অক্ষরবৃত্ত ছন্দের অপর নাম ‘তানপ্রধান ছন্দ’ – বিষয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিষয়ের “ছন্দ ও অলঙ্কার” বিভাগের একটি পাঠ।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের অপর নাম ‘তানপ্রধান ছন্দ’
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের অপর বহুল প্রচলিত নাম “তানপ্রধান ছন্দ’– নামকরণ করেছেন অমূল্যধন’ মুখোপাধ্যায়। এই জাতীয় ছন্দে ধ্বনিপ্রবাহের মধ্যে একটা সুরের টান বা তান (vocal drawal) থাকে, যা অনেক সময় অক্ষরধ্বনিকেও অতিক্রম। করে যায়।
অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘স্রোতের মধ্যে ছোটবড় উপলখণ্ড ফেলিলে যেমন সহজেই তাহা স্থান করিয়া । লইতে পারে, পয়ারের মুখে পয়ারের একটানা সুরের মধ্যে তদ্রুপ মৌলিক স্বরান্ত বা যৌগিক স্বরান্ত অক্ষর প্রভৃতি সহজেই স্থান করিয়া লইতে পারে।’ তানপ্রধান ছন্দের সমর্থনে প্রদত্ত এই যুক্তি প্রবোধবাবু স্বীকার করেন না।
তিনি বলেন, ‘যাকে অক্ষরবৃত্ত বলা হয়, তাকে আমরা যতটা টেনে আবৃত্তি করি, তার চেয়ে অনেক বেশি টেনে আবৃত্তি করি কলাবৃত্ত (মাত্রাবৃত্ত) রীতি ছন্দে।’ এরপর তিনি ভিন্ন জাতীয় মাত্রাবৃত্ত এবং স্বরবৃত্ত ছন্দের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘দেখা গেল অক্ষরবৃত্ত বা দলবৃত্তের তুলনায় মাত্রাবৃত্তেই টান বা তান থাকে বেশি।
সুতরাং তানপ্রধান নামটা যদি রাখতেই হয় তবে কলাবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্তকেই বলা উচিত তানপ্রধান।’ অধ্যাপক সেনের এই বক্তব্য সত্ত্বেও কিন্তু অক্ষরবৃত্ত ছন্দে তানের গুরুত্ব অস্বীকার করা চলে না। কারণ এই তানের জন্যই একদিকে যেমন এর একটা স্থিতিস্থাপকতা গুণ আছে, তেমনি এর চরণের প্রায় যত্রতত্র ছেদ চিহ্ন ব্যবহার করলেও মূল ধ্বনিপ্রবাহের মাপে কোন ইতরবিশেষ হয় না। অতএব অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ‘অপর নাম ‘তানপ্রধান’ নামকরণের যৌক্তিকতা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আরও দেখুন: