্থক বা না-বাচক অব্যয় না, নেই, নাই, নয়া ব্যবহৃত হয়ে যে তৎপুরুষ’ সমাস হয় তাকে নঞ তৎপুরুষ’ সমাস বলে। নঞ তৎপুরুষ’ সমাসে নঞ-এর অর্থ- না। ন-এর আদি উচ্চারণ নং বা নইং। নঞর্থক অব্যয়গুলো হল- নয়, না, নেই, অ, অন, অনা, আ, গর, ন, নি, বি, বে, ইত্যাদি। ন (নেঞ) স্বরবর্ণের আগে বসলে ‘অন” এবং ব্যঞ্জনবর্ণের আগে বসলে ‘অ’ হয়। নঞ তৎপুরুষের উদাহরণ নয় অধিক অনধিক, নেই অ অন্য নয় জানা অজানা, ন তার অভাব, ন কাল অকাল, নয় রাজি নারাজ নয় ধোয়া – আধোয়া, নয় হাজির – গরহাজির, নাা হিসাবি = বেহিসাবি ইত্যাদি।
নঞ তৎপুরুষ’ সমাসের উদাহরণ:
পূর্বপদে অ : যেমন অকাতর, অকথ্য, অকপট, অকেজো, অক্ষম, অক্ষুণ্ণ, অখ্যাত, অর্থ, অচেনা, অজ্ঞাত, অধৈর্য, অনিবার্য, অফুরন্ত, অপরিণত, অপ্রিয়, অব্যক্ত, অম্লান, অভয়, অভদ্র, অসময় ইত্যাদি।
পূর্বপদে আ : যেমন আপুনি, আকাড়া, আগাছা ইত্যাদি।
পূর্বপদে গর: যেমন : গরমিল, গরহাজির, গররাজি ইত্যাদি।
পূর্বপদে ন / না : যেমন : নাতিদীর্ঘ, নাবালক, নাখোশ, না-জানা, না-বলা, নাছোড়বালা, নারাজ, না- মঞ্জুর ইত্যাদি।
পূর্বপদে নি/নির : যেমন নিখুঁত, নিরাশা, নিরামিষ, নিরুৎসাহ ইত্যাদি।
পূর্বপদে বি/ বে : যেমন বিদেশ, বিপাক, বেআইনি, বেকায়দা, বেজোড়, বেসরকারি, বেহিসাব ইত্যাদি।
৮। উপপদ তৎপুরুষ’ সমাস :
কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ ‘সমাস বলে। যেমন: অগ্রে গমন করে যে অগ্রগামী। এখানে ‘গামী’র স্বতন্ত্র প্রয়োগ নেই। অগ্রে গামী বালে চলবে না, ব্যাসবাক্য হবে জয়ে গমন করে যে’। এরূপ ধামা ধরে যে – ধামাধরা, ছেলে ধরে যে ছেলেধরা ইত্যাদি।
কোনো পদ বিশ্লেষণ করলে যদি প্রথমে একটি পদ, তারপর একটি ধাতু এবং শেষে একটি প্রত্যয় পাওয়া যায়, তাহলে প্রথম পদটিকে বলে উপপদ।
উপপদ তৎপুরুষের উদাহরণ :
অগ্র আজ পরুন, মাহিমারা ইঁদুরমারা (কল), ইন্দ্রজিৎ, কৃষ্ণকার কৃষ্ণ করে যে), জলচনা খেচর নিশাচর, নভশ্চর, স্বর্ণকার, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, গণিতজ্ঞ, শাস্ত্রজ্ঞ, গাঁটকাটা, পকেটকাটা, পদ্য, তট, গৃহস্থ, জামা, মুখ, পা, প্রকৃতি, পাত্র, ছন্নছাড়া, জগদ ফেল দেয় যো দশছাড়া, ঘরছাড়া, পরজীবী, বুদ্ধিজীবী, শত্রু পেরুকে হত্যা করে যে, শ্রমজীবী, পথহারা, গৃহহারা, বাস্তুহারা, দিশাহারা, চিত্রা, কর, বাজিকর, জাদুকর, আকাশচারী সুবিধাভোগী, বেতনভোগী, ভুক্তভোগী, অনুযায়ী, ভেকধারী, জটাধারী, পারদর্শী, সুখ দুঃখে থাকে যো, দূরদর্শী, অস্তগামী, ধীরগামী, ইত্যাদি।
৯। অলুক তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে তৎপুরুষ’ সমাস হলে তাকে অলুক তৎপুরুষ’ সমাস বলে। ‘অলুক’ শব্দের অর্থ অ-লোপ, অর্থাৎ লোপ না হওয়া। যেমন – সোনার তরী সোনার তরী; চিনির বলদ – চিনির বলদ, তেলে ভাজা – তেলেভাজা, খেলার মাঠ – খেলার মাঠ ইত্যাদি।
[গায়ে হলুদ, হাতে খড়ি প্রভৃতি সমস্তপদে পরপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় না অর্থাৎ হলুদ বা খড়ি বোঝায় না, অনুষ্ঠান বিশেষকে বোঝায়। সুতরাং এগুলো অলুক তৎপুরুষ ‘সমাস নয়, অলুক বহুব্রীহি সমাস। ]
সবরকম তৎপুরুষ সমাসই অনুক হতে পারে। যেমন –
অলুক তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস :
যেমন চোখ দিয়ে দেখা চোখে দেখা। এ-রকম কলে-ছাঁটা থিয়ে ভাজা, জলে-তেজা, দায়ে-কাটা, পায়ে-চলা, পোকায় কাটা, বাঁশে বাঁধা, বানে ভাসা, রঙে-আঁকা, রোদে পোড়া, শিশিরে-তেজা, সাপে কাটা, সুরে-বাধা, হাতে-গড়া ইত্যাদি। এগুলোকে অনু সপ্তমী তৎপুরুষ’ সমাস হিসেবে বিবেচনা করাই সংগত।
অলুক চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস :
যেমন খেলার জন্যে মাঠ – খেলার মাঠ। এ-রকম চায়ের কাপ, গায়ের চাদর, নাচের নূপুর, তেলের শিশি, পড়ার টেবিল, পাকের ঘর ইত্যাদি। এগুলোকে অনুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ’ সমাস
হিসেবে বিবেচনা করাই সংগত।
অলুক পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস :
যেমন মানি থেকে তেল – মানির তেল। এ-রকম তিলের তেল, কলের জল, নাকের জল ইত্যাদি। এগুলোও অসুরু ষষ্ঠী তৎপুরুষ’ সমাসের অন্তর্ভুক্ত।
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস :
যেমন খবরের কাগজ – খবরের কাগজ। এ-রকম : চিনির কল, গরুর দুধ, চোখের বালি, ঢাকার কুমির, ডুমুরের ফুল, তাসের ঘর, পায়ের চিহ্ন, মনের মানুষ, মামার বাড়ি, মগের মুল্লুক ইত্যাদি।
অলুক সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস:
যেমন: অরণ্যে রোদন অরণ্যে রোদন। এ-রকম কলেজে পড়া, কলে ছাঁটা, গোড়ায় গম, ঘিয়ে ভাজা, ছাঁচে ঢালা, পায়ে ঠেকা, দিনে ডাকাতি, নাকে খত, পায়ে ধরা, মনে রাখা, সোনায় সোহাগা, পায়ে পড়া ইত্যাদি।
সূত্র: তৎপুরুষ সমাস | তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ | ভাষা ও শিক্ষা
আরও দেখুন:
- দ্বন্দ্ব সমাস | দ্বন্দ্ব সমাসের শ্রেণিবিভাগ | দ্বন্দ্ব সমাস নির্ণয়ের সহজ কৌশল | ভাষা ও শিক্ষা
- ধাতুর গণ | ক্রিয়া বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা
- সমাসের শ্রেণিবিভাগ | সমাসের শ্রেণিবিভাগে বিভিন্ন মতান্তর | ভাষা ও শিক্ষা
- সমাসে সন্ধি | সমাস ও সন্ধির পার্থক্য | ভাষা ও শিক্ষা
- মম যৌবননিকুঞ্জে গাহে পাখি , প্রেম ১৩৮ | Momo joubonnikunje gahe pakhi